ব্রহ্মপুত্রে নিঃস্ব হচ্ছে একের পর এক পরিবার

রুদ্ররূপ ধারণ করা এই নদের গ্রাসে প্রতিদিন বাস্তুহারা হচ্ছে একের পর এক পরিবার। সংকীর্ণ হয়ে আসছে গ্রামের আয়তন। 

ব্রহ্মপুত্রে নিঃস্ব হচ্ছে একের পর এক পরিবার

প্রথম নিআুজ, কুড়িগ্রাম: ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন থামছেই না। একের পর এক গ্রাস করে নিচ্ছে বসতি, আবাদি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা। নিঃস্বদের করছে আরও নিঃস্ব, অসহায়। রুদ্ররূপ ধারণ করা এই নদের গ্রাসে প্রতিদিন বাস্তুহারা হচ্ছে একের পর এক পরিবার। সংকীর্ণ হয়ে আসছে গ্রামের আয়তন। 

মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) বিকালে দুই ঘণ্টার ব্যবধানে এই নদে বিলীন হয়ে গেছে এক গ্রামের পাঁচ পরিবারের বসতভিটা। ভাঙনের তীব্রতায় ঘরবাড়ি সরিয়ে নেওয়ার ফুরসতও মেলেনি ভুক্তভোগীদের। ভাঙন হুমকিতে এখনও শতাধিক পরিবার। মঙ্গলবার বিকালে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মুসল্লিপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। তীব্র ভাঙন চললেও ভাঙন প্রতিরোধে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনও প্রতিরোধ কাজ শুরুর খবর পাওয়া যায়নি।

‘আমি একেবারে অসহায়। বাড়ি করে থাকার মতো আমার আর কোনও জমি নাই। টাকাও নাই জায়গা কেনার। রাস্তার পাশে বাড়ি করে থাকা ছাড়া উপায় নাই।’ ভাঙনে ভিটে হারিয়ে এভাবেই বলছিলেন মুসল্লিপাড়ার রাজ্জাক মোল্লা। অন্যের ঘরে রাখা সংসারের জিনিসপত্র মাথায় করে নিয়ে নতুন আশ্রয়ের দিকে যেতে যেতে তিনি আরও বলেন, ‘মাত্র দুই ঘণ্টায় সব শ্যাষ হয়া গেছে। তিনটা ঘরের একটাও রক্ষা করতে পারি নাই। অসুস্থ বাবা, স্ত্রী আর দুই সন্তান নিয়া বিপাকে পড়ছি। পরে সাবেক এক মেম্বারের কাছে বলে তার একটা ঘরে আশ্রয় নিছি।’  

রাজ্জাক মোল্লার মতো ব্রহ্মপুত্রের দুই ঘণ্টার আগ্রাসী ভাঙনে ভিটে হারিয়েছেন মসুল্লিপাড়ার তাঁত শ্রমিক সবুজ, দিনমজুর খালেক, কুদ্দুস মন্ডল, দেলওয়ার ও মহুবর। তারা সবাই পরিবার নিয়ে এখন অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। নতুন করে সংসার পাতানোর আপাতত তাদের কোনও জায়গা নেই। এসব ভুক্তভোগী বলছেন, তারা সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হলেও তাদের পাশে কেউ দাঁড়ায়নি। অথচ কয়েকদিন আগে থেকে কিছু জিও ব্যাগ ফেললে তাদের ভিটাবাড়ি রক্ষা পেতো। ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে একের পর এক বসতভিটা ও আবাদি জমি নদের গর্ভে বিলীন হলেও ভাঙন প্রতিরোধে কোনও উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ, এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

ব্রহ্মপুত্রের তীব্র ভাঙনে শত শত মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে জানিয়ে বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবলু মিয়া বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে ৫০০ জিও ব্যাগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেগুলোতে বালু ভরে ফেলার ব্যবস্থা আমাদেরকে করতে বলেছে। এটা কীভাবে হবে জানি না। তবে এখনও জিও ব্যাগ ফেলা শুরু হয় নাই। উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোভন রাংশা বলেন, ‘ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে। স্থানীয় চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে বাস্তুহারাদের পুনর্বাসনে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

ভাঙন প্রতিরোধে জরুরি প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কিনা তা জানতে চাইলে পাউবোর কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আপাতত আমরা ৫০০ জিও ব্যাগ দিয়েছি। তাদের বলেছি, স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় সেগুলো বালু ভরাট করে ফেলতে। আরও জিও ব্যাগের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পাওয়া গেলে আমরা নিজেরাই তখন কাজ করবো।’

ভাঙনের তীব্রতার তুলনায় গৃহীত উদ্যোগ পর্যাপ্ত কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন চলছে। জরুরি ব্যবস্থাপনায় এটির কাজ করা সম্ভব নয়। এটি প্রতিরোধে প্রায় ৩০ কোটি টাকার প্রকল্প প্রয়োজন। আমরা প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। সমীক্ষার কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন হলে তখন স্থায়ী প্রতিরোধ কাজ করা হবে।’

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom