বিএনপিসহ বিরোধী দল শূণ্য করতে সরকার মরিয়া হয়ে উঠেছে: রিজভী

বিএনপিসহ বিরোধী দল শূণ্য করতে সরকার মরিয়া হয়ে উঠেছে: রিজভী

প্রথম নিউজ, ঢাকা: ‘বিএনপিসহ বিরোধী দল শূণ্য করতে সরকার মরিয়া হয়ে উঠেছে’ বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

বুধবার বিকালে এক ভার্চুয়াল সংবাদ ব্রিফিঙে তিনি এই অভিযোগ করেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘‘ অবরোধের দ্বিতীয় দিনেও দেশের নানা জায়গায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ, আবার কোথাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগ যুক্ত ভাবে এই ঠান্ডা লীগ অবরোধকারী গণতন্ত্রের ফেরানোর দাবির পক্ষে শ্লোগান দেয়া নেতা-কর্মীদের ওপরে আক্রমন চালিয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে নির্বিচারে পাইকারীভাবে, ব্লক রেইড চলছে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায়। রিমান্ড আর গ্রেফতার এযেন আওয়ামী দুঃশাসনের অন্যতম পণ্য।

‘‘ সরকার গোটা দেশকে বিএনপি শূণ্য করা, বিরোধী দল শূণ্য করার এমনকি গণতন্ত্র শূণ্য করার জন্য যত ধরনের পদ্ধতি দরকার সেটি তারা করে যাচ্ছে, ওরা মরিয়া হয়ে এই কাজ করে যাচ্ছে। বিএনপিসহ বিরোধী দলকে স্তব্ধ করার উদ্দেশ্যই হচ্ছে দেড় দশকের আওয়ামী লুন্ঠন ও অর্থপাচারের কাহিনীগুলো যেন সাধারন জনগন জানতে না পারে।”

রিজভী বলেন, ‘‘ দেশব্যাপী যে জুলুম নিপীড়নের খড়গ নেমে এসেছে গণতন্ত্রকামী মানুষের ওপরে, যারা বাকস্বাধীনতা চায়, যারা নির্ভিগ্নে চলাচল করতে চায়, যারা গণতাধিকার অধিকার ফিরে পেতে চায়… আজকে তারা মরণপণ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। সেজন্য আমরা তাদের অভিনন্দন জানাই।

সংবাদ ব্রিফিঙে বিএনপির ডাকা দেশব্যাপী ‘রাজপথ-রেলপথ-নৌপথ অবরোধ’ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে দলের নেতা-কর্মীদের ওপরে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের গুলিবর্ষন, হামলা, মামলা ও গ্রেফতহারের চিত্র তুলে ধরেন রিজভী।

তিনি বলেন, ‘‘ বিএনপির শান্তিপূর্ণ সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ও অবরোধকে কেন্দ্র করে মোট গ্রেফতার ২৫৬৩জনের অধিক, মোট মামলা ৫৫টির অধিক, মোট ৩৪৩৬জনের অধিক নেতা-কর্মী। মৃত্যু ৯জন একজন সাংবাদিকসহ।”

২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে মোট গ্রেফতার করা হয়েছে ৪২৮৩ জনের অধিক নেতা-কর্মী, মিথ্যা মামলা হয়েছে ৮০টির অধিক।”

‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর নিষ্ঠুরতা বেড়েছে বলে মন্তব্য করেরিজভী বলেন, ‘‘ গতকাল(মঙ্গলবার) প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরে বিবেকহীন পুলিশ বাহিনী বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন চালাতে আরো বেশি উতসাহী হয়ে ওঠে। ২৮, ২৯, ৩০ ও ৩১ অক্টোবর আওয়ামী পুলিশ রক্তের যে হোলিখেলা খেলেছে সেটি নজিরবিহীন পৈশাচিক ঘটনা। তিনি(প্রধানমন্ত্রী) গণভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে অনর্গল মিথ্যা কথা বলেছেন সারা জাতির সামনে। অথচ দেশবাসী ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়িক সম্প্রদায় যা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষন করেছেন সেটিকে সেটিকে খন্ডাবেন কি করে? জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন বলেছে যে, মুখোশ পরা হেলমেন্টধারী ব্যক্তিরা সরকারের লোক।দেশে-বিদেশে বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের সংস্থা, মানবাধিকার সংস্থা, রাইটস গ্রুপ… জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশন তারা পর্যন্ত মুখোশ পরা হেলমেন্টধারীরা তারা সবাই সরকারের লোক।”

‘‘ তারা নিবিডভাবে পর্যালোচনা করেছেন, তারা পর্যবেক্ষন করেছেন, তারা নানা তথ্য,উপাত্ত, ভিডিও ক্লিফস সমসবত কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করে একথা বলেছেন। এটাকে প্রধানমন্ত্রী আপনি অস্বীকার করবেন কি করে? আপনি মনগড়া, বানোয়াট একের পর এক অভিযোগ দিয়ে কথা বলছেন। এই সমস্ত মামলার কথা জনগন বিশ্বাস করে না কিন্তু ভয়ে কিছু বলতেও পারে কখন আপনার দুঃশাসনের খড়গ মাথার ওপরে নেমে আসবে।”

রিজভী বলেন, ‘‘ সরকার শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য দাবির আন্দোলনকে রক্তাক্ত পন্থায় দমন করছে।আপনারা বিভিন্ন শিল্পের শ্রমিকরা তারা আন্দোলন করছে ন্যায্য দাবির স্বপক্ষে। তাদের এই সংগ্রামের প্রতি গণতন্ত্রকামী প্রতিটি মানুষ সেটা সমর্থন করেছে বিএনপিসহ। আপনারা দেখেছেন যে, কি বর্বরোচিতভাবে আক্রমন চালিয়েছে শ্রমিকদের ওপরে।”

‘‘ এটা দমানো জন্য সরকার সন্ত্রাসীদের নামিয়েছে। গতকাল একজন যুব লীগ নেতা ঝাঁপিয়ে পড়েছেন শ্রমিকদের আন্দোলনের কর্মসূচির ওপরে। সেখানেও দেখেছেন সন্ত্রাসী দিয়ে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে দমানো হচ্ছে। খেটে খাওয়া মানুষের ওপরে এভাবে ওরা হামলা করেছে…। এমন তো বেশি টাকা নয়, ওরা এখন যে বেতন পায় সেখান আপনি দেখেন কয়েক‘শ গুন বৃদ্ধি পেয়ে খাদ্য পণ্যের। কিভাবে খেটে খাওয়া মানুষ কি খাবে। ওরা যে মজুরির জন্য সংগ্রাম করেছেন এটা কোনো অযৌক্তিক সংগ্রাম নয়, সম্পূর্ণ যৌক্তিক ও ন্যায়সঙ্গত সংগ্রাম। সেটাকেও তারা বর্বরোচিত রাষ্ট্রশক্তির চাকায় থেতলে দিচ্ছে এই সরকার।আওয়ামী সরকারের ক্ষমতার লোভ এতোটাই তীব্র যে তারা সারাদেশকে গোরস্থান বানিয়ে ক্ষমতায় থাকতে চায়।”

রিজভী বলেন, ‘‘ জেলখানায় বিএনপি নেতাকর্মীদের দুর্দশা এখন চরমে উঠেছে। বিএনপির যে সমস্ত নেতা যারা একসময় মন্ত্রী-এমপি ছিলেন তাদেরকেও ডিভিশন দেয়া হচ্ছে না। কারাগারের ভিতরেও বিএনপি নেতাদের আটকে রাখা হচ্ছে, সেলে আটকিয়ে রাখা হচ্ছে… একদম নির্জন অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। যেখানে দম বন্ধ থাকার পরিবেশ। এমনকি দিনের বেলায়ও তাদের সেলের ভিতরে আটক রাখা হয়।”

‘‘ ভয়ংকর হয়রানির মধ্যে বিএনপি নেতারা দিন কাটাচ্ছে। শেখ হাসিনার জুলুমের মাত্রার কোনো শেষ নেই। গতকাল জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে গ্রেফতারের পর আজকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। এটা সরাসরি মির্জা আব্বাসের উপর সরকারি নিপীড়ন। তিনি এমনিতেই অসুস্থ, ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে আক্রান্ত। এই ধরনের রোগাক্রান্ত একজন অসুস্থ নেতাকে যে টানা হেঁচড়া করছে তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আমি কারাগারে বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর কারা কর্তৃপক্ষের নিপীড়ণ ও নির্যাতনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।