ব্যাংকের দেড় কোটি টাকা নিয়ে উধাও ক্যাশিয়ার
বিষয়টি জানাজানির পর আমানতকারীরা ব্যাংকে এসে ভিড় জমাতে শুরু করেন এবং টাকা ফেরতের দাবি জানান।
প্রথম নিউজ, বগুড়া : বগুড়ার আদমদীঘির চাঁপাপুর ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট আউটলেটের শতাধিক গ্রাহকের জমাকৃত আমানতের দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়েছেন ক্যাশিয়ার সুজন রহমান ও তার পরিবারের সদস্যরা। বিষয়টি জানাজানির পর আমানতকারীরা ব্যাংকে এসে ভিড় জমাতে শুরু করেন এবং টাকা ফেরতের দাবি জানান। নিরুপায় হয়ে মঙ্গলবার দুপুরে ব্যাংকের এজেন্ট শাখার স্বত্বাধিকারী নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে ক্যাশিয়ার সুজন ও তার বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এদিকে গ্রাহকদের টাকা ফেরতের আশ্বাস দিয়ে দিন পার করছেন ব্যাংকের এজেন্ট কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, গত ২০১৯ সালে জুলাই মাসে উপজেলার চাঁপাপুর বাজারে ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট আউটলেট চালু করেন গোবিন্দপুর গ্রামের নুরুল ইসলাম। তিনি ৬ জন কর্মচারী নিয়ে প্রায় ৫ বছর ধরে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। আউটলেট পরিচালনার জন্য শুরুর দিকে তার আপন ভাতিজা সুজন রহমানকে ক্যাশিয়ার পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন। বর্তমান আউটলেটটির গ্রাহক সংখ্যা সাড়ে ৩ হাজার। আউটলেটটিতে প্রবাসীদের পাঠানো টাকা আর স্থানীয় ব্যবসায়ীদের জমা রাখা টাকার পরিমাণ বেশি ছিল। সরজমিন গিয়ে জানা যায়, আউটলেটে টাকা জমা এবং উত্তোলনের পর গ্রাহককে প্রিন্টেট ভাউচার দেয়ার নিয়ম থাকলেও সেখানকার দায়িত্বরত ক্যাশিয়ার সুজন রহমান তা কখনোই দিতেন না।
ভাউচারের বদলে তিনি স্টেটমেন্টের স্থিতির অংশ ছিঁড়ে ফেলে উপরের অংশে টাকার পরিমাণ হাতে লিখে দিতেন। শুধু তাই নয়, ক্যাশিয়ার সুজন অতি মুনাফার লোভ দেখিয়ে সাধারণ গ্রাহকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা নিয়ে অ্যাকাউন্টে জমা না দিয়ে নিজের আয়ত্তে রাখতেন। গত বছরের নভেম্বর থেকে এরকম নানা ধরনের প্রতারণার সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন সুজন। চলতি বছরের ২৩শে মে হঠাৎ ক্যাশিয়ার সুজন সপরিবারে নিরুদ্দেশ হন। এরপর ২৬শে মে ব্যাংকের কয়েকজন গ্রাহক সঞ্চয়ী হিসাব থেকে টাকা তুলতে এসে দেখেন তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা নেই। এরপর সুজনের প্রতারণার বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে শতাধিক গ্রাহক টাকা ফেরত নিতে এসে দেখেন তাদের হিসাব নম্বরে জমাকৃত টাকা নেই। এর পরিমাণ দাঁড়ায় দেড় কোটি টাকায়। মাহফুজা বেগম নামের এক ভুক্তভোগী গ্রাহক জানান, ছেলেকে বিদেশ পাঠানোর জন্য ওই ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে ৫ লাখ টাকা রেখেছিলাম। গত সোমবার ছেলের ফ্লাইট ছিল। তার আগের দিন রোববার ব্যাংকে টাকা তুলতে গিয়ে দেখি অ্যাকাউন্ট শূন্য। ছেলের আর বিদেশ যাওয়া হলো না।
ফাতেমা নামের আরেক ভুক্তভোগী গ্রাহক জানান, আমি টাকা জমা দিতে আসলেও আমার ফিঙ্গার নেয়া হতো। জমার জন্য কেন ফিঙ্গার দিতে হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে ক্যাশিয়ার সুজন বলেছিলেন- টাকার কোনো নড়চড় যেন না হয় এজন্যই ফিঙ্গার নেয়া হচ্ছে। এরপর তিনি আমার হাতে একটি সিলিপ ধরিয়ে দিয়ে বিদায় দেন। এখন বুঝতে পারছি আমার দেয়া ফিঙ্গারের মধ্যেমেই অ্যাকাউন্ট নম্বরে জমাকৃত টাকাগুলো তিনি উত্তোলন করে নিজে পকেটে নিতেন। উপজেলার চাঁপাপুর ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট আউটলেটের স্বত্বাধিকারী ও ইনচার্জ নুরুল ইসলাম জানান, গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণার জন্য এবং তাদের টাকা ফিরিয়ে দিতে থানায় মামলা করেছি। মামলায় ক্যাশিয়ার সুজন রহমান (২৭), তার বাবা এনামুল হক (৪৬) ও মাতা রুবিয়া খাতুনকে (৪২) আসামি করেছি। আদমদীঘি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রাজেশ কুমার চক্রবর্তী মামলা দায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এই ব্যাংকে প্রবাসীদের পাঠানো টাকা ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের টাকা লেনদেন বেশি। অভিযুক্ত সুজনকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।