নির্বাচন উঠে গেছে লোক-দেখানো অনুশীলন হচ্ছে: শাহদীন মালিক

গতকাল সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত ‘ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের গতিপ্রকৃতি এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের তথ্যের বিশ্লেষণ উপস্থাপন’ শীর্ষক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন মন্তব্য করেন। 

নির্বাচন উঠে গেছে লোক-দেখানো অনুশীলন হচ্ছে: শাহদীন মালিক

প্রথম নিউজ, অনলাইন: দেশের নির্বাচন উঠে গেছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেছেন, এখন নির্বাচন অনুষ্ঠানের কিছু লোক-দেখানো অনুশীলন  হচ্ছে। গতকাল সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত ‘ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের গতিপ্রকৃতি এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের তথ্যের বিশ্লেষণ উপস্থাপন’ শীর্ষক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন মন্তব্য করেন। 

শাহদীন মালিক বলেন, নির্বাচন শুধু নির্বাসনেই যায়নি, আমি বলবো নির্বাচন-ই নাই। নির্বাচন উঠে গেছে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের কিছু লোক দেখানো অনুশীলন হচ্ছে। ভোটের যে হার দেখানো হচ্ছে মানুষ তাও বিশ্বাস করছে না। আমরা সামরিক শাসকের অনেক সমালোচনা করি, কিন্তু সামরিক শাসকরা যে স্থানীয় নির্বাচন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে গেছে তা এখনো আঁকড়ে ধরে আছি। স্থানীয় সরকারের ওপর কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্যই এই ব্যবস্থা এখনো চালু রাখা হয়েছে। জমিদারি ব্যবস্থার প্রতি আমাদের যে বাসনা নির্বাচনের মাধ্যমে সে বাসনাই চরিতার্থ করা হচ্ছে বলে আমি মনে করি। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকারের নামকাওয়াস্তে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়। এ অবস্থা যত দিন চলবে, ততদিন উন্নয়নের গলাবাজি হবে, কিন্তু জনগণের কোনো উন্নয়ন হবে না।

লিখিত প্রবন্ধ পাঠ করে সুজনের প্রধান কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার বলেন, আইন অনুযায়ী রাজনৈতিক দলভিত্তিক ভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনেকটা নির্দলীয় অবয়ব পেয়েছে। কেননা ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশ নিচ্ছে না। দলীয় কৌশলের কারণে দলটির নেতৃবৃন্দ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। প্রশ্ন হলো কেন দলটি দলীয় প্রতীক ছাড়া এই নির্বাচন করছে? ধারণা করা হয় যে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আগে থেকেই ভেবেছিলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলসহ তাদের সমমনা দলগুলো এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে না। সেক্ষেত্রে ভোট পড়ার হার কম হতে পারে। এই আশঙ্কা থেকেই অধিক সংখ্যক প্রার্থী যেন নির্বাচনে অংশ নেয়, প্রার্থী বেশি থাকার কারণে ভোট যেন বেশি পড়ে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের আগ্রহী নেতৃবৃন্দ যেন স্বতন্ত্র পরিচয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়, নৌকা প্রতীকের বিপক্ষে স্থানীয় পর্যায়ের দলীয় বিভাজন যেন দৃষ্টিকটু ভাবে দৃশ্যমান না হয় ইত্যাদি কারণে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নির্দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার কৌশল নিয়েছে। বেশির ভাগ উপজেলাতেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে মূলত আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ। 

৪৫৯টি উপজেলার ১,৮৭৪ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর তথ্য তুলে ধরে দিলীপ কুমার সরকার বলেন, প্রার্থীদের মধ্যে উচ্চ শিক্ষিতের শতকরা হার ৫৬.১৯ শতাংশ। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি অতিক্রম না করা প্রার্থীর শতকরা হার ১৪.৩৫ শতাংশ। সর্বমোট ১,৮৭৪ জন প্রার্থীর মধ্যে ১ হাজার ২৬৮ জন (৬৭.৬৬%) ব্যবসায়ী, ২১১ জন (১১.২৬%) কৃষিজীবী, ৫২ জন (১২.১৯%) চাকরিজীবী এবং ১১২ জন (৫.৯৮%) আইনজীবী। প্রার্থীর মধ্যে ৩৮৫ জনের (২০.৫৪%) বিরুদ্ধে বর্তমানে, ৬০৭ জনের (৩২.৩৯%) বিরুদ্ধে অতীতে এবং ২১০ জনের (১১.২১%) অতীতে মামলা ছিল এবং বর্তমানেও আছে। সর্বমোট ১ হাজার ৮৭৪ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৬১ জনের (৮.৫৯%) প্রার্থীর বার্ষিক আয় ৫০ লক্ষাধিক। বছরে কোটি টাকার অধিক আয় করেন ৭৬ জন প্রার্থী (৪.০৬%)। ৮৩৭ জনের (৪৪.৬৬%) প্রার্থীর বার্ষিক আয় ৫ লাখ টাকার কম। সর্বমোট ১ হাজার ৮৭৪ জন প্রার্থীর মধ্যে ৬১১ জনের (৩২.৬০%) প্রার্থীর বার্ষিক আয় কোটি টাকার অধিক। ৫ কোটি টাকার অধিক সম্পদের অধিকারী রয়েছেন ১৪৭ জন (৭.৮৪%)। ৭১১ জনের (৩৭.৯৪%) প্রার্থীর বার্ষিক আয় ২৫ লাখ টাকার কম। প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সর্বমোট ১ হাজার ৮৭৪ জন প্রার্থীর মধ্যে ৫২৬ জন (২৮.০৭%) ঋণ গ্রহীতা। 

সঞ্চালকের বক্তব্যে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচনে যে উৎসাহ-উদ্দীপনা ও উৎসবমুখর পরিবেশ তার কোনো কিছুই এই নির্বাচনে পরিলক্ষিত হচ্ছে না। তাই ধাপে ধাপে সংবাদ সম্মেলন না করে শেষ ধাপের পর একটি সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে। আমার মতে এ নির্বাচনটি হলো নাই-এর নির্বাচন-ভোটার নাই, বিরোধী দল নাই এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাও নাই। নির্বাচন যে নির্বাসনে চলে গেছে এটা তারই প্রতিফলন। এর মূল কারণ হলো আস্থাহীনতা। অতীতের নির্বাচনগুলোর অভিজ্ঞতার ফলে মানুষ নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। 

সুজনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ড. হামিদা হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সুজনের কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস।