বাংলাদেশে গণতন্ত্র দুর্বল হলে সম্পর্ক সীমিত করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র, ইঙ্গিত দিলেন শোলে
বাংলাদেশে গণতন্ত্র দুর্বল হলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সীমিত হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্থনি জে ব্লিঙ্কেনের উপদেষ্টা ও স্টেট ডিপার্টমেন্টের কাউন্সিলর ডেরেক এইচ শোলে। ঢাকা সফর করে যাওয়া মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিশেষ দূত শোলে খোলাসা করেই বলেন, কোথাও গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়লে, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার সুযোগ সীমিত হয়ে যায়।
প্রথম নিউজ ডেস্ক:বাংলাদেশে গণতন্ত্র দুর্বল হলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সীমিত হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্থনি জে ব্লিঙ্কেনের উপদেষ্টা ও স্টেট ডিপার্টমেন্টের কাউন্সিলর ডেরেক এইচ শোলে। ঢাকা সফর করে যাওয়া মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিশেষ দূত শোলে খোলাসা করেই বলেন, কোথাও গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়লে, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার সুযোগ সীমিত হয়ে যায়। এর মানে এই নয় যে আমরা সহযোগিতা করবো না, আমাদের সম্পর্ক অর্থবহ হবে না। কিন্তু ব্যবসায় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এটি সীমিত হওয়ার কারণ হবে!
গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার আগাম অঙ্গীকার তথা রূপরেখা না দেয়ায় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো সম্ভব হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, তবে ওই সম্মেলনে যোগদানের পূর্ব শর্ত হিসেবে নির্দিষ্ট ফরমেটে আগামীর গণতন্ত্র চর্চা বিষয়ক পরিকল্পনা জমা দিলে তাতে বাংলাদেশ অংশ নিতে পারবে। বুধবার বিকেলে গণমাধ্যমের জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়ে তিনি এসব কথা বলেন। দুই দিনের সফরে গত মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা আসে ডেরেক শোলের নেতৃত্বে মার্কিন বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার প্রতিনিধি দল। গতকাল সকালে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু করে প্রতিনিধি দলটি। এর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তাঁরা। এ সময় ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময়ে মার্কিন প্রশাসনের আন্ডার সেক্রেটারি পদমর্যাদার ওই কাউন্সেলর আরও বলেন, মার্কিন কোম্পানিগুলো যে কোন দেশে বিনিয়োগের সময় স্বচ্ছতা, আইনের শাসন, জবাবদিহিতার নিশ্চয়তা চায়। বাংলাদেশ কেন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে এমন প্রশ্নে ডেরেক শোলে বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক অটুট রাখতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নানা কারণে সম্পর্ক কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছিল। এখন তা অনেকটাই স্বাভাবিক।
কেবল বাংলাদেশ নয়; এ অঞ্চলের অন্যদের সঙ্গেও ওয়াশিংটনের সম্পর্ক বাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাইডেন প্রশাসন ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশলকে (আইপিএস) গুরুত্ব দেয়। বাংলাদেশের প্রতি আগ্রহের কারণগুলোর অন্যতম এটিও।সরকার থেকে বারবার অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র এ নিয়ে শঙ্কিত কেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সরকারের হয়ে আমি বলতে পারবো না। তবে সরকারের কাছে আমরা আমাদের অবাধ, মুক্ত ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে যাবো। বিশ্বের যে কোনো স্থানে নির্বাচন অবাধ ও স্বচ্ছ হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করে তিনি বলেন, নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়েছে- এ বিষয়টি জনগণের আস্থায় আসতে হবে। এ নিয়ে আগাম সংলাপেও জোর দেন তিনি। নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আশ্বস্ত হওয়ার বিষয়ে ডেরেক শোলে বলেন, সরকার বলেছে, তারা অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচন করতে চায়- এ বিষয়ে আমি আশ্বস্ত। তবে সুশীল সমাজকে চাপে রাখা, মানবাধিকার ও পূর্ববর্তী নির্বাচন নিয়ে আমাদের কিছুটা যথেষ্ট উদ্বেগ রয়েছে। আমরা উদ্বেগের বিষয়গুলো জানিয়ে যাবো। নির্বাচন প্রশ্নে সরকারের প্রতিশ্রুতিতে যুক্তরাষ্ট্র আস্থা রাখতে চায় বলেও জানান তিনি।নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের ভবিষ্যত নিয়ে আগাম কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তবে নির্বাচনের ফল বিরোধীপক্ষের কাছেও বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে।
বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা নিয়ে পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সিলর বলেন, বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার জায়গা থেকে আমরা বিভিন্ন বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করি। আমরাও নিখুঁত নই। তবে আমরা আমাদের ত্রুটিগুলো শুধরে নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা আমরা অন্য অংশীদারদের থেকেও আশা করি। র্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার বিষয়ে তিনি বলেন, ২০২১ সালে র্যাব নিয়ে আমরা আমাদের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছি। সুখবর হচ্ছে গত বছর বাহিনীর কার্যক্রমে পরিবর্তন এসেছে, অনেকটাই পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে আমরা র্যাবের টেকসই সংস্কার ও জবাবদিহিতা দেখতে চাই। এ বিষয়ে আমরা সরকারকে সহযোগিতা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যতক্ষণ টেকসই সংস্কার ও জবাবদিহি না দেখব, ততক্ষণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার সম্ভব নয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি। গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশের আমন্ত্রণ না পাওয়া নিয়ে মার্কিন এ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, বিগত যারা সম্মেলনে যোগ দিয়েছে সবাই গণতন্ত্র উন্নয়নে পরিকল্পনা দিয়েছে। সম্মেলনে যারা যোগ দিতে পারেনি, তাদের কাছেও আমরা অভিন্ন পরিকল্পনা চেয়েছি।বাংলাদেশ গণতন্ত্র উন্নয়নে পরিকল্পনা দিয়ে এখানে যোগ দিতে চায়নি। ভবিষ্যতে পরিকল্পনা দিয়ে এতে যোগ দেয়ার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচন না হওয়ার পরিণতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচন অবাধ ও স্বচ্ছ না হলে পরিণতি কি হবে তা অগ্রিম ধারণা করা কঠিন। তবে এটুকু বলতে পারি, যেসব দেশে গণতন্ত্র দুর্বল বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতাও সঙ্কুচিত হয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ভবিষ্যৎ এখনো উজ্জ্বল জানিয়ে তিনি বলেন, এ কারণেই এদেশে আমরা ক্রমাগত সফর করছি। আমাদের কমন কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তবে আমরা আমাদের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই আশাবাদী। শক্তিশালী গণতন্ত্রের দেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী বন্ধু বলেও দাবি করেন ডেরেক শোলে।
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই উপদেষ্টা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তার দায়িত্ব পালনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। রোহিঙ্গা সংকটের কারণে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্প, পাকিস্তানে বন্যা, ইউক্রেন সংকটসহ বর্তমানে বিশ্বের শত চ্যালেঞ্জের মধ্যেও রোহিঙ্গা সংকট যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকারে থাকবে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বেছে নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কখনোই দুই দেশের মধ্যে কাউকে বেছে নিতে বলবে না। কারণ যুক্তরাষ্ট্রেরও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র চায়, বাংলাদেশ সঠিক বিষয়ের পক্ষে থাকুক।
মতবিনিময়ে উপস্থিত ছিলেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, ইত্তেফাকের সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের নির্বাহী পরিচালক তালাত মামুন, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সম্পাদক এনাম আহমেদ, যমুনা টিভির নির্বাহী পরিচালক ফাহিম আহমেদ এবং এএফপির ব্যুরোপ্রধান শফিকুল আলম প্রমুখ।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: