প্রয়াত শিল্পমন্ত্রী নয়া মিয়াকে আজও ভোলেনি মানিকগঞ্জবাসী
প্রথম নিউজ, অনলাইন: প্রয়াত সাবেক শিল্পমন্ত্রী শামসুল ইসলাম খান নয়া মিয়া থাকবেন মানিকগঞ্জবাসীর হৃদয়ে অনন্তকাল ধরে। সিংগাইর তথা দক্ষিণ মানিকগঞ্জের উন্নয়নে যে মানুষটি আজীবন নিরালসভাবে কাজ করে গেছেন তাঁর নাম শামসুল ইসলাম খান নয়া মিয়া। তিনি নয়া মিয়া হিসেবে মানুষের কাছে বেশি পরিচিত ছিলেন। সৎ মনোভাবপূর্ণ একজন আদর্শিক রাজনীতিবিদ হিসেবে দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের কাছে বেশ সুনাম ছিল তাঁর।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিভাবান এই রাজনৈতিক নেতা জীবদ্দশায় নিজ এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে রেখে গেছেন অনন্য ভূমিকা। দক্ষিণ মানিকগঞ্জের এমন কোনো এলাকা নাই যেখানে শামসুল ইসলাম খাঁন নয়া মিয়ার উন্নয়নের ছোয়া নেই। সব জায়গায় রয়েছে তাঁর উন্নয়নের স্মৃতি চিহ্ন। তিনি কখনো দুর্নীতিবাজ ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেননি।
কোনো মানুষ নির্যাতন ও অন্যায় অত্যাচারের শিকার হলে তিনি তা কঠোর হস্তে দমন করতেন। সত্য ও ন্যায়ের প্রতি সব সময় ছিলেন অবিচল। কখনো অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি তিনি। আজ ২২ জানুয়ারি এই কীর্তিমান মহান মানুষটির ১৯তম মৃত্যুবাষির্কী।
২০০৬ সালের এই দিনে না ফেরার দেশে পারি জমান বর্ষিয়ান এই রাজনীতিবিদ। এই ক্ষণজন্মা মানুষটি ১৯৩০ সালে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার চারিগ্রাম গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
শামসুল ইসলাম খান নয়া মিয়া প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। এই দল থেকে ১৯৯১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত একটানা ৪ বার জাতীয় সংসদের এমপি নির্বাচিত হন। ছিলেন শিল্পমন্ত্রীও।
আওয়ামী মুসলীম লীগের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খাঁন ভাসানী ও বহু দলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা জিয়াউর রহমানের পরিবারসহ জাতীয়তাবাদী আদর্শের দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে ছিল তাঁর গভীর সম্পর্ক। তিনি ছিলেন দেশের দুর্দিনের কান্ডারি। ভূমিকাও রেখেছেন দেশের সংকটময় মুহূর্তে। মৃত্যুর ১৯ বছর পরও নয়া মিয়ার অভাব অনুভব করেন মানিকঞ্জবাসী। তাঁর উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সিংগাইর তথা দক্ষিণ মানিকগঞ্জের আনাচে-কানাচে।
রাজধানী ঢাকার অতি কাছের সিংগাইর উপজেলাটি এক সময় ছিল অত্যন্ত অবহেলিত। জেলা সদর ও রাজধানী ঢাকা থেকে ছিল সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। এমনকি ছিল না উপজেলা সদরের সঙ্গে ১১টি ইউনিয়নের সরাসরি কোনো যোগাযোগ ব্যবস্থা। স্কুল-কলেজ, ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো ছিল একেবারেই অনুন্নত। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরের কোনো লোক সিংগাইরে তেমন একটা আসতো না। অন্য এলাকার সম্ভ্রান্ত কোনো পরিবার এই অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে আত্মীয়তা করতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগতো। নয়া মিয়া ৯১ সালে এমপি হওয়ার পর দক্ষিণ মানিকগঞ্জের উন্নয়নের দ্বার উন্মোচিত হয়। এরপর থেকে পাল্টে যেতে থাকে এলাকার উন্নয়ন চিত্র। তিনি রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ করে উপজেলা সদরের সঙ্গে ১১টি ইউনিয়নের সরাসরি সংযোগ স্থাপন করেন। দক্ষিণ মানিকগঞ্জবাসীর বহু কাঙ্ক্ষিত ধলেশ্বরী নদীর ওপর ভাষা শহীদ রফিক সেতু নির্মাণ করেন তিনি। সেতুটি নির্মাণের মাধ্যমে রাজধানীর সঙ্গে সিংগাইর তথা দক্ষিণ মানিকগঞ্জবাসীর সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হয়। জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হেমায়েতপুর-সিংগাইর-মানিকগঞ্জ সড়কটি ছিল অত্যন্ত নাজুক অবস্থা। সড়কটি সম্প্রসারণ ও বিভিন্ন স্থানে ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ করে জেলাবাসীর যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটান তিনি। এ ছাড়া তার আমলে ধলেশ্বরী নদীর ওপর সিরাজপুর সেতু, তালেবপুর ইসলামনগর সেতু, কালিগঙ্গা নদীর ওপর জামশা সেতু, বাস্তা-মানিকনগর সড়ক, সিংগাইর চারিগ্রাম সড়ক, বালিরটেক সড়ক, মানিকনগর-সিরাজপুর সড়ক, ভূমদক্ষিণ-খাসেরচর সড়ক, খাসেরচর ধলেশ্বরী নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণ, সায়েস্তা-বরুন্ডী ভায়া চারিগ্রাম সড়ক, অসংখ্য ছোট বড় রাস্তা, ব্রিজ-কালভার্ট, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন ও বহু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মিত হয়। বিদ্যুতায়ন করা হয় সিংগাইর তথা দক্ষিণ মানিকগঞ্জের অধিকাংশ এলাকা। তিনি যেমন এলাকার মানুষকে ভালোবাসতেন তেমনি জনগণও তাকে খুব পছন্দ করতেন। এর প্রতিদানস্বরূপ শামসুল ইসলাম খান নয়া মিয়াকে একটানা ৪ বার এমপি নির্বাচিত করেছেন দক্ষিণ মানিকঞ্জবাসী।
২০০৬ সালের ২২ জানুয়ারি শামসুল ইসলাম খান নয়া মিয়ার মৃত্যুতে শোকে স্তব্দ ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন সিংগাইর তথা মানিকগঞ্জের কর্মচঞ্চল মানুষ। শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে মরহুমের বাসায় ছুটে যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ সর্বস্তরের মানুষ। সর্বজন শ্রদ্ধেয় এই প্রয়াত নেতাকে এখনো ভোলেনি মানুষ। প্রতি বছরই দলীয় ও পারিবারিকভাবে পালন করা হয় তার মৃত্যুবার্ষিকী। এবারও এই বর্ষিয়ান রাজনৈতিক নেতার স্মরণে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে নিজ দল ও তার পরিবারবর্গ। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মরহুমের কবর জিয়ারত, বিভিন্ন মসজিদ ও ঢাকা এবং গ্রামের বাড়িতে কোরআন খানি, আলোচনা সভা এবং দোয়া মাহফিলের।
মানিকগঞ্জ তথা দেশবাসীর নিকট শামসুল ইসলাম খান নয়া মিয়ার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে তার সুযোগ্য সন্তান মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার মাঈনুল ইসলাম খান শান্ত বলেন, আমার বাবা দক্ষিণ মানিকগঞ্জ নিয়ে উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা করেছিলেন। তার সেই মহাপরিকল্পনার অনেক কাজ এখনো হয়নি। কখনো সময় সুযোগ আসলে বাবার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত ও তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে দক্ষিণ মানিকগঞ্জকে সবার জন্য বাসযোগ্য একটি আধুনিক উন্নত শান্তির জনপদ হিসেবে গড়ে তুলব।