প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদতবার্ষিকী আজ

প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদতবার্ষিকী আজ

প্রথম নিউজ, অনলাইন: বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা, সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৮১ সালের এইদিনে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে একদল বিপথগামী সৈনিকের হাতে তিনি শাহাদাতবরণ করেন। প্রয়াত প্রেসিডেন্টের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে আটদিনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিএনপি। কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় নাম। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন তিনি। এরপরই শুরু হয় মুক্তির সংগ্রাম। জেড ফোর্সের কমান্ডার হিসেবে নিজেও ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে। মুক্তিযুদ্ধের পর নানা ঘাত পেরিয়ে দায়িত্ব পান রাষ্ট্র পরিচালনার। দায়িত্ব পালনের সংক্ষিপ্ত সময়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন দেশের মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীকে। নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন একজন বিশ্বনেতা হিসেবে।

১৯৩৬ সালের ১৯শে জানুয়ারি বগুড়ার গাবতলীর বাগবাড়ীর এক বনেদি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন জিয়াউর রহমান। তার পিতা রসায়নবিদ মনসুর রহমান ও মা জাহানারা খাতুন রানী। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয় জিয়াউর রহমানের ডাক নাম কমল। ১৯৫৩ সালে তিনি যোগ দেন তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার হিসেবে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। দায়িত্ব পালন করেন মুক্তিযুদ্ধের একটি স্বতন্ত্র সেক্টরের। তার নামে গড়ে ওঠে জেড ফোর্স। ৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ২৫শে আগস্ট তিনি সেনাবাহিনী প্রধান নিযুক্ত হন। ৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থানে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে অধিষ্ঠিত হন জিয়াউর রহমান। ৭৬ সালের ২৯শে নভেম্বর প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি। এরপর জিয়াউর রহমান ৭৭ সালের ২১শে এপ্রিল প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন। তার প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি তিনবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল। ১৯৮১ সালের ৩০শে মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে বিপথগামী একদল সেনা সদস্যের হাতে নির্মমভাবে শাহাদাত করণ করেন তিনি। 

রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনকালে জিয়াউর রহমান তুমুল জনপ্রিয় নেতায় পরিণত হয়েছিলেন। তার হাত ধরেই দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু করে। খালকাটা কর্মসূচি ছিল তার এক যুগান্তকারী উদ্যোগ। ১৯ দফা কর্মসূচি নিয়ে তিনি দেশ গড়ার যে বৈপ্লবিক ধারার সূচনা করেছিলেন তা থেমে যায় ১৯৮১ সালের ৩০শে মে।  জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক বাণীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জিয়াউর রহমানের অম্লান স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বলেন, শহীদ জিয়ার মহান আদর্শ, দর্শন ও কর্মসূচি আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুসংহতকরণ, বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং দেশীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতির রক্ষাকবচ। জাতীয় জীবনের সকল সংকট, সংগ্রাম ও বিনির্মাণে শহীদ জিয়ার প্রদর্শিত পথ ও আদর্শ বুকে ধারণ করেই আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে এবং জাতীয় স্বার্থ, বহুমাত্রিক গণতন্ত্র এবং জনগণের অধিকার সুরক্ষায় ইস্পাতকঠিন গণঐক্য গড়ে তুলতে হবে।

কর্মসূচি: ঈদুল আজহার কারণে এবার জিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কর্মসূচি কিছুটা সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। গতকাল রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়, আজ সকাল সাড়ে ১০টায় শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং মসজিদে মসজিদে গণদোয়া অনুষ্ঠিত হবে।

ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের উদ্যোগে বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডে দুস্থদের মধ্যে চাল-ডালসহ ও বস্ত্র বিতরণ করা হবে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ছাড়াও সারা দেশে জেলা ও উপজেলা-থানা-পৌর ইউনিটগুলোও জিয়াউর রহমানের স্মরণে আলোচনা সভা, দুস্থদের মধ্যে খাবার ও বস্ত্র বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।

দুইদিন নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়সহ সারা দেশে দলীয় কার্যালয়ে বিএনপি’র পতাকা অর্ধনমিত ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। বিএনপিসহ অঙ্গসহযোগী সংগঠনগুলো জিয়াউর রহমানকে নিয়ে পোস্টার প্রকাশ করেছে এবং বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে দলটি।