Ad0111

নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে ধীরগতি, পাইলটিং অনলাইনে

করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বন্ধ বেড়েছে আরও এক দফা। এতে সহসাই নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়।

নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে ধীরগতি, পাইলটিং অনলাইনে
ফাইল ফটো

প্রথম নিউজ, ঢাকা: নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে কাজ করছে সরকার। এতে শিক্ষাব্যবস্থায় আসবে আমূল পরিবর্তন। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত থাকবে না পরীক্ষা। পিইসি-জেএসসি পরীক্ষাও তুলে দেওয়া হবে। এসএসসিতে থাকবে না বিভাগ বিভাজন। এইচএসসিতে দুই বছরের পরীক্ষা মূল্যায়ন করে দেওয়া হবে চূড়ান্ত ফলাফল। সব শ্রেণিতে জোর থাকবে শিখনপদ্ধতির ওপর। এ বিষয়ে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে পাইলটিং শুরুর কথা থাকলেও সেটা পিছিয়ে নেওয়া হয়েছে ৭ ফেব্রুয়ারি। এরই মধ্যে করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বন্ধ বেড়েছে আরও এক দফা। এতে সহসাই নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও প্রথম ও ষষ্ঠ শ্রেণির নতুন কারিকুলামের পাইলটিং ক্লাস অনলাইনে শুরু করতে নির্দেশনা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। সেভাবে শিক্ষকদের তৈরি করা হচ্ছে বলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) থেকে জানা গেছে।

জানা যায়, বর্তমান শিক্ষাক্রমে একজন শিক্ষার্থীকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ওঠার পরই অনেক চাপ নিতে হয়। পঞ্চম শ্রেণিতে ছয়টি বই পড়লেও ষষ্ঠ শ্রেণিতে তাকে পড়তে হচ্ছে ১২টি বিষয়। এরপর নবম শ্রেণিতে ওঠার পর হতে হয় দিশেহারা। বিজ্ঞান, বাণিজ্য নাকি মানবিক- কোন বিষয়ে পড়বে সেটি নিয়ে পড়তে হয় দ্বিধাদ্বন্দ্বে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অভিভাবক চাপিয়ে দেন তার সন্তান কোন বিভাগ নেবে। নিজের ইচ্ছার কোনো মূল্য থাকে না। নতুন কারিকুলামে সেই বিড়ম্বনা থাকবে না। সৃজনশীল আর নানা ধরনের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শেখানো হবে সব।

নতুন রূপরেখায় মাধ্যমিক পর্যন্ত থাকছে না কোনো বিভাগ বিভাজন। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির সবাইকে পড়তে হবে ১০টি বিষয়। দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ওপরই অনুষ্ঠিত হবে এসএসসি পরীক্ষা। একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বিভাগ পছন্দ করতে হবে। একাদশ শ্রেণি শেষে পরীক্ষা ও দ্বাদশ শ্রেণি শেষে পরীক্ষা নেওয়া হবে। এই দুই পরীক্ষার ফলাফলের সমন্বয়ে তৈরি হবে এইচএসসির ফল।

এছাড়া প্রাথমিকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা থাকছে না। চতুর্থ থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়তে হবে আটটি বই। তবে সব শ্রেণিতেই শিখনকালীন মূল্যায়নেই বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা থাকছে না।

নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের বিষয়ে সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, ২০২২ সালে প্রথম শ্রেণির ৭০টি আর ষষ্ঠ শ্রেণির ৭০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাইলটিং হিসেবে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন কাজ শুরু করা হবে। পাইলটিং শেষে আগামী বছর এ দুই স্তরে পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা হবে নতুন কারিকুলাম। সঙ্গে অন্য স্তরে পাইলটিং শুরু করা হবে।

তিনি বলেন, বর্তমানে স্কুল বন্ধ থাকায় আপাতত অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে পাইলটিং শুরু করা হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর এসব শিক্ষার্থীর ক্লাস নেওয়া হবে অফলাইনে। ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে পাইলটিং শুরু করা হবে। এজন্য নতুন পাঠ্যপুস্তক তৈরি করা হচ্ছে। প্রতি চার মাস পরপর তিন ধাপে বই দেওয়া হবে।

জানা যায়, নতুন কারিকুলাম প্রণয়নে ২০১৭ সালে কাজ শুরু করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। তখন দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের নিয়ে দুটি কমিটি করা হয়। এরপর আবার ১০ জন শিক্ষাবিদ নিয়ে ‘কারিকুলাম ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিভিশন কোর কমিটি’ গঠন করা হয়। ২০২০ সালের শেষ দিকে তারা ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা, প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি’ নামে ১১৪ পৃষ্ঠার রূপরেখা জমা দেয়। এই রূপরেখার ওপর বিশিষ্টজন, শিক্ষাবিদদের মতামত নেয় এনসিটিবি। এরপর তা ন্যাশনাল কারিকুলাম কো-অর্ডিনেশন কমিটির (এনসিসি) কাছে পাঠানো হয়।

বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পরিবর্তিত কারিকুলামে প্রাক-প্রাথমিক পর্যায় থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শতভাগ শিখনকালীন মূল্যায়ন। চতুর্থ থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে ৬০ শতাংশ শিখনকালীন মূল্যায়ন ও ৪০ শতাংশ সামষ্টিক মূল্যায়ন। এছাড়া জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, ধর্ম শিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ে শতভাগ শিখনকালীন মূল্যায়ন থাকবে।

জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, আপাতত অনলাইনে নতুন কালিকুলামের পাইলটিং ক্লাস শুরু করতে শিক্ষামন্ত্রী আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা পাঠ্যবইয়ের মধ্যে কিছু জিনিস রেখেছি, যাতে যে কোনো পরিস্থিতিতে অনলাইনে পড়ানো যায়। এতে শিক্ষার্থীদের বেশি কিছু বোঝানোর নেই। আমরা শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট দিয়েছি। এটিও নতুন কারিকুলামের একটি অংশ। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে কাজ দেওয়া হবে। তারা সেটি করে শিক্ষকদের কাছে জমা দেবে।

‘নতুন কারিকুলামে পড়ার চেয়ে কাজ বেশি। এখানে তেমন বোঝানোর কিছু নেই। কাজের মাধ্যমে সে শিখবে। সে কাজের ওপর তার অভিজ্ঞতা তৈরি হবে। আমরা সেসব নিয়ে কাজ করছি। সারাদিন সে কী করেছে সেটি ডায়রিতে লিখতে বলা হতে পারে। পড়ার সময় জানবে তার কী কী করা উচিত আর সে কী করেছে। প্রতিদিন তার কী কী খাওয়া উচিত আর সে কী খেয়েছে সেটি সে নিজেই বুঝতে পারবে। প্রতিদিন তারা নিজের কাজ নিজে করবে। সেগুলো এখন পাঠ্য হয়ে গেছে। যেগুলো বাসায় রেখেও করা সম্ভব হবে। কিছু কিছু কাজ আছে শিক্ষকরা যদি ফোনেও বলেন তাহলেও সেটি করা সম্ভব।’

শিক্ষামন্ত্রী যেভাবে বলছেন আমরা যদি কিছু কাজও তাদের দিয়ে করাতে পারি তবে সেটি এগিয়ে যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা এরই মধ্যে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। ক্লাসের জন্য প্রতিটি বিষয়ে শিক্ষক নির্দেশিকা দেওয়া হবে। সেখানে কী কী করতে হবে, দেওয়া হবে সে সংক্রান্ত ধারণা। প্রতি সপ্তাহে একদিন কারিকুলাম প্রণয়ন কমিটির সঙ্গে শিক্ষকরা আলোচনায় বসে কোনো সমস্যা থাকলে সেসব নিয়ে আলোচনা করে করা হবে সমাধান।

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নতুন কারিকুলামে এসএসসির আগে কোনো পাবলিক পরীক্ষা থাকছে না। প্রচলিত পদ্ধতিতে পঞ্চম শ্রেণির পিইসি-ইবতেদায়ি, জেএসসি-জেডিসি এই পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই। ২০২৪ সাল থেকে প্রচলিত জেএসসি পরীক্ষা ও ২০২৫ সাল থেকে প্রচলিত পিইসি পরীক্ষাও থাকছে না।

এনসিটিবি থেকে জানা যায়, নতুন কারিকুলামের বই তৈরি হতে দেরি হওয়ায় ১ ফেব্রুয়ারি থেকে পাইলটিং কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সেটি ৭ ফেব্রুয়ারি নেওয়া হয়েছে। এখনো প্রথম ধাপে চার মাসের জন্য প্রথম ও ষষ্ঠ শ্রেণির বই তৈরি করা সম্ভব হয়নি।

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সঙ্গে এক সভায় কারিকুলাম ও শিক্ষক নির্দেশিকার খসড়া চূড়ান্ত করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। বর্তমানে সেসব বই ছাপার কাজ শুরু হয়েছে। ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্কুল-কলেজ ছুটি ঘোষণা করায় এটি বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

তবে পাঠ্যবই নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। অল্পসংখ্যক বই হওয়ায় এক সপ্তাহে ছাপার কাজ শেষ করে সংশ্লিষ্ট স্কুলে পাঠানো শুরু করা হবে বলে দাবি করেছেন এনসিটিবির চেয়ারম্যান।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ তারিক আহসান বলেন, নতুন কারিকুলামে শিক্ষার্থীদের ক্লাসের চেয়ে কাজকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এজন্য ব্লেন্ডেড লার্নিং অনেক জরুরি। কাজের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শিখবে। এটি সে ক্লাসে, বাড়িতে, বন্ধু ও প্রতিবেশীসহ অনেকের কাছ থেকে শিখতে পারবে। শিক্ষকদেরও প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom

 

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

This site uses cookies. By continuing to browse the site you are agreeing to our use of cookies & privacy Policy from www.prothom.news