দক্ষ জনশক্তির অভাবে বছরে ৮-১০ বিলিয়ন ডলার বিদেশে চলে যায়
প্রথম নিউজ, ঢাকা : আমাদের শিল্পখাত পরিচালনায় অনেক বিদেশি কর্মী কাজ করছে, যাদের বেতন-ভাতা হিসেবে বছরে ৮-১০ বিলিয়ন বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়। এজন্য গুণগত শিক্ষাব্যবস্থার অনুপস্থিতি ও দক্ষ জনশক্তির অভাবকে দায়ী বলে মনে করে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)।
রোববার (৮ জুলাই) ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে ‘শিল্প-শিক্ষা খাতের সমন্বয় : পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি’ শীর্ষক সেমিনারে সংগঠনটি সভাপতি এসব কথা বলেন।
সেমিনারে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু এবং জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এনএসডিএ)-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান নাসরীন আফরোজ প্রধান অতিথি এবং সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার বলেন, আমাদের শিল্পখাত পরিচালনায় অনেক বিদেশি কর্মী কাজ করছে, যাদের বেতন-ভাতা হিসেবে বছরে ৮-১০ বিলিয়ন বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়। এজন্য আমাদের গুণগত শিক্ষাব্যবস্থার অনুপস্থিতি ও দক্ষ জনশক্তির অভাবকে দায়ী করা হয়। দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে শিক্ষা ও শিল্পখাতের সমন্বয় বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই।
ডিসিসিআই সভাপতি আরও বলেন, সরকারের ‘স্মার্ট বাংলাদেশ-এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং ক্রমাগত পরিবর্তনশীল চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের জনগোষ্ঠীকে দক্ষ করে গড়ে তোলতে হবে।
সামীর সাত্তার বলেন, শিল্পখাতের প্রয়োজনের নিরিখে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিকল্পে শিক্ষা ও শিল্পখাতের সমন্বয় আরও জোরদারের বিকল্প নেই। তবে বাংলাদেশে এ সমন্বয়ের অভাব অত্যন্ত প্রকট, যার ফলে আমাদের তরুণ জনগোষ্ঠীকে শিল্পখাতের জন্য দক্ষ করে গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে না এবং এর প্রভাব প্রতিফলিত হচ্ছে সামগ্রিক অর্থনীতিতে। তিনি শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দের পাশাপাশি বিশেষকরে গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ আরও সম্প্রসারণের আহ্বান জানান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, শিক্ষা ও শিল্পখাতের সমন্বয় নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত আলোচনা হচ্ছে, এখন সময় এসেছে সেটাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার এবং এজন্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ অতি জরুরি।
তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষা ও শিল্পখাতের মধ্যে কিছুটা আস্থার ঘাটতি আমরা পরিলক্ষিত করছি, যার নিরসন একান্ত আবশ্যক। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি ‘রূপান্তর পরিবর্তন’ আনয়নের লক্ষ্যে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, দেশে জনবল তৈরির লক্ষ্যে একটি ইকো-সিস্টেম প্রণয়ন করতে হবে, যাতে করে ম্যাপিং-এর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। সরকার দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ বেশকিছু হাই-টেক আইটি পার্ক গঠন করছে, তবে কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে স্থানীয়ভাবে দক্ষ মানবসম্পদের কোন বিকল্প নেই এবং এ জন্য সমন্বিত উদ্যোগ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি।
জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এনএসডিএ)-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান নাসরীন আফরোজ বলেন, পরিবর্তনশীল বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে আমাদের শিক্ষার্থীদের উপযোগী ও দক্ষ করে তোলতে শিক্ষা ও শিল্প খাত এবং সরকারের সমন্বয় একান্ত অপরিহার্য। এ লক্ষ্যে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে এনএসডিতে ১৪টি পরিষদ গঠন করা হয়েছে, যেখান থেকে সমসাময়িক বিষয়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সানেম-এর গবেষণা পরিচালক ড. সায়েমা হক বিদিশা সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন, ক্রমাগত পরিবর্তনশীল এ বৈশ্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা বেশ পিছিয়ে রয়েছি এবং এটাকে মোকাবিলায় শিক্ষা ও শিল্প খাতে প্রয়োজনীয় সমন্বয় এখনও পরিলক্ষিত হচ্ছে না। ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের তথ্য অনুযায়ী ২০২৭ সালের মধ্যে সবচেয়ে চাহিদা সম্পন্ন দক্ষতাগুলো হবে, ‘অ্যানালিটিকাল থিংকিং’, ‘ক্রিয়েটিভটি থিংকিং’ এবং ‘এআই ও বিগ ডাটা এনালাইসিস’ খাতে, তাই বিশেষকরে আমাদের তরুণ জনগোষ্ঠীতে তথ্য-প্রযুক্তি খাতে যুগোপযোগী করতে পারলে মানবসম্পদ খাতে বৈশ্বিক চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে।
এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর পরিচালক প্রফেসর মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন, এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি টমো পুটিনেন, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের গভর্নিং বডি’র সদস্য সাফকাত হায়দার, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর উপাচার্য সত্য প্রসাদ মজুমদার, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে সদস্য ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন সেমিনারের নির্ধারিত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।