বাংলাদেশে বিরোধী নেতাদের ধরপাকড় প্রসঙ্গে যা বলছে ভারত

বাংলাদেশে বিরোধী নেতাদের ধরপাকড় প্রসঙ্গে যা বলছে ভারত

প্রথম নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশের নির্বাচন তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সহযোগী’ হিসেবে নয়াদিল্লি একটি স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ এবং প্রগতিশীল জাতি গঠনে ঢাকার লক্ষ্যে সমর্থন করে যাবে।  গতকাল দিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি।  অরিন্দম বাগচি আরও বলেন যে, ভারত বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সম্মান করে এবং সে দেশের জনগণই তাদের ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত নেবেন।  বাংলাদেশে বিরোধীদলীয় নেতাদের ধরপাকড় নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।  

সংবাদ সম্মেলনে বাগচি বলেন, আমরা তৃতীয় কোনো দেশের নীতি নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। বাংলাদেশে নির্বাচন তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সে দেশের জনগণই তাদের ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত নেবেন। এএনআইয়ের এক প্রতিবেদনে এসব জানানো হয়েছে।  ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সহযোগী হিসেবে, আমরা তাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সম্মান করি এবং স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ এবং প্রগতিশীল জাতি গঠনে ঢাকার লক্ষ্যে আমাদের সমর্থন অব্যাহত থাকবে,’ যোগ করেন তিনি।  এর আগে, ২৮ অক্টোবর সহিংসতার পর বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের  পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানিয়েছিল। 

বিএনপির সমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষ এবং দলের একাধিক নেতাকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।  মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্সে এক পোস্টে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান ও ইইউ পার্লামেন্টের ভাইস-প্রেসিডেন্ট জোসেপ বোরের লেখেন—  ‘বাংলাদেশে আট হাজারের বেশি বিরোধী নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় উদ্বেগ জানাচ্ছি। প্রতিটি মামলায় অবশ্যই ন্যায়বিচার হতে হবে। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ উপায় বের করার বিষয়টি গুরত্বপূর্ণ উল্লেখ করে বোরেল বলেন, ‘আমরা সব পক্ষকে সহিংসতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই। গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার জন্য সহায়ক অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ উপায় বের করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

রাজনৈতিক উত্তেজনা রোধে সর্বোচ্চ সংযম অবলম্বন করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরও (ওএইচসিএইচআর)। তাদের এক নোটে লেখা হয়— ২৮ অক্টোবর বিরোধী বিক্ষোভকারীরা প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারকদের বাসভবনে হামলা চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে এবং প্রায় ৩০ জন সাংবাদিক বিক্ষোভকারী এবং মোটরসাইকেলে থাকা মুখোশধারী ব্যক্তিদের দ্বারা হামলার শিকার হন, যারা ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক বলে মনে করা হয়। 

বিক্ষোভের জবাবে পুলিশ রড, লাঠিসোঁটা, রাবার বুলেট এবং সাউন্ড গ্রেনেড দিয়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা করেছে বলে জানা গেছে। তারা সারা দেশে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বাড়িতেও অভিযান চালিয়েছে, নির্বিচারে নেতাকর্মীদের পরিবারের সদস্যসহ শতাধিক লোককে গ্রেপ্তার ও আটক করেছে।   তবে ওএইচসিএইচআরের এই নোটে তথ্যগত খুঁত রয়েছে বলে দাবি করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। গত ১ নভেম্বর তিনি বলেছিলেন,  ওএইচসিএইচআরের অনেকগুলো বর্ণনা বেশ ত্রুটিপূর্ণ। আসল ঘটনা বিবর্জিত। তাদের তথ্যে গ্যাপ আছে। এ রকম প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্যে গ্যাপ থাকাটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আমরা সে বিষয়ে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করব। আর তাদের বর্ণনায় যে ভুলগুলো আছে, আমরা সেগুলো তুলে ধরব।

শেখ হাসিনার অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না বলে দাবি করলেও গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে। মনোনয়ন বাণিজ্যের জন্য হলেও তারা নির্বাচনে আসবে। তারেক জিয়া সেই সুযোগ মিস করবে না। 

তিনি আরও বলেন, বিনা-প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হওয়ার চিন্তা মাথা থেকে ফেলে দিতে হবে। যেখানে বিরোধী কেউ প্রার্থী হবে না সেখানে নিজেদের কাউকে দাঁড় করিয়ে হলেও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। আর বিএনপি নির্বাচনে আসবে না তা এখনো বলার সময় আসেনি। তারা তলে তলে নির্বাচনের কাজ করছে।  প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় নির্বাচন অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। মনোনয়ন দেওয়া হবে বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদন ও দলের সাংগঠনিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে। যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে তাকে বিজয়ী করতে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যেতে হবে।