বিটিআরসির নির্দেশনা: সাত দিনের কম মেয়াদের কোনো ইন্টারনেট প্যাকেজ থাকবে না
অপারেটররা বলছে, বিটিআরসির নতুন সিদ্ধান্তে গ্রাহকের বাছাইয়ের সুযোগ কমে যাবে এবং প্যাকেজের দামও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য ডেটাভিত্তিক প্যাকেজের সংখ্যা কমিয়ে সর্বোচ্চ ৪০টি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এখন চার মেয়াদের প্যাকেজ আছে। তবে নতুন করে দুই মেয়াদের প্যাকেজ করা হচ্ছে। পাশাপাশি সীমাহীন মেয়াদের (আনলিমিটেড) প্যাকেজটি থাকছে। অপারেটররা বলছে, বিটিআরসির নতুন সিদ্ধান্তে গ্রাহকের বাছাইয়ের সুযোগ কমে যাবে এবং প্যাকেজের দামও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে।
চলতি বছরের মে মাসে মোবাইল ডেটার প্যাকেজ নির্ধারণ করে দেওয়ার একটি খসড়া পরিকল্পনা করার কথা জানায় বিটিআরসি। এর জন্য তারা অনলাইনে একটি জরিপ করে গত মে মাসে তার ফলাফল তুলে ধরে। সেই জরিপের ফলাফলে বিটিআরসি জানিয়েছিল, বেশিসংখ্যক গ্রাহক ইন্টারনেট প্যাকেজের সংখ্যা ৪০ থেকে ৫০টির মধ্যে রাখার মতো দিয়েছেন। বেশির ভাগ গ্রাহক চান, ইন্টারনেট প্যাকেজের মেয়াদ হওয়া উচিত তিনটি—৭ দিন, ৩০ দিন ও নির্দিষ্ট মেয়াদহীন (আনলিমিটেড)।
বিটিআরসি ৩ সেপ্টেম্বর রোববার মোবাইল ডেটার প্যাকেজ সম্পর্কিত নির্দেশিকা প্রণয়ন চূড়ান্ত করছে। নতুন এই নির্দেশিকা সম্পর্কে মুঠোফোন অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলোকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটি আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে কার্যকর হবে। এর আগে আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর বিটিআরসি আনুষ্ঠানিকভাবে নির্দেশিকা সম্পর্কে সবাইকে জানাবে। মুঠোফোন অপারেটরগুলো এখন সর্বোচ্চ ৯৫টি প্যাকেজের অফার দিতে পারে। বিটিআরসি ২০২২ সালে এক নির্দেশিকায় এই সংখ্যা নির্ধারণ করে দিয়েছিল। সেখানে ৩, ৭, ১৫ ও ৩০ দিন মেয়াদের প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়। এরপর বিটিআরসি বলছে, বেশি প্যাকেজ নিয়ে গ্রাহকেরা অভিযোগ দিচ্ছে। বেশি প্যাকেজ থেকে সঠিকটা বাছাই করা জটিল। তাই আবারও ডেটা প্যাকেজের নতুন নীতি তার করেছে।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, গ্রাহকদের চাহিদা ও স্বার্থের কথা বিবেচনা করেই নতুন নির্দেশিকা হয়েছে। এ ছাড়া দাম বাড়ার কোনো সুযোগ নেই বলে জানান। যদিও মুঠোফোন অপারেটররা বলছে, গ্রাহকদের পছন্দের প্যাকেজ বাছাই সীমিত হয়ে পড়বে। এ ছাড়া একেক গ্রাহকের ডেটা ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে ওই গ্রাহকের জন্য আলাদা প্যাকেজ তৈরির সুযোগও কমে আসবে।
গ্রামীণফোনের মুখপাত্র হোসেন সাদাত বলেন, ‘গ্রামীণফোন দেশের সব আইনকানুন মেনে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে। আমরা নিয়ন্ত্রক সংস্থার পদক্ষেপ সম্পর্কে অবগত এবং বর্তমানে এটি মূল্যায়ন করছি।’ বাংলালিংক জানিয়েছে, তিন দিনের মেয়াদ বন্ধ হলে গ্রাহকদের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। প্রতিষ্ঠানটির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, যাদের বাজেট সীমিত তাদের ওপর এই প্রভাব পড়বে।
নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী, অপারেটররা তিন ধরনের প্যাকেজ দিতে পারবে—নিয়মিত প্যাকেজ, গ্রাহককেন্দ্রিক বিশেষ প্যাকেজ এবং রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট প্যাকেজ। অপারেটররা বিভিন্ন দিবস, খেলা বা ওটিটি প্ল্যাটফর্মের কনটেন্ট দেখার জন্য স্পেশাল প্যাকেজ দিয়ে থাকে। যার মেয়াদও নতুন নির্দেশিকায় সাত দিন হবে।
বিটিআরসির জরিপে উঠে এসেছিল, প্রায় ৮৮ শতাংশ মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক চান, তাঁদের কেনা প্যাকেজের অব্যবহৃত ডেটা পরবর্তী যেকোনো প্যাকেজের সঙ্গে যুক্ত হোক। কিন্তু বিটিআরসি গ্রাহকের স্বার্থের কথা বললেও নতুন নির্দেশিকায় সেটা রাখা হয়নি। আগে কোনো প্যাকেজ কিনলে তার অব্যবহৃত ডেটা পরবর্তী সময়ে একই প্যাকেজ মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে কিনলে যুক্ত হতো। নতুন নির্দেশিকায় একই বিষয় রাখা হয়েছে, যেখানে একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ ৫০ জিবি পর্যন্ত এ সুবিধা পাবেন।
নতুন ডেটা প্যাকেজ নিয়ে অপারেটররা সন্তুষ্ট না। তারা বলছে, দেশে ইন্টারনেটের চাহিদা এখন বাড়ছে। দেশের প্রায় সব শ্রেণির মানুষের হাতে ইন্টারনেট সেবা দিতে সবার কথা মাথায় রেখে নানা প্যাকেজ দিতে হয়। সেখানে এভাবে বেঁধে দিয়ে দিলে সবার কথা বিবেচনা করা সম্ভব হবে না। অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (অ্যামটব) মহাসচিব লে কর্নেল মোহাম্মদ জুলফিকার (অব.) বলেন, প্যাকেজ ডিজাইন করা হয় বিভিন্ন স্তরের গ্রাহকদের কথা মাথায় রেখে। কারণ, একজন শিক্ষার্থী অথবা একজন নিম্ন আয়ের মানুষের ডেটা ব্যবহারের ধরন আর একজন ব্যবসায়ীর ব্যবহারের ধরন এক নয়।
অ্যামটব বলছে, দেশের নিম্ন আয়ের যে ৪৫ শতাংশ মানুষ এখনো মোবাইলের আওতায় আসেনি, তাদের এই সেবার মধ্যে নিয়ে আসতে হলে তাদের উপযোগী বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজ দরকার। এ ছাড়া প্যাকেজসংক্রান্ত সর্বশেষ নির্দেশনাটি বছরখানেক আগে দেওয়া হয়েছিল। বাজারে তার ব্যবহারিক প্রভাব কী, তা এখনো পুরোপুরিভাবে পরীক্ষিত নয়। এখন আবার প্যাকেজসংখ্যা ও তার সময় নিয়ে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হলো। এই পরিবর্তনের প্রভাব পুরো খাতে এবং সরকারের রাজস্ব আহরণেও পড়তে পারে। অ্যামটব আশা করছে, অপারেটরদের সঙ্গে কথা বলে নতুন নির্দেশিকার বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করবে বিটিআরসি।
বিটিআরসির এই সিদ্ধান্তকে অপ্রত্যাশিত বলছে রবি আজিয়াটা লিমিটেড। তাদের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, গ্রাহকদের ভিন্ন ভিন্ন চাহিদা এবং পছন্দ রয়েছে। মাত্র ৪০টি প্যাকেজের মাধ্যমে এই চাহিদা পূরণ করা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। এ সিদ্ধান্ত গ্রাহকদের তাদের পছন্দ অনুযায়ী প্যাকেজ নির্বাচন করার স্বাধীনতা এবং মোবাইল ফোন ব্যবহারের সামগ্রিক খরচের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।