বেনাপোলে ৬ মাসে রাজস্ব ঘাটতি ৩২৮ কোটি
এ সময় আমদানি কমেছে গত অর্থবছরের একই সময়ের চাইতে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৩৯০ মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের পণ্য।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: বৈশ্বিক মন্দা আর হরতাল-অবরোধের বিরূপ প্রভাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) বেনাপোল কাস্টমস হাউজে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে ৩২৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এ সময় আমদানি কমেছে গত অর্থবছরের একই সময়ের চাইতে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৩৯০ মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের পণ্য।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলারের দামের ঊর্ধ্বগতি কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণে না আসা, প্রতিটি পণ্যের শুল্কায়ন মূল্য বাড়িয়ে দেওয়া ও ভুল এইচএস কোড হলে শতকরা ২০০ ভাগ জরিমানা আদায় করায় লোকসানের আশঙ্কায় অনেকে বাধ্য হয়ে আমদানি বন্ধ রেখেছেন। দ্রুত সংকট না কাটলে বছর শেষে আমদানির পরিমাণ আরও কমে বড় ধরনের রাজস্ব ঘাটতির কবলে পড়তে হতে পারে। গত ১২ থেকে ১৩ বছর ধরে বেনাপোল কাস্টমসে রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ঘাটতি হয়ে আসছে।
কাস্টমস সূত্র জানায়, ভারত থেকে যেসব পণ্য আমদানি হয় তার ওপর প্রতিমাসে নির্দিষ্ট পরিমাণে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের গেলো ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) বেনাপোল কাস্টমসে এ লক্ষ্যমাত্রার পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ১০৫ কোটি টাকা। কিন্তু আদায় হয়েছে ২ হাজার ৭৭৭ কোটি ৯ লাখ টাকা। এখানে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম আদায় হয়েছে ৩২৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা।
এ সময় ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ৮ লাখ ২৪ হাজার ১২৩ মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের পণ্য। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থ বছরের একই সময়ে (জুলাই-ডিসেম্বর) রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। সেসময় আদায় হয়েছিল দুই হাজার ৬৩২ কোটি এক লাখ টাকা। এখানে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ঘাটতি ছিল ৩০৬ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। এ সময় আমদানির পরিমাণ ছিল ৯ লাখ ৮৯ হাজার ৫১৩ মেট্রিক টন পণ্য। ২০২২-২৩ অর্থ বছরের ৬ মাসের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে আমদানি কমেছে এক লাখ ৬৫ হাজার ৩৯০ মেট্রিক টন পণ্য এবং রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে ২১ কোটি ৯১ লাখ টাকা।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সুলতান মাহামুদ বিপুল জানান, বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধ আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের খেসারত দিতে হচ্ছে বাংলাদেশকেও। খাদ্যদ্রব্যসহ শিল্প, কলকারখানার কাঁচামাল ও মেশিনারিজ দ্রব্য আমদানি করতে ডলারে মেটাতে হয় বাংলাদেশকে। কিন্তু বৈশ্বিক মন্দায় ডলারের দামের ঊর্ধ্বগতি আর সংকটের কারণ দেখিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কয়েক মাস ধরে এলসির সংখ্যা কমিয়েছে। এতে আমদানি কমায় দেখা গেছে রাজস্ব ঘাটতি। তবে আমরা আশাবাদী অর্থবছর শেষে এ সংকট মোকাবিলা করে বাণিজ্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল লতিফ জানান, বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি কমেছে ৩০ শতাংশ। এ সংকট কাটাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে বিপুল পরিমাণে বাণিজ্য ও রাজস্ব ঘাটতির মুখে পড়তে হতে পারে।
এদিকে সাধারণ সিঅ্যান্ডএফের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, আমদানিযোগ্য অনেক পণ্য এখন বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমস ও বিভিন্ন আইন প্রযোগকারী সংস্থার সহযোগিতায় শুল্ক ফাঁকি দিয়ে দেশে প্রবেশ করছে। এটিও অনেকটা রাজস্ব ঘাটতি বাড়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে সমস্ত পণ্য আমদানি হতো যেমন চকলেট, ফেসওয়াশ, ক্রিম, ইমিটেশন এগুলো এখন চুক্তির মাধ্যমে চোরাইপথে এসে বেনাপোল-ঢাকা, বেনাপোল-খুলনা ও বেনাপোল-ঢাকা এক্সপ্রেস ট্রেনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করে নিয়ে যাচ্ছে চোরাচালানীরা। ট্রেনের রেল পুলিশের সহযোগিতায় প্রতিদিন শত শত কম্বল ও এসব পণ্য নিয়ে গেলেও দেখার কেউ নেই। অথচ একজন সাধারণ মানুষ এক হাজার টাকা ভ্রমণ কর দিয়ে ভারত থেকে আসার পথে একটি কম্বলও নিয়ে আসতে পারে না।
বেনাপোল আমদানি-রপ্তানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক জানান, বৈশ্বিক মন্দায় ডলার সংকট দেখিয়ে ব্যাংকগুলো ডলারের দাম অযৌক্তিকভাবে বাড়ানোয় এলসি খুলতে পারছি না। সরকারের নির্ধারিত ডলার রেট থাকলেও বর্তমানে ১ ডলারের বিপরীতে ব্যাংক ১২৫ থেকে ১২৮ টাকা পর্যন্ত কাটছে। এর উপরে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ প্রতিটি পণ্যের উপর মূল্য বাড়িয়ে দিচ্ছে। এছাড়া এইচএস কোড ভুলের কারণে ২০০ ভাগ জরিমানা আদায় করছে। এর বিরূপ প্রভাবে দেশে শিল্পকলকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত ও আমদানি পণ্যের মূল্য লাগামহীনভাবে বাড়ার আশঙ্কা বাড়ছে।