পৃথিবীর কোথাও ফ্যাসিস্টদের পুনরুত্থান হয়নি, বাংলাদেশেও হবে না: রিজভী

বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহীদ তাহমিদ ও শহীদ মাসুদ রানার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ মন্তব্য করেন।

পৃথিবীর কোথাও ফ্যাসিস্টদের পুনরুত্থান হয়নি, বাংলাদেশেও হবে না: রিজভী

প্রথম নিউজ, অনলাইন: পৃথিবীর কোথাও ফ্যাসিস্টদের পুনরুত্থান হয়নি, বাংলাদেশেও হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহীদ তাহমিদ ও শহীদ মাসুদ রানার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ মন্তব্য করেন। এ সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’র প্রধান পৃষ্ঠপোষক তারেক রহমানের নির্দেশনায় আর্থিক সহযোগিতা করা হয়।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘পৃথিবীর কোথাও ফ্যাসিস্টদের পুনরুত্থান হয়নি, এরা সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। ইতালি-জার্মানিসহ পৃথিবীর কোথাও গণতন্ত্রকামী মানুষ ফ্যাসিস্টদের পুনরুত্থান হতে দেয়নি।  তাদের পুনরুত্থান হলে তো আন্দোলনকারী যারা চোখ হারিয়ে অন্ধ হয়েছে, হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ হারিয়ে পঙ্গু হয়েছে তাদেরকে নির্বিচারে হত্যা করবে। গণতন্ত্রের পক্ষে যারা সোচ্চার ছিলেন; যাদের গুম, নির্যাতন ও গায়েবি মামলায় বন্দি করে রাখা হয়েছিল, তাদের এবং তাদের পরিবারের ওপর নেমে আসবে শেখ হাসিনার প্রাণবিনাসী কর্মসূচি।’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘ মাসুদ রানার রোজগার দিয়ে চলতো তার পরিবার। তার স্ত্রী অসহায়। তার শিশু কন্যাটি আর্তনাদ করছে। তাহমিদ এম এ পাস করলে তার চাকরি হতো। তার পরিবার নিম্ন মধ্যবিত্ত। সেমি বস্তির মতো জায়গায় তারা বসবাস করে। কত স্বপ্ন নিয়ে তারা লেখাপড়া করেছে। এরা তো নিজের জীবন দিয়ে গণতন্ত্র কিনেছে, নিজের রক্ত দিয়ে এরা গণতন্ত্র কিনেছে। এটা যেন ব্যর্থ না হয়।  আপনাকে অনুরোধ করব-যেসব পরিবারে শহীদ হয়েছে তাদের কোনো ভাই বা স্ত্রী যেই থাকুক তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি কোনো চাকরি যেন দেয়া হয়। এটা খুব জরুরি প্রয়োজন।’

সমবায় ব্যাংকে জমা রাখা ৭৩৯৮ ভরি সোনার ভুয়া মালিক সাজিয়ে বিক্রি করে দিয়েছেন ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান, যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের (দক্ষিণ) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ মহি উল্লেখ করেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘কী দেশ ছিল এটা! অনাচার, অবিচার লুটপাট-এসবের লাইসেন্স দিয়ে দিয়েছিল শেখ হাসিনা, তার কথাই ছিল আমার ক্ষমতা ঠিক রেখে তোরা যা পারিস কর। শেখ হাসিনা তো প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না, তিনি দস্যু ও মাফিয়া সিন্ডিকেটের প্রধান ছিলেন। পুলিশ-সিভিল প্রশাসন প্রত্যেক জায়গায় শেখ হাসিনার আশীর্বাদপুষ্টরা শতশত কোটি টাকার মালিক। প্রশাসনিক কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম খানের গ্রামের বাড়িতে তার ছয় তলা বাড়ি। এরা এখন বিভিন্ন পর্যায়ে আছে। তারা তো শেখ হাসিনার পক্ষেই কাজ করবে।’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘যারা প্রশাসন পরিচালনা করছেন, তাদের নিয়ে নানা কথাবার্তা শুনছি। এটা দুঃখজনক। বিপ্লবী সরকার পৃথিবীর দেশে দেশে দেখেছি। এসব সরকার তড়িৎ গতিতে সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে দূষিত রক্ত বের করে দেয়। কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমরা বিপ্লবী সরকার বলি। তাহলে কী করে এই সমস্ত ভয়ঙ্কর, দুর্নীতিবাজ ও টাকা লুণ্ঠনকারীরা এখনো প্রশাসনে অবস্থান করতে পারে?’

শেখ হাসিনা সরকার বিশ্বের কোন দেশের সঙ্গে কী অসম চুক্তি করেছে তা জনগণের সামনে প্রকাশ করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জোর দাবি জানান রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘অসম চুক্তিসমূহ যদি জনসম্মুখে প্রকাশ করা না হয়, তাহলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যোগ্যতা এবং দক্ষতা নিয়ে মানুষ প্রশ্ন করা শুরু করবে। এই পরিস্থিতি যেন তৈরি না হয়, সে ব্যাপারে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে।’

এ সময় বিএনপি নেতা বজলুল বাছিত আঞ্জু ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’র আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।