বাগেরহাট ও মনপুরায় ক্ষতিগ্রস্ত অসংখ্য বসতঘর, পানিবন্দি মানুষ
রাতে ঝড়ের সঙ্গে মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় রামপাল, মোংলা, বাগেরহাট এলাকার কয়ের হাজার মাছের ঘের ভেসে গেছে। বিদ্যুৎহীন রয়েছে জেলার অধিকাংশ এলাকা।
প্রথম নিউজ, বাগেরহাট ও মনপুরা : ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাট ও মনপুরায় অসংখ্য গাছপালা উপড়ে পড়েছে। অনেক জায়গায় ঘরের ওপর গাছ ভেঙে পড়ায় ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। রাতে ঝড়ের সঙ্গে মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় রামপাল, মোংলা, বাগেরহাট এলাকার কয়ের হাজার মাছের ঘের ভেসে গেছে। বিদ্যুৎহীন রয়েছে জেলার অধিকাংশ এলাকা। ঝড়ে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। হলেও এখনও পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নেওয়া উপকূলীয় এলাকা শরণখোলা, মোংলা ও মোড়েলগঞ্জের প্রায় ৬০ হাজার মানুষ নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে গেছে। বাগেরহাটের বেমরতা, বেটপুর, ফতেপুর, ভাটসালা এলাকায় ঝড়ে অসংখ্য গাছ পড়ে রয়েছে। এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন এলাকার চিত্রও প্রায় একই। যে যার মতো করে ঘরের ওপর পড়ে থাকা গাছ কেটে অপসারণ করছে। অনেক বাড়ির উঠান হাঁটুপানি জমে রয়েছে। নেই বিদ্যুৎ।
এদিকে রাতে রাস্তার ওপর উপড়ে পড়া কয়েকটি গাছ এরই মধ্যে সরিয়ে ফেলেছেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা মো. শাজাহান সিরাজ জানান, বাগেরহাট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে ও শহরের পুরাতন জেলাখানা রোডসহ কয়েকটি স্থানের গাছ ইলেকট্রিক করাত দিয়ে কেটে অপসারণ করা হয়েছে। আরও বিভিন্ন স্থানে গাছপালা উপড়ে রাস্তায় পড়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এএসএম রাসেল জানান, দুদিনের টানা বর্ষণে ও ঝড়ের প্রভাবে মোংলা, রামপাল, সদরসহ বেশ কিছু এলাকার ঘের পানিতে ভেসে গেছে। আমরা ক্ষতি নিরুপণের কাজ শুরু করেছি। বাগেরহটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান জানান, ইতোমধ্যে উপকূলীয় এলাকার মানুষের জন্য ২৯৮ টন চাল ও চার লাখ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
মনপুরা: ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে বরিশাল বিভাগের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ভোলার মনপুরায় প্রথমবারের মতো বাঁধ উপচে পানি ঢুকেছে। এ ছাড়া নদীবেষ্টিত ১ লাখ ২০ হাজার জনবসতি অধ্যুষিত এই উপজেলায় প্রাণিসম্পদের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। মনপুরা উপজেলার দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. অলিউল্লাহ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, প্রথমবারের মতো বেড়িবাঁধ উপচে পানি ভেতরে প্রবেশ করছে। জোয়ারে এই উচ্চতা ৭ ফুটেরও বেশি ছিল।
তিনি বলেন, শুধু আমার ইউনিয়নেই ৩-৪ শ ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে, বেড়িবাঁধের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫ কিলোমিটার। মহিষ ভেসে গেছে ৩-৪ শ। আমার ৬০টি মহিষের মধ্যে মাত্র ২০টি খুঁজে পেয়েছি। এ ছাড়া এলাকার হরিণসহ অন্যান্য পশু যে কী পরিমাণে ভেসে গেছে তা আমাদেরও হিসাব নেই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, অন্তত ১০টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ক্ষতি হয়েছে। জোয়ারে পানির উচ্চতা ৭ ফুটেরও বেশি ছিল, যা ৬ ফুট বেড়িবাঁধ টপকে গেছে। এই উপজেলার অন্তত ১০ হাজার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া সম্ভব হয়েছে। তবে পশু ও মৎস্য সম্পদেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পুরো ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে বলে জানান তিনি।
স্থানীয় যুবক রাকিব জানান, এর আগে তারা বেড়িবাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করতে দেখেননি। কিন্তু এবারে জোয়ার এত বেশি ছিল যে, বাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করেছে, যা এখনো আছে। বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস এম কাউসার জানান, বনের কিছু ক্ষয়ক্ষতি হলেও হরিণ ভেসে গেছে কি না এ তথ্য আমরা এখনো জানতে পারিনি।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews