ব্যারিস্টার সারা হোসেনের নেতৃত্বে ইরানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত করবে জাতিসংঘ

ব্যারিস্টার সারা হোসেনের নেতৃত্বে ইরানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত করবে জাতিসংঘ
ব্যারিস্টার সারা হোসেনের নেতৃত্বে ইরানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত করবে জাতিসংঘ

প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক : ইরানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগগুলো তদন্তে ৩ সদস্যের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন পাঠাচ্ছে জাতিসংঘ। মানবাধিকার কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রদূত ফেদেরিকো ভিলেগাসের অনুমোদন সাপেক্ষে মঙ্গলবার জেনেভা থেকে প্রচারিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মিশনের গঠন ও কার্যপ্রণালীর বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশের বিশিষ্ট আইনজীবি ও মানবাধিকার কর্মী ব্যারিস্টার সারা হোসেনকে প্রধান করে গঠিত ওই কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- পাকিস্তানের মিজ শাহীন সরদার আলী এবং আর্জেন্টিনার মিজ ভিভিয়ানা ক্রিস্টিসেভিচ। বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী ব্যারিস্টার সারা হোসেন বাংলাদেশের মহান সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ড. কামাল হোসেন এবং দেশে সর্বজনীন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া ড. হামিদা হোসেনের জ্যেষ্ঠ কন্যা।জেনেভার সংবাদ বিজ্ঞপ্তি মতে, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানে মানবাধিকারের লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো স্বাধীনভাবে তদন্তে সম্প্রতি প্রতিষ্ঠিত ৩ সদস্যের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের চেয়ার হিসেবে মিজ সারা দায়িত্ব পালন করবেন। ২৪ শে নভেম্বর ২০২২-এ গৃহীত এস-৩৫/১ রেজুলেশনে মানবাধিকার কাউন্সিল স্বাধীন আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়, যা মানবাধিকার কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট চূড়ান্তভাবে অনুমোদন করেন। ওই মিশন ১৬ই সেপ্টেম্বর ২০২২ থেকে ইরানে চলমান বিক্ষোভের সঙ্গে সম্পর্কিত অধিকার লঙ্ঘন, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের সম্মানের বিষয়গুলো তদন্ত করবে। তারা কথিত লঙ্ঘনের তথ্য ও পরিস্থিতির প্রমাণ সংগ্রহ, একত্রীকরণ, বিশ্লেষণ এবং যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার সুপারিশ করবে। হাইলি কোয়ালিফাইড এবং নিরপেক্ষ ব্যক্তিত্বের সমন্বয়ে ইরান বিষয়ক ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন গঠনে স্টেকহোল্ডারদের সুপারিশ ও পরামর্শ প্রেসিডেন্ট বিবেচনায় নিয়েছেন জানিয়ে জেনেভার বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, মিশনটি ইরানের সরকার, জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়, মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদকসহ সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা  করবে। জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংস্থা এবং নাগরিক সমাজের সঙ্গেও কথা বলবে।  মিশন ২০২৩ সালের জুনে মানবাধিকার কাউন্সিলের ৫০তম অধিবেশনের ইন্টারেক্টিভ সেশনে তদন্তের প্রাথমিক ফল জানাবে, যার চূড়ান্ত রিপোর্ট তৈরিতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কাজ করার সুযোগ পাবে মিশন।

সারা হোসেনসহ জাতিসংঘ ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন সদস্যদের পরিচয়
এদিকে জাতিসংঘের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি মতে, ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন প্রধান মিজ হোসেন বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের একজন ব্যারিস্টার যিনি সংবিধান, জনস্বার্থ এবং পারিবারিক আইন বিশেষজ্ঞ। আইনি সহায়তা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ড. কামাল হোসেন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস-এর একজন গর্বিত অংশীদার। বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন। ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কোরিয়ার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় স্পেশাল র‌্যাপোর্টিয়ারের কর্মের জবাবদিহিতা যাচাইয়ে বিশেষজ্ঞের দায়িত্ব পালন করেছেন মিজ সারা। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার তাকে ওই বিশেষ অ্যাসাইনমেন্ট দিয়েছিলেন। মিসেস হোসেন উইমেনস ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিশন অফ জেন্ডার জাস্টিসের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য এবং ২০১৭ সাল থেকে ইউনাইটেড নেশনস ট্রাস্ট ফান্ড ফর ভিক্টিমস অফ টর্চারের বোর্ড অফ ট্রাস্টিজের সদস্য। অধিকৃত ফিলিস্তিনে ২০১৮ সালের বিক্ষোভের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল জাতিসংঘ সারা হোসেন তারও সদস্য ছিলেন।  তিনি বৃটেনের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ওয়াদাম কলেজ থেকে গ্রাজুয়েট এবং মিডল টেম্পলে বার-এট ল পড়েছেন। ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের দ্বিতীয় সদস্য পাকিস্তানের নাগরিক শাহীন সরদার আলী বৃটেনের ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের একজন অধ্যাপক, যার ইসলামিক আইন, মানবাধিকার এবং নারী ও শিশু অধিকারের উপর বিশেষ দক্ষতা  রয়েছে। মিজ আলী পাকিস্তানে নারীদের অবস্থান মূল্যায়নে কাজ করা জাতীয় কমিশনের প্রথম চেয়ারপার্সন।

তাছাড়া খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের সরকারের স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা কল্যাণ ও নারী উন্নয়ন বিষয়ক প্রথম মহিলা মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি জাতিসংঘ ওয়ার্কিং গ্রুপ অন আরবিট্রারি ডিটেনশন এর ভাইস-চেয়ারম্যান ছিলেন এবং বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থায় পরামর্শকের ভুমিকায় রয়েছেন। তিনি আরব আইন ত্রৈমাসিক এবং জার্নাল অফ ইসলামিক স্টেটের সম্পাদকীয় বোর্ডের সদস্য। ইংরেজি, উর্দু, পশতু, পাঞ্জাবী, আরবি এবং ফার্সি ভাষার ওপর দখল রয়েছে তার। মিশনের তৃতীয় সদস্য ভিভিয়ানা ক্রিস্টিভিচ আর্জেন্টিনার নাগরিক। বুয়েন্স আইরেস বিশ্ববিদ্যালয় ও স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ল্যাটিন আমেরিকান স্টাডিজে এমএ এবং এলএলএম ডিগ্রি নেয়া ওই মানবাধিকার কর্মী হার্ভার্ডে আইনের ওপর পড়াশোনা করেছেন। ল্যাটিন আমেরিকায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকারদের পক্ষে ব্যাপকভাবে মামলা লড়ছেন তিনি।  আন্তঃ-আমেরিকান কমিশন এবং মানবাধিকার আদালতে দিনের পর দিন পড়েছিলেন।জবাবদিহিতা, লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা, নাগরিক স্থান, ভিকটিমদের অধিকার, আদিবাসী জনগণ, ক্ষতিপূরণ এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকারের আইনি কাঠামোর উপর অগ্রগামী মামলা লড়েছেন।  কেবল ওকালতি নয়, লেখালেখির মাধ্যমেও আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মান নিশ্চিতে চাপ তৈরি করছেন মিসেস ক্রিস্টিসিভিচ। আমেরিকার জাতীয় আদালতের পাশাপাশি আঞ্চলিক মানবাধিকার ট্রাইব্যুনাল, আন্তঃ-আমেরিকান কোর্ট অফ হিউম্যান রাইটস এবং ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতে অ্যামিকাস কিউরি হিসাবে মতামত দিয়েছেন।

মিসেস ক্রিস্টিসিভিক আমেরিকান ইউনিভার্সিটি ওয়াশিংটন কলেজ অফ ল-এ তার একাডেমি অন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড হিউম্যানিটারিয়ান ল এবং সেন্ট থমাস ইউনিভার্সিটিতে আন্তঃসাংস্কৃতিক মানবাধিকার বিষয়ে পড়ান। তিনি আমেরিকা এবং ইউরোপজুড়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং থিঙ্ক ট্যাঙ্কগুলোতে শিক্ষাদান এবং বক্তৃতা করে বেড়ান।  তিনি বর্তমানে সেন্টার ফর জাস্টিস অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ল-এর নির্বাহী পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন। এছাড়া তিনি গ্লোবাল ক্যাম্পেইনের একজন প্রতিষ্ঠাতা এবং সদস্য, লিঙ্গ সমতা নিশ্চিতে এটি একটি বৈশ্বিক এবং প্রতিষ্ঠিত উদ্যোগ।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom