প্রেমের ফাঁদের ফেলে না’গঞ্জের কিশোরীকে ভারতে পাচার পতিতালয়ে বিক্রির চেষ্টা
এ ঘটনায় পরিবারের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়ে পাচারকৃত ওই কিশোরীকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনার আশ্বাস দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।
প্রথম নিউজ, নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জ শহরের গলাচিপা এলাকার এক কিশোরীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ভারতে পাচারের পর পতিতালয়ে বিক্রির চেষ্টা করা হয়েছে। বিষয়টি বুঝতে পেরে পালিয়ে সেখানকার পুলিশের কাছে আশ্রয় নিয়ে সেই পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পায় ওই কিশোরী। এ ঘটনায় পরিবারের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়ে পাচারকৃত ওই কিশোরীকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনার আশ্বাস দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। পাচার হওয়া কিশোরী
স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। দুই ভাই বোনের মধ্যে সে বড়।
বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একমাত্র মেয়ের শূণ্যতায় পাগল প্রায় মা। গত এক মাস ধরে মেয়ের ছবি দেখে দিন-রাত চোখের পানি ফেলছেন আর বিলাপ করছেন। এ অবস্থায় ভেঙে পড়েছে পুরো পরিবারটি। কারো সান্তনাই কান্না থামাতে পারছে না তার। মেয়েকে ফিরে পাবার আশায় বিভিন্ন জনের কাছে ছুটছেন তিনি। কিশোরীর মায়ের অভিযোগ, গত ১০ এপ্রিল (১৮ রমজান) মার্কেটে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয় মুক্তা। পরে বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও মেয়েটির কোন সন্ধান মেলেনি। এদিকে, গত ৫ মে ভারতের দিল্লীতে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস থেকে ফোন আসে নিখোঁজ মুক্তার পরিবারের কাছে।
দূতাবাস থেকে জানানো হয়, প্রতিবেশী যুবক নাঈম বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মুক্তাকে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে নাঈমের মা ফারজানার তত্ত্বাবধানে
মুন্সি ডেকে তাদের কথিত বিয়ে পড়ানো হয়। কিশোরীর মা আরও জানান, এ ঘটনার কিছুদিন পর চিকিৎসার কথা বলে মুক্তাকে জয়পুরহাট সীমান্ত পেরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ভারতে। সেখানে একটি পতিতালয়ে মুক্তাকে বিক্রির চেষ্টা করেন নাঈমের মা ফরাজানা। তবে বিষয়টি বুঝতে পেরে কিশোরী মুক্তা কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে আশ্রয় নেয় পুলিশের কাছে। ধরিয়ে দেয় মানব পাচারকারী চক্রের সদস্য ফারজানাকে। এরপর ভারতের পুলিশ ওই
কিশোরীকে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি (সিডব্লিউসি) এর নির্দেশে চিকিৎসা দিয়ে হোম সেলে পাঠায়।
এ ঘটনার পর গত ১০ মে সদর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন মুক্তার পরিবার। বিষয়টি জানাজানি হলে নিজেদের সন্তানের নিরাপিত্তার বিষয়ে আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়েন এলাকাবাসীও। পাচারকৃত কিশোরীকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনাসহ পাচারকারী চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান তারা।
এদিকে ভারতের দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করে কিশোরীকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার সব ধরণের প্রক্রিয়া শুরুর কথা জানান স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ বলেন, মেয়েটিকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আমরা তার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করছি। ব্র্যাক নারী ও শিশু পাচাররোধে কাজ করে। তাদের মাধ্যমে ভারতের দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করে মেয়েটিকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। আমরা সেই চেষ্টা করছি।
এ ব্যাপারে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) চাইলাউ মারমা বলেন, ভিকটিমের পরিবারের কাছ থেকে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। সেটা মামলা হিসেবে রেকর্ড করার প্রক্রিয়া চলছে। পাচার হওয়া কিশোরীকে কিভাবে দেশে ফরিয়ে আনা যায় সে ব্যাপারে আমরা চেষ্টা করছি। সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সাথে যোগাযোগ করে মেয়েটিকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করব। এর পাশাপাশি যারা মেয়েটিকে পাচার করেছে তাদের গ্রেপ্তার
করে আইনের আওতায় আনা হবে।