ব্লিঙ্কেন-মোমেন বৈঠক আজ

ওয়াশিংটনে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি জে ব্লিঙ্কেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

ব্লিঙ্কেন-মোমেন বৈঠক আজ

প্রথম নিউজ, অনলাইন: ওয়াশিংটনে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি জে ব্লিঙ্কেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। সাধারণত হাইপ্রোফাইল এমন বৈঠকে দুই দেশের রাষ্ট্রদূত উপস্থিত থাকেন। কিন্তু এবার তা হচ্ছে না। ওয়াকিবহাল কূটনৈতিক সূত্র বলছে, ভিন্ন ফর্মেটে অনুষ্ঠেয় আজকের বৈঠকের মূখ্য আলোচ্য হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের গণতন্ত্র, আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচন এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। এমনটাই আভাস দিয়েছে ওয়াশিংটন। যদিও সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত স্টেট ডিপার্টমেন্টের তরফে সফররত মন্ত্রী মোমেনের সঙ্গে সেক্রেটারি অব স্টেটের বৈঠকের শিডিউল ঘোষণা হয়নি। মন্ত্রীর সফরসঙ্গীরা অবশ্য আগাম জানিয়েছেন, ১০ই এপ্রিল ওয়াশিংটন সময় দুপুর দেড়টায় স্টেট ডিপার্টমেন্টে কাঙ্খিত সেই বৈঠক হওয়ার সময়সূচি নির্ধারিত হয়েছে। সূত্র মতে, আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় দেরি হলেও বৈঠকটি হচ্ছে এটা নিশ্চিত। দ্বিপক্ষীয় ওই বৈঠকের আলোচ্যসুচিও চূড়ান্ত প্রায়। 

ঢাকা এবং ওয়াশিংটনের দায়িত্বশীল কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন, মানবাধিকার এবং সুশাসনের মতো প্রসঙ্গগুলো আলোচনায় আসবে। আর এ বিষয়গুলো নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান জোরালোভাবে তুলে ধরবেন মন্ত্রী মোমেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়েও কথা হতে পারে। আগামী মাসে সরকার প্রধানের যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কথা রয়েছে। 

স্মরণ করা যায়, গত জানুয়ারিতে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিশেষ দূত রিয়ার অ্যাডমিরাল এইলিন লউবেচার এবং ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সেলর ডেরেক শোলে ঢাকা সফরকালে ঘুরে ঘুরে গণতন্ত্র, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং মানবাধিকার সুরক্ষায় জোর দিয়ে গেছেন। ডেমোক্রেট দলীয় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নেতৃত্বাধীন বর্তমান মার্কিন প্রশাসন যে কোন পর্যায়ের আলোচনায় মূল্যবোধ ভিত্তিক সম্পর্ক অটুটে জোর দিচ্ছে। ফলে অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেনও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠকে প্রসঙ্গগুলো গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরবেন, এটা অনুমেয়। ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন যে গুরুত্ব পাবে সেটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন নিজেও জানিয়ে গেছেন। গত বুধবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠান শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে একটি স্বচ্ছ, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। আওয়ামী লীগও তা-ই চায়। আমাদের উভয়ের চাওয়ায় কোনো তফাৎ নেই, দ্বিমত তো নয়ই। মন্ত্রী বলেন, আওয়ামীলীগ  নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতায় এসেছে। বাংলাদেশ গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে। ৩০ লাখ লোক জীবন দিয়েছে গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতে। সে কারণে আমাদের গণতন্ত্র শেখানোর প্রয়োজন নেই। এটা আমাদের অস্থিমজ্জায়, আমাদের রক্তে। সরকার যে সবাইকে নিয়েই নির্বাচনটি করতে আগ্রহী, আমরা সেটাই তাদের জানাবো।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এমন নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্যই সরকার সম্পূর্ণ স্বাধীন একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হলো স্বচ্ছ-গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করা। সরকারের কাজ হচ্ছে কমিশনকে সর্বোতভাবে সহায়তা করা। তিনি বলেন, কিন্তু শুধু সরকার সাহায্য করলে হবে না, জনগণ, সব রাজনৈতিক দল, মিডিয়া- সবাইকেই নির্বাচন অনুষ্ঠানে কমিশনকে সাহায্য করতে হবে। সব রাজনৈতিক দলের সাহায্য ছাড়া সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন অসম্ভব। তবে মন্ত্রী এটাও বলেন, দেশের শাসনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচন হবে। এ বিষয়ে কারও মনে ভিন্ন চিন্তা থাকলে তা ভুলে যেতে হবে । 
নির্বাচন নিয়ে সরকারের অবস্থান তুলে ধরার পাশাপাশি দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় যুক্তরাষ্ট্রের আরও অনেক বেশি সম্পৃক্ততা আশা করে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রী অ্যান্থনি জে ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশে আরও বেশি মার্কিন বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হবে। কথা হবে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ বিষয়েও। ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার আগে মন্ত্রী মোমেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ওয়াশিংটন বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নানা বিষয়ে কথা হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য তথা বিনিয়োগ বাড়ানো এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক যুক্ততার প্রত্যাশার কথা জানানো হবে।’

ব্যবসা-বাণিজ্যের আলোচনায় সুশাসনের প্রসঙ্গ আসতে পারে। ওয়াশিংটন বরাবরই বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত  হত্যা ও গুম বন্ধে  সোচ্চার। এখানকার রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ এবং মিডিয়ার স্বাধীনতা নিয়ে তাদের উদ্বেগ রয়েছে। তারা বিশ্বময় শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ তথা ভিন্নমত প্রকাশের অধিকার নিশ্চিতের পক্ষে এডভোকেসি করে। এসবের পথে বড় বাধা বাংলাদেশ সরকার প্রণীত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কিছু ধারা এবং প্রস্তাবিত ডেটা সুরক্ষা আইন। দু'টির আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গভীর উদ্বেগের বিষয়টি অতিসম্প্রতি খোলাসা করেছেন ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে বৈঠকে উপরুল্লিখিত উদ্বেগগুলো পূনর্ব্যক্ত করা হতে পারে ধরে নিয়েই ঢাকার জবাব তৈরি হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে সেগুনবাগিচা। 

এক কর্মকর্তা রোববার সন্ধ্যায় মানবজমিনকে বলেন, বিশ্ব রাজনীতির নতুন সমীকরণসহ নানা কারণে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র, পরস্পরের জন্য প্রয়োজনীয়। স্পর্শকাতর কিছু ইস্যু বন্ধু এবং উন্নয়ন অংশীদার যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ থাকতেই পারে। কিন্তু এ নিয়ে একতরফা চাপ কাম্য নয় বরং তৃতীয় বিশ্বের ক্রমউন্নয়নশীল বাংলাদেশের নানামুখি সীমাবদ্ধতা তথা বাস্তবতাকে স্বীকার করতে হবে যুক্তরাষ্ট্রের। এসব নিরসনে বন্ধু রাষ্ট্র বাংলাদেশকে সময় দিতে হবে। ওয়াশিংটনের সঙ্গে বাংলাদেশ মর্যাদাপূর্ণ সম্পর্ক চায় জানিয়ে ঢাকার ওই কর্মকর্তা বলেন, যে কোনো যৌক্তিক উদ্বেগ অবশ্যই নিরসন হবে। তবে কোনো উদ্বেগকে রাজনৈতিক বিবেচনায় না দেখে বরং বাস্তবতার নিরিখে দেখার অনুরোধ জানাবে বাংলাদেশ।  সেই সঙ্গে দেশীয় পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার, আচমকা বন্ধ হয়ে যাওয়া জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের তাগিদ দিবে ঢাকা। বন্ধুত্বের দাবি নিয়ে প্রতিষ্ঠান হিসেবে র‌্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের ওপর কার্যকর চাপ সৃষ্টি এবং বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত ও দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত চাইবে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্র এসব বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের জ্যেষ্ঠ ওই প্রতিনিধিকে বিমুখ করবে না বলে আশা করে সেগুনবাগিচা।