বাংলাদেশে অবাধ নির্বাচন নিশ্চিতে পদক্ষেপ দেখতে চায় বৃটেন
বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে বাংলাদেশ দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত দেশটির ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিসের ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যান ম্যারি ট্রিভেলিয়ান, এমপি এ আহ্বান জানান।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিমূলক নির্বাচন নিশ্চিতে অর্থপূর্ণ পদক্ষেপ দেখতে চায় বৃটেন। সেই সঙ্গে পরস্পরবিরোধী সব রাজনৈতিক দল ও মতের সমর্থকদের নিরাপদে সংগঠিত হওয়ার সুযোগ এবং তাদের প্রচার-প্রচারণা নির্বিঘ্ন করতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ও সহযোগিতা দিতে আইনপ্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ঋষি সুনাকের নেতৃত্বাধীন বৃটিশ সরকার। বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে বাংলাদেশ দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত দেশটির ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিসের ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যান ম্যারি ট্রিভেলিয়ান, এমপি এ আহ্বান জানান।
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, বেগম খালেদা জিয়ার বন্দি-জীবন বিশেষত তার চিকিৎসা বিষয়ে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করে গত ২২শে জুলাই বার্মিংহামের স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান নিউ হোপ গ্লোবাল চেয়ারম্যান বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মোহাম্মদ ফয়েজ উদ্দীন এমবিই একটি চিঠি লিখেছিলেন। বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের পক্ষে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ট্রিভেলিয়ান ওই চিঠির জবাব দেন। মোহাম্মদ ফয়েজ উদ্দীনকে অ্যাড্রেস করে লেখা চিঠিতে বৃটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ট্রিভেলিয়ান বলেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর অবহিতকরণ বিষয়ক আপনার পত্রের জন্য ধন্যবাদ। বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী হিসেবে আমি আপনার চিঠির জবাব দিচ্ছি। বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের রিপোর্টে বৃটেন বরাবরের মতো উদ্বিগ্ন।
দেশটিতে আটক ব্যক্তিদের সঙ্গে আচরণসহ মানবাধিকার বিষয়ক উদ্বেগগুলো আমরা নিয়মিতভাবে বাংলাদেশ সরকারের কাছে উত্থাপন করে চলেছি। পাবলিক এবং প্রাইভেট উভয় ফর্মে আমরা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনায় মানবাধিকার এবং আইনের শাসনের প্রতি গুরুত্বের বিষয়টি তুলে ধরবো। চিঠিতে প্রতিমন্ত্রী গত ১৭ই জুলাই ঢাকা-১৭ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের ওপর বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিচারে বৃটিশ সরকারের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন। বলেন, ঘটনার পরপরই ঢাকাস্থ বৃটিশ হাইকমিশনসহ আন্তর্জাতিক মিশনসমূহ ন্যক্কারজনক ওই হামলার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত এবং অপরাধীদের যত দ্রুত সম্ভব জবাবদিহিতার আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছিল। প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত স্বেচ্ছাসেবীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সহিংসতার কোনো স্থান নেই।
চিঠিতে বৃটিশ সরকারের প্রতিনিধি লিখেন- বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের রিপোর্টগুলোতে বৃটিশ সরকার বরাবরের মতো উদ্বিগ্ন। বৃটিশ ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিসের কাছে বাংলাদেশের মানবাধিকারের বিষয়টি অগ্রাধিকারে রয়েছে। সরকারের সঙ্গে রুটিন আলোচনার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে উত্থাপন করা হয় জানিয়ে বৃটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর চিঠিতে বলা হয়, কারাগারে আটক ব্যক্তিদের চিকিৎসাসহ মানবাধিকার সংক্রান্ত সব উদ্বেগই বৃটিশ সরকার উত্থাপন করে। মানবাধিকার ও আইনের শাসনের প্রতি সম্মানের গুরুত্বের বিষয়টি ঢাকা-লন্ডন পরবর্তী যোগাযোগেও জোরালোভাবে উত্থাপন করা হবে জানিয়ে বলা হয়, বৃটেন আশা করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ আটক সকলের প্রতি মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক আইন ও বিধিবিধান মোতাবেক আচরণ করবে, যার প্রতি বাংলাদেশ সরকার স্পষ্ট অঙ্গীকার রয়েছে।
সেই সঙ্গে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে। বৃটিশ সরকারকে দেয়া বাংলাদেশ সরকারের এ সংক্রান্ত আশ্বাস নিয়মিত ফলোআপ করা হবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। চিঠির সমাপনীতে খোলাসা করেই বলা হয়, বাংলাদেশে মানবাধিকার সংক্রান্ত যেসব উদ্বেগ রয়েছে তা নিরসনে সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে আলোচনায় মত্ত থাকবে। একটি স্থিতিশীল সমৃদ্ধ এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের সমুদয় প্রচেষ্টায় বৃটেন দৃঢ়ভাবে সমর্থন যুগিয়ে যাবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।