নেতাকর্মীদের কারাগারে আটকানো খেলায় মেতেছে সরকার: রিজভী
আজ মঙ্গলবার বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: আওয়ামী ফ্যাসিষ্ট সরকার বিএনপি এবং এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতার করে কারাগারে আটকিয়ে রাখা ইত্যাদি সর্বনাশা খেলায় মেতেছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ২০১৮ এর নির্বাচনের প্রাক্কালে যেভাবে নির্বাচনী মাঠ শুণ্য করার কৌশল গ্রহণ করেছিল নিশিরাতের সরকার, বর্তমানে তারই পুনরাবৃত্তি দেখা যাচ্ছে। বিএনপি এবং এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে অদৃশ্য করা, গায়েবী মামলা দেয়া, পাইকারী হারে গ্রেফতার, বাসায় বাসায় হানা দেয়া, পরিবারের লোকজনদের সাথে দুর্ব্যবহার করা, পেন্ডিং মামলায় জেলগেট থেকে বারবার গ্রেফতার করে কারাগারে আটকিয়ে রাখা ইত্যাদি সর্বনাশা খেলায় মেতেছে আওয়ামী ফ্যাসিষ্ট সরকার। মূলত: ২০১৮ এর নির্বাচনটি কোন নির্বাচনই ছিল না, এটি ছিল জনগণের সাথে প্রতারণা এবং ভোটের নামে অভিনব প্রহসন। কারণ ব্যালট বাক্স ভর্তি হয়েছিল আগের রাতের অন্ধকারে। বর্তমান আওয়ামী সরকার অবৈধ ও দখলদার সরকার। আগামী নির্বাচনেও তারা দখলের মহাপরিকল্পনা চুড়ান্ত করছে। আওয়ামী লীগ এমন একটি দলে পরিণত হয়েছে যে দলটি প্রমাণ করে তারা কোন মানবিক পরিবেশ থেকে উৎসারিত নয়। এদের কাছে গণইচ্ছার কোন দাম নেই। এরা এমন একটি নিপীড়ক দল যারা বহু মত ও পথকে শত্রুজ্ঞান করে। তাই ক্ষমতায় এসেই তারা জনগণকে ত্যাজ্য করে দেয়। ক্ষমতায় থাকার উদগ্র লালসা এদেরকে হিংস্র ও রক্তপিপাসুতে পরিণত করে। এরা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক মনে করে। সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনাকে তারা রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ বলে বিবেচনা করে। এ কারণেই বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের লাশ পাওয়া যায় নদী—নালা—খালে—বিলে। অনেকেই নিখোঁজ হয়ে যায় চিরদিনের জন্য। দুর্বিনীত দুঃশাসনের যাঁতাকলে ‘নির্বাচিত সরকার কথা’ টি জনগণকে ভুলিয়ে দেয়া হচ্ছে। মত প্রকাশের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে, সভা—সমাবেশ এমনকি বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের জানাযার অধিকারটুকুও হরণ করা হয়েছে। নরঘাতক সরকার এখন জাতির ঘাড়ে চেপে বসেছে।
তিনি বলেন, একজন নির্বাচন কমিশনার বলেছেন—নির্বাচন কমিশন সংবিধানের বাইরে যাবে না। আপনাদের সংবিধান যে কোথা থেকে নাজিল হয় তা জনগণ জানে। আওয়ামী চেতনায় জারিত কিনা তা পরীক্ষা—নিরীক্ষা ও যাচাই—বাছাই করে নিশিরাতের সরকার নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। সুতরাং সরকারের গানের সুরেই যে তাল দিবে নির্বাচন কমিশন এটাই স্বাভাবিক। বর্তমান নির্বাচন কমিশন ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচনেরই পাঁয়তারা করছে। এরা অবৈধ সরকারের নির্দেশ মানতে নিষ্ঠার সাথে কাজ করছে। নির্বাচন কমিশন এমনই বিশ^স্ত সেবাদাস যে, তারা স্বায়ত্বশাসিত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হলেও প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতাকে হ্রাস করে সেটি শেখ হাসিনার পদতলে অর্পণ করেছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন সংবিধানের কথা বলে শেখ হাসিনাকে সন্তষ্ট করা জন্য। আসলে তারা শেখ হাসিনার নির্দেশে বেআইনী কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বেআইনীভাবে অজ্ঞাত দুটি রাজনৈতিক দলকে রেজিষ্ট্রেশন দিয়েছে যাদের কোন কার্যালয় নেই, দেশজুড়ে তাদের কোন সংগঠন নেই। জেলহাজতে বিএনপিসহ বিরোধী দলের বেশকিছু নেতাকর্মী নিপীড়ণ—নির্যাতনে এবং বিনা চিকিৎসায় ধুকতে ধুকতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। দেশের কারাগুলো শেখ হাসিনার কসাইখানায় পরিণত হয়েছে। চিকিৎসার সুযোগ পাওয়া প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার। অথচ এদের আমলে কারাগারে সবচেয়ে বেশী বিরোধী দলের নেতাকর্মী বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেছে। বন্ধুরা, আজ দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ বছর স্বাধীনতার ঘোষকের সহধর্মিনী, যিনি বিপন্ন গণতন্ত্রকে এক অকুতোভয় নেতৃত্বে বারবার পুনঃরুদ্ধার করেছেন, দেশের আইনের শাসন, সুবিচার এবং মৌলিক মানবাধিকারের প্রতীক ‘গণতন্ত্রের মা’ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় আটক করে রাখা হয়েছে। এই আটক অন্যায়, অবৈধ ও কুৎসিত প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ। শেখ হাসিনার নির্দেশে একটি মিথ্যা মামলায় দেশনেত্রীকে সাজা দেয়া হয়েছে। বন্দী অবস্থায় করা হচ্ছে অমানবিব নিপীড়ণ। তাঁকে উন্নত মানের চিকিৎসা দিতে বাধা দেয়া হচ্ছে। আওয়ামী সরকার দস্যুদলের মতো বন্য আক্রোশের প্রতিফলন ঘটাচ্ছে। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সারাদেশের মানুষ ক্ষোভে—বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, প্যারোলের অনুমতি পাওয়া সত্ত্বেও মায়ের লাশ দেখতে দেয়া হয়নি বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী জনাব আব্দুস সালাম পিন্টুকে। প্যারোলে মুক্তির সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরেও জেলগেটে গাড়ীতে উঠানোর সময় তাকে কারাগারে আবার ফেরত পাঠানো হয়। উপরের নির্দেশেই নাকি তাকে মায়ের জানাযায় অংশ নিতে দেয়া হয়নি। আমি এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাচ্ছি।
সারাদেশে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশ বাহিনী কর্তৃক হামলা, মামলা ও গ্রেফতারের বিবরণ তুলে ধরে রিজভী জানান, বিএনপির সহ ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক হক মিলনকে ধানমন্ডি থানা পুলিশ গ্রেফতার করেছে। কুমিল্লা দক্ষিণ জেলাধীন মুরাদনগর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সরোয়ার আলমকে গত ১৩ আগস্ট সকাল ১১টায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যায়। এছাড়াও ১৫নং নবীপুর পশ্চিম ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মোঃ সবুর খান ও ১৫নং নবীপুর পশ্চিম ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক মোঃ এমরানকে পুলিশ গ্রেফতার করে। সাতক্ষীরা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সোহেল আহমেদ মানিক, সদর উপজেলার আহবায়ক গোলাম সরোয়ার এর নামে মিথ্যা ও গায়েবী মামলা দায়ের করেছে। বাগেরহাট জেলা মোল্লাহাট থানা বিএনপির সদস্য সচিব মোঃ জাহিদ মিয়া, ফকিরহাট থানা বিএনপি নেতা মনি মেম্বার, সেলিম মল্লিক, যুবদল নেতা সাদ্দাম মোল্লা ও মোঃ কামরুল ইসলামকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। গত ২৯ জুলাই ২০২৩ মানিকগঞ্জ জেলা সাটুরিয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক মহসিনউজ্জামান—কে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলা আশুগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক আতাউর রহমান বাবুলকে গতকাল ৯ আগস্ট পল্লবী থানা পুলিশ গ্রেফতার করেছে। পিরোজপুর জেলা নাজিরপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবু হাসান খাঁনকে আইসিটি মামলায় বিনা কারনে কারান্তরীণ রাখা হয়েছে। সিরাজগঞ্জ জেলা সলঙ্গা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীমকে মিরপুর বাংলা কলেজের এক মামলায় পল্লবী থানা পুলিশ গ্রেফতার করেছে। রূপনগর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক কাউছার হামিদকে গত ৯ আগস্ট রাতে পল্লবী থানা পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ১১ আগস্ট ২০২৩ সকালে বাগেরহাট জেলা মোংলা পৌর মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ফাতেমা বেগমের বাড়িতে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ভাংচুর, তার সন্তান ও আত্মীয়স্বজনদের মারধর করে। এসময় গুরুতর আহত হয় ফাতেমার মা রাহেলা বেগম, বোন মিনু আক্তার, ফাতেমার নানী অজুফা বেগমসহ বেশ কয়েকজন। আহতরা সকলেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। সোনারগাঁও থানা বিএনপির উপদেষ্টা ও ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মজিবুর রহমান ভূঁইয়া, বারদী ইউনিয়ন বিএনপি নেতা মুছা মেম্বার, সোনারগাঁও পৌরসভা তাঁতীদলের আহবায়ক আকবর মিয়া, থানা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা স্বাধীন রহমান মোল্লাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। টাঙ্গাইল শহর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও ৬নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ সেলিম রেজাকে ১০ আগস্ট রাতে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হত্যার উদ্দ্যেশে বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করে। ১৪ আগস্ট ওয়ারী থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কে এস হোসেন টমাস, গেন্ডারিয়া থানাধীন ৪৬নং ওয়ার্ড বিএনপির প্রচার সম্পাদক মোঃ সোহাগকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ২৮ ও ২৯ জুলাই ২০২৩ তারিখ হতে অদ্যাবধি পর্যন্ত বিএনপির প্রায় ৮৫০ জনকে আহত করে গ্রেফতার কওে প্রায় ৫৫০ জন।