নাটোরে কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত বিএনপি নেতার হাত-পা

সমাবেশে হামলায় বিএনপির নির্বাহী কমিটির বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক এবং রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলসহ ৭ জন আহত হয়েছেন।

নাটোরে কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত বিএনপি নেতার হাত-পা

প্রথম নিউজ, অনলাইন: নাটোরে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে বিএনপির সমাবেশে যাওয়ার পথে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. শহিদুল ইসলাম বাচ্চুকে কুপিয়েছে যুবলীগের নেতাকর্মীরা। এতে তার দুই হাতের কবজি ও পায়ের গোড়ালি ক্ষতবিক্ষত হয়ে ঝুলে পড়ে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এছাড়া সমাবেশে হামলায় বিএনপির নির্বাহী কমিটির বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক এবং রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলসহ ৭ জন আহত হয়েছেন। পটুয়াখালীতেও বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে হামলা হয়েছে। এতে ৫ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এছাড়া বাগেরহাটে পুলিশি বাধায় দলটির সমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়।

নাটোর : সকাল সাড়ে ৯টায় শহরের পশ্চিম আলাইপুরে জেলা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এদিন সকাল থেকেই আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্যের অনুসারীরা মোটরসাইকেলবহর নিয়ে এলাকায় শোডাউন দিতে থাকে। সকাল ৯টায় জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চু শহরের ফৌজদারিপাড়ার নিজ বাসা থেকে বিএনপি অফিসে যাওয়ার সময় নাটোর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করে এমপি সমর্থিত যুবলীগের নেতাকর্মীরা। বাচ্চুকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে রক্তাক্ত করে রাস্তার কাদামাটিতে ফেলে যায় তারা। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার দুই পায়ের গোড়ালি ও দুই হাতের কবজি ক্ষতবিক্ষত হয়ে ঝুলে পড়ে। সমাবেশে আসার পথে জেলা শ্রমিক দলের দপ্তর সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিক ও পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সাব্বির হোসেন চপলকেও মারধর করে হামলাকারীরা। পরে সমাবেশ শুরু হলে পুলিশের সামনেই হামলা করা হয়। এতে বুলবুলসহ আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে রয়েছেন পৌর বিএনপির ৫নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক হিপলুও।

এছাড়া সমাবেশে যোগ দিতে আসা আরও অনেক নেতাকর্মীর ওপর শহরের বিভিন্ন স্থানে হামলা করা হয়েছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজ বলেন, যারা হামলা করেছে তারা সরকারি দলের চিহ্নিত সন্ত্রাসী। নাটোরে একের পর এক হামলার পরও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় এসব সন্ত্রাসী সাহস পাচ্ছে। হামলার সময় পুলিশ নির্লিপ্ত থাকারও অভিযোগ করেন তিনি। সমাবেশের সময় হামলাকারীরা বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলির অভিযোগ করেছেন যুগ্ম সম্পাদক ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহিন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা যুবলীগের সভাপতি বাসিরুর রহমান খান চৌধুরী এহিয়া যুগান্তরকে বলেন, এই হামলার সঙ্গে যুবলীগ জড়িত নয়। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নাটোর সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান বলেন, যারা এই হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে সম্প্রতি তারা স্থানীয় এমপির মাধ্যমে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে এসেছে। অতি উৎসাহী হয়ে তারা নিজেদের খাঁটি আওয়ামী লীগ প্রমাণ করতে মাঠে সক্রিয় রয়েছে।

পটুয়াখালী : সকাল সাড়ে ১০টায় পৌর শহরের স্বনির্ভর সড়কে সমাবেশ ছিল বিএনপির। সকাল থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে যোগ দিতে যাওয়ার সময় দফায় দফায় হামলা চালায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এতে বিএনপির অন্তত ৫ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। পরে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ চুন্নু মিয়ার সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক মোশাররফ হোসেন, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব স্নেহাংশু সরকার কুট্টি প্রমুখ। 

বাগেরহাট : সমাবেশকে কেন্দ্র করে সকালে জেলা বিএনপি কার্যালয় ঘিরে রাখে পুলিশ। এছাড়া মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের গতিরোধ করা হয়। এতে সমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়। দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের বাধার অভিযোগ করেন কেন্দ্রীয় বিএনপির গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান। শহরের হরিণখানায় জেলা বিএনপি আহ্বায়ক প্রকৌশলী এটিএম আকরাম হোসেন তালিমের বাসভবনে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।