ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সংঘর্ষ
আড়াইঘণ্টা পর থেমেছে সংঘর্ষ, কলেজের ভেতরে ছাত্রদের বিক্ষোভ
প্রথম নিউজ, ঢাকা: ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেট ও আশপাশের ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ শুরুর আড়াইঘণ্টা পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। তবে উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা কলেজের ভেতরে, ছাদে ও তেলপাম্প এলাকায় অবস্থান নেন। পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি ছুড়েছে দাবি করে তারা এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন।
সোমবার (১৮ এপ্রিল) দিনগত রাত ১২টার দিকে এ সংঘর্ষ শুরু হয়। রাত আড়াইটার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সংঘর্ষের পর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ ক্যাম্পাসের ভেতরে অবস্থান করছেন। অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী তেলপাম্পের সামনে অবস্থান নিয়েছেন। তাদের হাতে লাঠি, রড, স্ট্যাম্প দেখা গেছে। কলেজের ভেতরে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি ছুড়েছে দাবি করে এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন। কিছু শিক্ষার্থী কলেজের ছাদ থেকে পুলিশ ও ব্যবসায়ীদের দিকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে দেখা গেছে।
এদিকে, নুরজাহান ও ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের ভেতরে অবস্থান করছেন ব্যবসায়ীরা। এর পাশেই কয়েকটি মোটরসাইকেল পুড়ছে। পুলিশ সদস্যদের থেমে থেমে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করতে দেখা গেছে। ঢাকা কলেজ ও নিউমার্কেট এলাকার বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ সড়কে ব্যারিকেড দিয়েছে রেখেছে। ফলে ওইসব সড়কে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
এদিকে, সংঘর্ষে পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশীদ।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন এডিসি হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, সংঘর্ষ শুরুর পরপরই আমরা ঘটনাস্থলে আসি। দেখতে পাই- শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীরা মুখোমুখি অবস্থানে। দুপক্ষই ইটপাটকেল ছুড়ছেন। আড়াইঘণ্টা পর উভয়পক্ষকে শান্ত করা সম্ভব হয়েছে। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের ভেতরে ঢুকে গেছেন। ব্যাবসায়ীরা তাদের ব্যাবসাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে গেছেন।’
তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা পুলিশের ওপরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছেন। নিরাপদ অবস্থানে থেকে তাদেরকে নিবৃত্ত করতে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হয়েছে।’
এ ঘটনায় মামলা হবে কি না, জানতে চাইলে এডিসি হারুন অর রশীদ বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচলা করে এবং ঘটনার সূত্রপাত বিশ্লেষণের পর মামলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তবে প্রাথমিকভাবে কতজন আহত হয়েছেন, তা এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না। কিছু যানবাহন ও কয়েকটি দোকানে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। অগ্নিকাণ্ডে ব্যবসায়ীদের ক্ষয়ক্ষতি হলে এবং তারা যদি অভিযোগ করেন অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এর সোমবার (১৮ এপ্রিল) দিনগত রাত ১২টার দিকে শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে পুরো নিউমার্কেট এলাকায়। ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট ও ঢাকা কলেজের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের সামনে জড়ো হন ব্যবসায়ীরা।
মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে দুপক্ষকেই ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে দেখা যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এ সংঘর্ষ থামাতে এ পর্যন্ত ২০-২৫ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ঢাকা কলেজের মাস্টার্সের দুই শিক্ষার্থী রাত ১২টার দিকে নিউমার্কেটে কেনাকাটা করতে যান। কেনাকাটা নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হয়।
একপর্যায়ে দুই শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে, এমন খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে নিউমার্কেট এলাকায় যান ঢাকা কলেজের একদল শিক্ষার্থী। পরে ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়।