বাজার মূলধনে যোগ হলো আরও ছয়শ কোটি টাকা
প্রথম নিউজ, ঢাকা: এক সপ্তাহ টানা ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর গেলো সপ্তাহে কিছুটা অস্থিরতার মধ্যদিয়ে পার করেছে দেশের শেয়ারবাজার। এরপরও সপ্তাহজুড়ে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান। এতে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন ছয়শ কোটি টাকার ওপরে বেড়ে গেছে। এর মাধ্যমে টানা দুই সপ্তাহ বাজার মূলধন বাড়লো। অবশ্য এর আগে চার সপ্তাহের টানা পতনে ডিএসইর বাজার মূলধন সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকার ওপরে কমে যায়।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় থেকেই রাজনৈতিক অস্থিরতার শঙ্কা শুরু হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে শেয়ারবাজারেও মন্দা প্রবণতা দেখা দেয়। রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে টানা চার সপ্তাহ পতনের মধ্যে থাকে শেয়ারবাজার। তবে গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসেই মূল্যসূচক বাড়ে। এতে এক সপ্তাহে বাজার মূলধন ২ হাজার কোটি টাকার ওপরে বেড়ে যায়।
এ পরিস্থিতিতে গত সপ্তাহে শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় দরপতন দিয়ে। পরের চার কার্যদিবসেও শেয়ারবাজারে বেশ অস্থিরতা দেখা যায়। এক কার্যদিবস সূচক কিছুটা বাড়লেই পরের কার্যদিবসে পতন দেখতে হয়েছে বিনিয়োগকারীদের। এরপরও সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১১০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৬৫টির। আর ২১২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
দাম অপরিবর্তি থাকা বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে ফ্লোর প্রাইসে (সর্বনিম্ন দাম) আটকে রয়েছে। ক্রেতা না থাকায় এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট বিক্রি করতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা। গেলো সপ্তাহেও এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট ক্রেতা সংকটের মধ্যে ছিল। অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠান ক্রেতা সংকটে থাকলেও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখিয়ছে।
এতে দাম বাড়ার তালিকা বড় হওয়ার পাশাপাশি বেড়েছে বাজার মূলধন। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৭৪ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা। যা গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ৬৭০ কোটি টাকা বা দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন বাড়ে ২ হাজার ৯২ কোটি টাকা বা দশমিক ২৭ শতাংশ। অর্থাৎ দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে ২ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা। এর আগে টানা চার সপ্তাহের পতনে বাজার মূলধন কমে ১২ হাজার ৭১২ কোটি টাকা।
এদিকে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ১৪ দশমিক ২৯ পয়েন্ট বা দশমিক ২৩ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ২৯ দশমিক ৫৩ পয়েন্ট বা দশমিক ৪৭ শতাংশ। তবে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক গত সপ্তাহে কমেছে ৮ দশমিক ১৪ পয়েন্ট বা দশমিক ৩৮ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৬ দশমিক ৯৪ পয়েন্ট বা দশমিক ৩৩ শতাংশ।
আর ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক গেলো সপ্তাহে বেড়েছে ৩ দশমিক ৯৩ পয়েন্ট বা দশমিক ২৯ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৭ দশমিক ৫২ পয়েন্ট বা দশমিক ৫৬ শতাংশ।
প্রধান মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৫৯৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৪৫৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ১৪০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বা ৩০ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
আর সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৯৮১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয় ২ হাজার ২৭৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন বেড়েছে ৭০১ কোটি ৮১ লাখ টাকা বা ৩০ দশমিক ৭৮ শতাংশ। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৪২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা অলিম্পিক এক্সসরিজের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১০৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ৯৭ কোটি ৯৯ লাখ টাকা লেনাদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং।
এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- প্যাসেফিক ডেনিমস, ফু-ওয়াং সিরামিক, বিডি থাই অ্যালুমেনিয়াম, এডভেন্ট ফার্মা, ইয়াকিন পলিমার, ওরিয়ন ইনফিউশন এবং এসকে ট্রিমস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ।