বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি ১ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা

গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্য (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি ১ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা

প্রথম নিউজ, অনলাইন: ডলার সংকটের কারণে আমদানিতে বিভিন্ন শর্ত দেওয়া হয়েছে। এর প্রভাবে বৈদেশিক বাণিজ্যের ঘাটতি কিছুটা কমেছে। তবে এলসির হার কমলেও আমদানি দায় পরিশোধ খুব একটা কমেনি। একইসঙ্গে আশানুরূপ হারে বাড়েনি রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়। যার কারণে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের তুলনায় ব্যয় হ‌চ্ছে বেশি। ফলে আর্থিক হিসাবে বড় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এছাড়া ঋণ পরিশোধের তুলনায় নতুন ঋণ কম আসায় সামগ্রিক বৈদেশিক লেনদেনেরও বিশাল ঘাটতি তৈরি হয়েছে।এ ছাড়া আশানুরূপ হারে বাড়েনি রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়। বিদেশি বাণিজ্যিক ঋণে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্য (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, সদ্য সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরে (জুলাই-জুন) ৬ হাজার ৯৪৯ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। এ সময় রপ্তানি হয়েছে ৫ হাজার ২৩৪ কোটি ডলারের পণ্য। এতে করে ১ হাজার ৭১৫ কোটি ৫০ লাখ (১৭.১৫ বিলিয়ন) ডলারের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ১ ডলার ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা ধরে) এর পরিমাণ ১ লাখ ৮৭ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সদ্য সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছর ৬ হাজার ৯৪৯ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করা হয়েছে। শতাংশের হিসাবে আমাদানি কমেছে ১৫.৭৬ শতাংশ। এ সময় রপ্তানি হয়েছে ৫ হাজার ২৩৪ কোটি ডলারের পণ্য। শতাংশের হিসাবে রপ্তানি বেড়েছে ৬.২৮ শতাংশ। এতে দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সহায়ক হয়েছে। 

খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, রপ্তানির তুলনায় আমদানি বেশি, বিশ্ববাজারে জ্বালানিসহ সবধরনের পণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী ও আশানুরূপ রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় না আসা এবং বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়ছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া আশানুরূপ হারে বাড়েনি রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়। পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগ কমে গেছে অন্যদিকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার বেড়েছে। এসব কারণে বিদেশি বাণিজ্যিক ঋণে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। গেল অর্থবছরে সামগ্রিক লেনদেনে ৮২২ কোটি ডলারের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। গত অর্থবছরের এই ঘাটতি ছিল ৬৬৫ কোটি ডলার।

এদিকে গেল অর্থবছরের বা‌ণিজ্য ঘাটতির সামগ্রিক লেনেদেন ভারসাম্যে বড় ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এ ঘাটতি ৮ বিলিয়ন ডলারের উপরে। সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি বৃদ্ধি মানে বিভিন্ন উৎসে দেশে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আসছে, পরিশোধ হচ্ছে তার চেয়ে বেশি। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে গেল ২০২২-২৩ অর্থবছরের সাড়ে ১৩ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। তার আগের অর্থবছরে বিক্রি করে আরও ৭.৬২ বিলিয়ন ডলার। এভাবে ডলার বিক্রির কারণে ধারাবাহিকভাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে। সবশেষ ২৫শে জুন পর্যন্ত রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩০.৮৪ বিলিয়ন ডলারে।

চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সেই হিসাবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো। কিন্তু দেশে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স এখন ঋণাত্মক হয়েছে।

সবশেষ তথ্য বলছে, গেল অর্থবছরে চলতি হিসাবে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৩৩ কোটি ৪০ ডলার। আগের অর্থবছরে একই সময়ে এ ঘাটতি ছিল এক হাজার ৮৬৩ কোটি ডলার।

সামগ্রিক লেনেদেনেও (ওভার অল ব্যালান্স) বড় ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। গেল অর্থবছরের সামগ্রিক লেনেদেনের (ঋণাত্মক) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮২২ কোটি ২০ লাখ ডলার। এই সূচকটি আগের বছর একই সময় ঘাট‌তি ছিল ৬৬৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছর ২ হাজার ১৬১ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। আগের বছর পাঠিয়েছিলেন ২ হাজার ১০৩ কোটি ডলার। প্রবৃদ্ধি ২.৭৫ শতাংশ।

দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) সামান্য বেড়েছে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ যেখানে ৪৬৩ কোটি ৬০ লাখ ডলারের এফডিআই পেয়েছিল। গেল অর্থবছরে তা কমে ৪৫০ কোটি ডলারে নেমেছে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে সরাসরি মোট যে বিদেশি বিনিয়োগ আসে তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ নিয়ে যাওয়ার পর যেটা অবশিষ্ট থাকে সেটাকে নিট এফডিআই বলা হয়।

আলোচিত অর্থবছরে নিট বিদেশি বিনিয়োগও কমেছে। এই সূচকটি আগের বছরের চেয়ে ১১.৮২ শতাংশ কমে ১৬১ কোটি ডলার হয়েছে। আগের অর্থবছরে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ১৮২ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

একইসঙ্গে আলোচিত সময়ে দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ (পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট) নেতিবাচক অবস্থা অব্যাহত আছে। গত অর্থবছরে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ (নিট) যা এসেছিল তার চেয়ে ১ কোটি ৮০ লাখ ডলার চলে গেছে। তার আগের অর্থবছরের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল (ঋণাত্মক) ১৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার।