দ্রুতই দেশে ফিরব, গ্রেফতারে ভয় পাই না: সালাহউদ্দিন
ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে যুগান্তরের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: ট্রাভেল পাশ হাতে পাওয়ার পর এখন শুধু চিকিৎসাজনিত কারণে কিছুদিন ভারতে থাকতে চান বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ। দেশে ফিরলে গ্রেফতার হবেন জেনেও আর অপেক্ষা করতে চান না। শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় বিমানে দেশে ফেরার ব্যবস্থা করার জন্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করবেন তিনি। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে যুগান্তরের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।
২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাজধানীর উত্তরা থেকে নিখোঁজ হন সালাহউদ্দিন আহমেদ। নিখোঁজের ৬৩ দিন পর ১১ মে ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে স্থানীয় পুলিশ তাকে উদ্ধারের পর সেখানকার একটি মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করে। এর পরদিন তাকে শিলং সিভিল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২০১৫ সালের ১১ মে ভারতে অনুপ্রবেশের দায়ে সালাহউদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে মামলা করে শিলং পুলিশ। প্রায় সাত বছর বিচার চলার পর এ বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি তাকে বেকসুর খালাস দেন শিলং জজ আদালতের আপিল বিভাগ। তাকে দ্রুত দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশনা দেন আদালত।
এরপর দেশে ফিরতে ৮ মে ভারতের গৌহাটিতে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার বরাবর ট্রাভেল পাশের আবেদন করেন তিনি। সম্প্রতি বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাকে ট্রাভেল পাশ দেয়। সবশেষ গত ১২ জুন সোমবার রাতে দেশে ফেরার জন্য ট্রাভেল পাশ হাতে পান তিনি। এরপরই আলোচনা শুরু হয় কবে দেশে ফিরবেন তিনি। এ নিয়ে গত বুধবার শিলং শহরের সানরাইজ গেস্টহাউজে সালাহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে একান্ত আলোচনা হয় যুগান্তরের।
শুরুতেই প্রশ্ন ছিল কবে দেশে ফিরছেন? উত্তরে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমি সোমবার ট্রাভেল পাশ হাতে পেয়েছি। আমি প্রায় ৫ বছর চিকিৎসাসেবার বাইরে আছি। এখানে দিল্লিতে আমার দুটি বড় অপারেশন হয়েছে। একটি কিডনিতে, অন্যটি ঘাড়ে। এছাড়া হার্টে তিনটি স্টেন্ট আছে। বছরে অন্তত একবার চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পরীক্ষা করার কথা ছিল। যেটা হয়নি। বৈধ কাগজপত্র না থাকার কারণে শিলং থেকে বের হতে পারিনি। এখন আমি প্রথম যে কাজটি করতে চাই, তা হলো আমার স্বাস্থ্য পরীক্ষা। তারপর যত দ্রুত সম্ভব দেশে ফিরতে চাই।
এছাড়া অন্য কোনো ইস্যু আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা তো ট্রাভেল পাশ। ভারত সরকারের কিছু বিধিবিধান আছে, সেগুলো তারা করবে। এছাড়া কোর্টের রায়ের পর পুলিশ বিভাগের কিছু কাগজপত্রের বিষয় আছে। আশা করি, সেগুলো সময়মতো হয়ে যাবে।
কোন পোর্ট দিয়ে দেশে ফিরতে চান? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি ভারত সরকারকে অনুরোধ করব আমার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে আমাকে যেন আমার ইচ্ছা অনুযায়ী পোর্ট ব্যবহার করতে দেয়। জানি না তারা সেটা কীভাবে করবে। তিনি বলেন, আমার জন্য বিমান যোগাযোগই স্বস্তির হবে।
স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়া বাংলাদেশে ফিরতে আর বড় কোনো ইস্যু আছে কি না-জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটাই বড় ইস্যু, কারণ দেশে ফিরলে বাংলাদেশ সরকার কীভাবে বিষয়টিকে নেবে, তা বলতে পারছি না। চিকিৎসার সুযোগ থাকবে কি না জানি না। তাই অসুস্থ শরীর নিয়ে কোনো ঝুঁকি নিতে চাচ্ছি না। যেহেতু শিলং থেকে বের হওয়ার জন্য বৈধ ট্রাভেল পাশ আছে, তাই বেশকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ করেই দেশে ফিরতে চাই।
তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে কতগুলো মামলা আছে? অনেক মামলায় তো গ্রেফতারি পরোয়ানা ইতোমধ্যে রয়েছে। দেশে ফিরলে তো গ্রেফতার হতে পারেন, বিষয়টি কীভাবে দেখছেন-এমন প্রশ্নের উত্তরে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমার বিরুদ্ধে কতগুলো মিথ্যা বানোয়াট মামলা হয়েছে, তা আমার জানা নেই। তবে এর সংখ্যা অনেক হবে বলে আমি জেনেছি। এসব নিয়ে এখন আর ভয় পাই না। সরকার গ্রেফতার করতে চাইলে করবে, তবুও দেশে ফিরবই।
আপনার জীবনে যে ঘটনাটি ঘটেছে তাতে ক্ষতির পরিমাণ কীভাবে বিবেচনা করেন-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে শোকরিয়া আদায় করছি, আমি এখনো জীবিত আছি। আমার অনেক সহকর্মীর মধ্যে অনেকেই আছেন, যারা আমার মতো সৌভাগ্যবান হতে পারেনি। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন, অনেকের লাশও মেলেনি। সেই হিসাবে যদি ক্ষতির বিষয়টি বলি, আমার শারীরিক বা মানসিক ক্ষতির চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আমাদের দেশের, স্বাধীনতার, জননিরাপত্তার, সার্বভৌমত্বের, স্বাধীন রাজনীতির এবং মানুষের অধিকারের, কথা বলার অধিকারের।
তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের যে পরিস্থিতি, তা দেখে তরুণ প্রজন্ম মনে করে-এই দেশটি কি আসলেই স্বাধীন? এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় ক্ষতি। আমি বলব আমার প্রিয় দেশবাসীকে, আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য হবে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা, ভোটের অধিকার ও মানুষের কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। এর মধ্য দিয়ে আমরা হয়তো কিছুটা ক্ষতিপূরণ করতে পারব। আমি ব্যক্তিগত লাভ-ক্ষতির কথা বিবেচনায় আনছি না। সূত্র: যুগান্তর