নগ্ন ভিডিও দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করতো চক্রটি

ভাটারা থানায় দায়ের হওয়া মামলার বাদীর কাছ থেকে চক্রটি ব্যক্তিগত অশ্লীল ও আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও হাতিয়ে নেয়।

নগ্ন ভিডিও দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করতো চক্রটি

প্রথম নিউজ, অনলাইন: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে মোবাইল নাম্বার চাইতেন ফাতেমা তুজ জোহরা। পরে কিছুদিন মোবাইল ফোনে কথা বলার পর ভিডিও কলে কথা বলার আবদার করতেন। প্রেমিকার আবদার মেটাতে ভিডিও কল দিলে, ধীরে ধীরে আরো ঘনিষ্ট হতে বলতেন ফাতেমা। আবেগে পড়ে বিপরীত পাশে থাকা লোকরা ভার্চুয়ালি আপত্তিকর মুহুর্ত সৃষ্টি করতেন। এমনকি নিজের ফোনে থাকা আপত্তিকর ভিডিও পাঠিয়ে দিতেন। আর এতেই ঘটতো বিপত্তি। ভিডিও কলের আপত্তিকর দৃশ্য স্ক্রিন রেকর্ডার দিয়ে রেকর্ড করে রাখতেন ফাতেমা। ফোনে কথা বলার বিশেষ মুগুর্তগুলোর অডিও রেকর্ড করে রাখতেন। দিতেন স্ক্রিনশটও। পরে এগুলো দেখিয়ে পাততেন ব্লাকমেইলিংয়ের ফাঁদ। চাহিদা মতো মোটা অঙ্কের টাকা না পেলে এগুলো বিভিন্ন গোপন পর্ণ সাইটে বিক্রি করে দিতো। 

পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অডিও ভিডিও সেশন/রিয়েল সেশন বিক্রির বিজ্ঞাপন দিতো। যারা সাড়া দিতো, তাদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে ভিডিওগুলো সরবারহ করতো। মূলতো পর্ণ ভিডিওগুলোর কোড নেম হিসেবে তারা ‘সেশন’ নামটি ব্যবহার করতো। ফাতেমা ও তার চক্রের ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হয়েছে অসংখ্য মানুষ। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। রাজধানীর ভাটারা থানায় গত ১১ই জুন পর্ণোগ্রাফি আইনে দায়ের হওয়া একটি মামলার সূত্র ধরে ফাতেমা ও এই চক্রের অপর সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। খুলনার দৌলতপুর ও পাইকগাছা থানা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

ডিবি সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারকৃতরা কৌশলে বিভিন্ন ব্যক্তির পর্ণ সংগ্রহ করা ছাড়াও নিজেরা বিভিন্ন ধরণের পর্ণ ভিডিও তৈরি করে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে সেগুলো বিক্রি করতো। গ্রেপ্তারকৃতদের মোবাইল ফোন ও ম্যাসেঞ্জার পর্যালোচনা করে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা দেখতে পায়, বিভিন্ন ব্যক্তির অশ্লীল আপত্তিকর পর্ণ ভিডিও বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, মালয়েশিয়া, দুবাই, সৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাংলা ও হিন্দি ভাষাভাষী ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেছে। তাদের পর্ণ ভিডিও গুলোর মূল ক্রেতা হলো ভারতীয় নাগরিকরা ও বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশীরা। বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও রয়েছে এসব পর্ণ ভিডিওর ক্রেতা। পর্ণগ্রাফি সাইটগুলোতে বাংলাদেশি পর্ণভিডিওর চাহিদা বেশি থাকায় তারা এই পথ বেছে নেয় বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে। তারা নিজেদের ‘ফেমডম’ বলে দাবী করে এবং এসব পর্ণ ভিডিও’র ক্রেতাকে তারা ‘স্লেভ’ বলে।

ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের (উত্তর) অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের টিম লিডার অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. নাজমুল হক বলেন, ভাটারা থানায় দায়ের হওয়া মামলার বাদীর কাছ থেকে চক্রটি ব্যক্তিগত অশ্লীল ও আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও হাতিয়ে নেয়। পরে সেগুলো দেখিয়ে ৫ কোটি টাকা চেয়ে ব্লাকমেইলিংয়ের হুমকি দেয়। পরে তথ্য প্রযুক্তির সহযোগিতায় তাদের ২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় তাদের ২টি মোবাইল ফোন ও ২টি সিম কার্ড জব্দ করা হয়েছে। এ ধরনের ব্লাকমেইলিংয়ের হাত থেতে বাঁচতে অনলাইনে নিজের ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও কাউকে না পাঠানোর বিষয়ে সচেতন হতে বলেন ডিবির এই সাইবার কর্মকর্তা ।