ফ্যাসিস্ট ও অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে তরুণদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে: মির্জা ফখরুল

ফ্যাসিস্ট ও অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে তরুণদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে: মির্জা ফখরুল

প্রথম নিউজ, রফিক মৃধা বরিশাল থেকে: ফ্যাসিস্ট ও অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে তরুণদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আজকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও বিদায়ের জন্য সবাই অপেক্ষা করছে। যার প্রমাণ বরিশালে তারুণ্যের সমাবেশ। বরিশালের অনেক ঐতিহ্য রয়েছে। এখানে অনেক জ্ঞানী গুণী মানুষের জন্ম নিয়েছেন।।জকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের নতুন সংগ্রাম হয়েছে। এরা আমাদের ইলিয়াস আলী, সুমন, থেকে শুরু করে ৬ শতাধিক নেতাকর্মী গুম করেছে। তাদের সন্তানেরা এখনো অপেক্ষা করে তাদের বাবা-ভাই ফিরে আসবে। কিন্তু এই ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট সরকার আমাদের সন্তানদের পিতৃহারা, স্ত্রীদের স্বামীসহারা এবং মায়েদের সন্তানহারা করেছে। শুধু অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে রাখতে গত ১৪ বছর ধরে নির্যাতন করছে।

তারা বলে দেশে নাকি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। তারা বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একজন মেয়র প্রার্থী আলেম মানুষ তাকে মেরেছে। আর নির্বাচন কমিশনার বলেন,- তিনি কি মারা গেছেন? এরা সংবিধানের দোহাই দিয়ে নির্বাচনের কথা বলে! কিন্তু কোন সংবিধান? সংবিধানে তো বলা হয়েছে দেশের মালিক জনগণ। তারা কী ভোট দিতে পেরেছে? না। দুই প্রজন্ম ভোট দিতে পারেনি। অথচ ভোট দেওয়া হয় প্রতিনিধি নির্বাচিত করার জন্য। কিন্তু এরা নিজের চুরি করার জন্য সংসদে পাঠায়। সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রেখে বলে যে ভোট হয়ে গেছে। কারণ তারা জানে জনমতের প্রতিফলন হলে তারা ১০ টি আসনও পাবেন না। এত অন্যায় করেছে।

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের অনেক টাকা জমা হয়েছিলো। কিন্তু শেখ হাসিনা সুইজারল্যান্ড যাওয়ার পর শোনা গেলো সুইস ব্যাংক থেকে বাংলাদেশিরা অনেক টাকা সরিয়ে ফেলেছে। লোকে এসব বলাবলি করে। আসলে সবাই এসব বোঝে। আজকে সরকার বিদ্যুতের কথা বলে। কিন্তু বিদ্যুৎ নেই। সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে প্রকল্প করে টাকা চুরি করে বিদেশে পাচার করা। আজকে সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় দাম বেড়েছে। কিন্তু সরকার আরাম আয়েশ করছে। এরা কাগজ কলম সবকিছুর দাম বাড়িয়েছে।এরা যতদিন পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে এই অবস্থা চলতে থাকবে।

সংবিধান অনুযায়ী এই সরকার বৈধ নয়। আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জনগণের দাবি মেনে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই আওয়ামী লীগ ১৭৩ দিন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন। অতীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে চারটি নির্বাচন হয়েছে কিন্তু কোনো সমস্যা হয় নি। এরপর আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পরপরই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। শুধু ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে। আজকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার মাধ্যমে দেশে সংকটকে দীর্ঘ করেছে সরকার।

এই সরকার বৈধ নয়। এরা অবৈধ। তাদের অধীনে কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আমাদের স্পষ্ট কথা আমরা এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবোনা। এই সরকারের অন্যায় দুর্নীতি ও মানবাধিকার লংঘনের কারণে কিন্তু র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এরা আমাদের ছেলেদের ধরে নিয়ে গুম করে রাখে। এজন্যই কী আমরা বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলাম? আজকে আমাদের গণতন্ত্রের মাতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাবন্দী রেখেছে।

এই তরুণ সমাবেশের মাধ্যমে আমাদের সাহস বাড়ে। যেন তরুণ বয়সে ফিরে যাই। যা আমাদের অন্দোলিত করে। আজকে এই ফ্যাসিস্ট ও অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে তরুণদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তারেক রহমানের স্বপ্ন তরুণ প্রজন্মকে দেখাতে হবে। এই ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটিয়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তার আগে আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে, চল্লিশ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। আমরা নির্বাচন চাই। সেটা হতে হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। আমাদের দফা এক দাবি এক শেখ হাসিনার পদত্যাগ। তবে সাম্য ও সমৃদ্ধির বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে।

আজ  শনিবার বিকেলে বরিশাল শহরে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল আয়োজিত তারুণ্যের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ভোটাধিকার প্রয়োগ, ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার ও শিক্ষা উপকরণের দাম কমানোসহ বিভিন্ন দাবিতে এই সমাবেশ হয়। কীর্তনখোলা নদীর পাড়ে বেলস পার্ক মাঠে বিকেল চারটায় কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয় সমাবেশ। সমাবেশে নতুন ভোটার ও তরুণদের উদ্দেশ্যে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

পূর্ব নির্ধারিত এই সমাবেশ উপলক্ষে সকাল থেকেই বেলস পার্কে জড়ো হন দলটির নেতাকর্মীরা। পটুয়াখালী, ভোলা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা জেলা থেকে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে আসা যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে অবস্থান নিয়ে দুপুরের মধ্যেই মাঠে জড়ো হন। তারা বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিসহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। সমাবেশ স্থলের চারপাশে অসংখ্য ব্যানার পোস্টার ও ফেস্টুন টাঙানো হয়। একইদিনে বেলস পার্ক থেকে আধা কিলোমিটার দূরে নগর ভবন ও শহীদ মিনারের সামনে যুবলীগের পাল্টাপাল্টি সমাবেশকে করেছে। এ নিয়ে নগরজুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছিল।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের সভাপতিত্বে ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি মনিরুল ইসলাম খান ফারুক, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক, ছাত্রদলের সহ-সভাপতি তানজিল হাসান, অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডি, কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা। 

এছাড়াও বিগত আন্দোলনে পুলিশ ও সন্ত্রাসী হামলায় নিহত, গুমের শিকার পরিবারের সদস্য এবং তরুণ সমাজের কয়েকজন প্রতিনিধি তথা চাকুরি থেকে বঞ্চিত এবং পেশাগত দায়িত্ব পালনে হয়রানি ও বঞ্চনার শিকার কয়েকজন বক্তব্য রাখেন। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহর পক্ষে একটি বিশাল মিছিল এবং যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা বিএনপির সভাপতি এবং জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ইমরানুল হক চাকলাদারের পক্ষ থেকে একটি মিছিল বিশাল এই তারুণ্যের সমাবেশে উপস্থিত হয়েছে।

যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন,বর্তমান সরকারের আমলে প্রায় ৪ কোটি ৭০ লাখ নতুন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ না করার কারণে অনেক মেধাবীদের চাকুরি হচ্ছে না। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কথা বললে গুম খুন করা হচ্ছে। জামালপুরে একজন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। কারণ তিনি আওয়ামী লীগের সত্য ঘটনা প্রকাশ করেছেন। ৩০ জন সাংবাদিককে এ পর্যন্ত হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ দিনের ভোট রাতেই করে। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সরকারের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত কেউ ঘরে ফিরবো না মর্মে উপস্থিত সব নেতাকর্মীকে শপথবাক্য পাঠ করিয়ে টুকু বলেন, আমরা অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাবোনা। এসময় বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল কারাবন্দী নেতাকর্মীর মুক্তি দাবি করেন তিনি।

স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান বলেন, আমাদের তরুণ সমাবেশ ঘিরে সারাদেশে তরুণ প্রজন্মের মাঝে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। কোনো বাধা বিপত্তি তরুণদেরকে দমাতে পারেনি। ইনশাআল্লাহ তরুণ প্রজন্মের হাত ধরেই বর্তমান অবৈধ সরকারের পতন ঘটাবে।