ধু-ধু বালুচরে বাড়ছে আবাদি জমি, কমছে গো-চারণভূমি

এতে একদিকে সুফল বয়ে আনলেও আগের মতো মাঠে দেখা যায় না গরু-মহিষের অবাধ বিচরণ। এতে সংকট দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের। খামারিদের নির্ভর করতে হচ্ছে চড়া দামে কেনা খড়, বিচালি ও দানাদার খাদ্যের ওপর।

ধু-ধু বালুচরে বাড়ছে আবাদি জমি, কমছে গো-চারণভূমি

প্রথম নিউজ, গাইবান্ধা: উত্তরের নদীবেষ্টিত জনপদ গাইবান্ধার ধু-ধু বালুচরে সবুজ ঘাসের সমারোহ আর হাজার হাজার গরু-মহিষের অবাধ বিচরণ ছিল চোখে পড়ার মতো। কয়েক বছর থেকে চরাঞ্চলের মানুষের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র। সেচের মাধ্যমে চরাঞ্চলে ফলানো হচ্ছে বিভিন্ন ফসল।

এতে একদিকে সুফল বয়ে আনলেও আগের মতো মাঠে দেখা যায় না গরু-মহিষের অবাধ বিচরণ। এতে সংকট দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের। খামারিদের নির্ভর করতে হচ্ছে চড়া দামে কেনা খড়, বিচালি ও দানাদার খাদ্যের ওপর।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের ধকল কাটিয়েও জীবন-জীবিকার তাগিদে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া পালন করেন জেলার ১৬৫টি চরাঞ্চলের বাসিন্দারা। এসব গবাদিপশু লালন-পালনের ওপর নির্ভরশীল অন্তত কয়েক হাজার পরিবার। এসব গবাদি পশুর খাদ্যের প্রধান উৎস ছিল চরাঞ্চলের প্রাকৃতিক খাবার। কিন্তু গত কয়েক বছর থেকে চরাঞ্চলের বালু মাটিতে সেচ দিয়ে ফলানো হচ্ছে ভুট্টা, মরিচ, বাদাম, পেঁয়াজ, তিল, কাউন, সরিষা, ধান, পাটসহ বিভিন্ন অর্থকরী ফসল।

চরের বাসিন্দারা জানান, নানা প্রতিকূলতার সঙ্গে যুদ্ধ করে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করছে চরাঞ্চলের মানুষ। চরের মানুষের সম্পদ বলতে গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া। প্রতিবছর এসব গবাদিপশু বিক্রি করে সংসারের পুরো ব্যয় বহন করেন তারা। কিন্তু গত কয়েক বছর থেকে চরাঞ্চলের বালুময় জমিতে সেচ দিয়ে বিভিন্ন ফসল ফলানো হচ্ছে। এতে প্রাকৃতিকভাবে গজিয়ে ওঠা বিভিন্ন ধরনের গো-খাদ্য কমেছে। ফলে বাজার থেকে গবাদি পশুর খাদ্য কিনে গরু মোটাতাজাকরণ ও দুধ উৎপাদন করছেন তারা।

গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের গোমাট এলাকার আরিফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, কয়েকদিন পরপরই গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এজন্য গবাদি পশু পালনে গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। দানাদার খাবারের মূল্যবৃদ্ধি এবং দুধের বাজারমূল্য কম হওয়ায় খামার টিকিয়ে রাখা কষ্টকর হয়ে পড়েছে।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া ইউনিয়নের পোড়ার চরের বরকত আলী বলেন, কয়েক বছর আগেও চরের জমিতে কোনো আবাদ হতো না। তখন পতিত জমিতে গরু পুষে লাভবান হওয়া যেত। এখন আবাদি জমি বেড়ে যাওয়ায় পতিত জমি কমে গেছে। ঘাস না পাওয়ায় গরু-ছাগলের জন্য বেশি দামে খাদ্য কিনতে হচ্ছে। এতে এসব গবাদিপশু পুষে লাভ হয় না। হরিপুর ইউনিয়নের রাঘবের চর এলাকার রাজু মিয়া বলেন, কিছুদিন আগেও গরু-ছাগলের পাল নিয়ে চরাতে আসতাম বিস্তীর্ণ চরে। এখন সবাই জমিতে চাষাবাদ শুরু করেছে। আগের মতো গরু-ছাগলের পাল ছেড়ে দেওয়া যায় না। এ কারণেই অনেক মানুষ গরু-ছাগল বিক্রি করে দিচ্ছে।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গণ উন্নয়ন কেন্দ্রের (জিইউকে) নির্বাহী প্রধান এম. আবদুস সালাম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে চরাঞ্চলের জমিতে আগের চেয়ে অনেক বেশি ফসল উৎপাদন হচ্ছে। পাশাপাশি প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো গাছপালা কমেছে। এর প্রভাব পড়ছে প্রাণীকূলে। বিশেষ করে গবাদিপশু পালনের ওপর নির্ভরশীল পরিবারগুলোর জীবন-জীবিকায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. খোরশেদ আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে সেজন্য কৃষি বিভাগ নিরলসভাবে কাজ করছে। জেলার ছোট-বড় ১৬৫টি চরে এখন ভুট্টা, মরিচ, বাদাম, কাউন, তিলসহ বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ হচ্ছে। এতে কৃষকরা বেশ লাভবান হচ্ছেন।

গাইবান্ধা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মাছুদার রহমান সরকার বলেন, চরাঞ্চলের মানুষজনের অন্যতম সম্পদ গবাদিপশু। প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে গাছপালা ও ঘাস খেয়ে এখানকার গরু, মহিষ, ভেড়া, ছাগল বেড়ে ওঠে। সাম্প্রতিক সময়ে চরাঞ্চলে আবাদি জমি ও বালুর পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন ধরনের ঘাসের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে রয়েছেন খামারিরা। তিনি আরও বলেন, আমরা চরাঞ্চলে উন্নতজাতের ঘাসচাষে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দিয়ে খামারিদের উদ্বুদ্ধ করছি। এতে খামারিদের খরচ কিছুটা কমে যাবে।