ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে ছাত্রলীগের পদযাত্রা

গতকাল দেশব্যাপী পদযাত্রা ও ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ইসরাইলের আগ্রাসন বিরোধী পদযাত্রা ও ছাত্র সমাবেশ করে।

ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে ছাত্রলীগের পদযাত্রা

প্রথম নিউজ, অনলাইন: স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠা ও গাজায় ইসরাইলি হামলা বন্ধের দাবিতে বিশ্বব্যাপী চলমান আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। গতকাল দেশব্যাপী পদযাত্রা ও ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ইসরাইলের আগ্রাসন বিরোধী পদযাত্রা ও ছাত্র সমাবেশ করে।

রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত সমাবেশে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, যারা গণতন্ত্রের মোড়ল। যারা বাক স্বাধীনতার সার্টিফিকেট দেয়। যারা বলে দেয় কোন দেশটি গণতান্ত্রিক কোন দেশটি অগণতান্ত্রিক। যারা গণতন্ত্রের টেন্ডার নিয়েছে সারাজীবনের জন্য। তাদের মুখোশ কীভাবে উন্মোচিত হয়েছে? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৪০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন চলমান রয়েছে। সেখানে আড়াই হাজার শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আন্দোলনের কারণে শিক্ষার্থীদের সাসপেনশন দেয়া হয়েছে। গাজায় অবিলম্বে আমরা যুদ্ধবিরতি চাই।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দেখেছি ইহুদি শিক্ষার্থীরাও ফিলিস্তিনিদের পক্ষে কথা বলছে। বিশ্বের মোড়লদের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই, কতো মানুষ মারা গেলে এটাকে জেনোসাইড বলা হবে? আমেরিকা যখন ফিলিস্তিনিদের বিপক্ষে ভেটো দিয়েছে তখন সেই দেশের শিক্ষার্থীরা প্যালেস্টাইনের পক্ষে কথা বলছে।

সাদ্দাম আরও বলেন, সারাবিশ্বে যারা ফিলিস্তিনিদের পক্ষে লড়ছেন তাদের জানাই সালাম। সীমান্ত ছেড়ে গোটা বিশ্ব একাত্মতা পোষণ করছে। আমরা মানবতাবিরোধীদের শাস্তির দাবিতে আন্দোলন করেছিলাম। গাজায় অবিলম্বে আমরা যুদ্ধবিরতি চাই। বিশ্বে যেখানে মানবতাবিরোধী অপরাধ হবে সেখানেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তাদের পাশে থাকবে।

সমাবেশ সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আফিস ইনান। সমাবেশে অংশ নিয়ে বাংলাদেশে অধ্যয়নরত ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী ইশহাক আহমেদ বলেন, আমাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ। বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বের শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হয়ে গোটা বিশ্বে প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়েছে। গাজায় শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারছে না। ইনশাআল্লাহ একদিন সময় পরিবর্তন হবে। ধন্যবাদ বাংলাদেশের জনগণকে। ছাত্রলীগকে ধন্যবাদ।

বাংলাদেশে অধ্যয়নরত ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের নেতা বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ বাদাউই বলেন, আমরা আজ মানবেতর জীবনযাপন করছি। আমাদের জীবন হুমকির মুখে। গোটা বিশ্ব আমাদের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। এজন্য আমরা গোটা বিশ্বকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা ফিলিস্তিনির স্বাধীনতা চাই। আমরা বাঁচতে চাই। আমারা চাই অবিলম্বে হামলা বন্ধ হোক। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভির হাসান সৈকত বলেন, সারা বিশ্বের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছি। আজকে যখন আমাদের শিশুরা দুধে-ভাতে থাকে। সেখানে শিশুরা খাবার পায় না। হাসপাতালে পর্যন্ত হামলা চালানো হয়। শান্তির কথা বলে যারা হামলা করে তাদের পক্ষে আর না। সারা বিশ্বের শান্তির জন্য আমাদের সংগ্রাম। ধন্যবাদ জানাই যারা আমেরিকার নাগরিক হয়েও একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। যতদিন পর্যন্ত ফিলিস্তিন স্বাধীন হবে না ততদিন ছাত্রলীগ তাদের পাশে থাকবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন বলেন, ছাত্রলীগের দীর্ঘদিনের সংগ্রামের ইতিহাস রয়েছে। আমরা শুধু বাংলাদেশের মানুষের জন্য আন্দোলন করি না। আমরা সারা বিশ্বের শোষিত মানুষের পাশে দাঁড়াই। আজ বিশ্বের অনেক শিক্ষার্থী একত্রিত হয়েছে। আমরা ফিলিস্তিনির সাধারণ মানুষের কষ্টটা বুঝি। কিন্তু আমরা বুঝি না বিশ্ব নেতারা কেন চুপ। আমি সারা বিশ্বের ছাত্রদের বলতে চাই সবাই প্রশ্ন তুলুন। সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি রিয়াজ মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক সাগর আহমেদ শামীম, দক্ষিণ শাখার সভাপতি রাজিবুল ইসলাম বাপ্পি ও সাধারণ সম্পাদক সজল কুণ্ডু প্রমুখ।

গত কয়েক দিনে ব্যাপক আলোচিত এই কর্মসূচিতে যোগ দিতে গতকাল সকাল ১০টা থেকে মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আসতে থাকেন ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা। এরমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ, সাত কলেজ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণসহ রাজধানীর বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা বড় বড় শোডাউন দিয়ে জড়ো হন। একপর্যায়ে নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে লোকারণ্য হয়ে পড়ে মধুর ক্যান্টিন, কলাভবন ও এর আশেপাশে এলাকা। মিছিলে, স্লোগানে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা জমিয়ে রাখেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এ সময় তাদের হাতে ছিল ফিলিস্তিনের পতাকা, ফেস্টুন ও ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধের নানা প্ল্যাকার্ড। বেলা ১১টায় পদযাত্রা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সাড়ে বারোটার পর সেখান মিছিল নিয়ে অনুষ্ঠানস্থল রাজু ভাস্কর্যের দিকে যাত্রা শুরু করে ছাত্রলীগ। পদযাত্রাটি ভিসি চত্বর, ফুলার রোড দিয়ে শহীদ মিনার হয়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আসে। এ সময় ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন-স্টপ জেনোসাইড, স্বৈরাচার নিপাত যাক-ফিলিস্তিন মুক্তি পাক, উই ওয়ান্ট জাস্টিস-জয় জয় ফিলিস্তিন, ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি-প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি ইত্যাদি স্লোগান দেন।