তালাকের পর তরুণীকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণ

ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় ২২ বছর বয়সী এক সন্তানের জননীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করার পর তালাক দিয়ে ফের তাকে জোর করে তুলে নিয়ে গণধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে আদালতে

তালাকের পর তরুণীকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণ
তালাকের পর তরুণীকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণ

প্রথম নিউজ, ফরিদপুর : ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় ২২ বছর বয়সী এক সন্তানের জননীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করার পর তালাক দিয়ে ফের তাকে জোর করে তুলে নিয়ে গণধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে আদালতে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পুলিশের ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ নিয়েছেন।এ ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত যুবকের নাম মো. ফুয়াদ শেখ (২৪)। তিনি উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের সিংহপ্রতাব গ্রামের বাসিন্দা ইউপি সদস্য শাহজান শেখের ছেলে। গত বৃহস্পতিবার এক সন্তানের মা ওই নারী বাদী হয়ে ফরিদপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে এ মামলাটি দায়ের করেন। এ মামলায় ফুয়াদ শেখ এবং তার চার সহযোগী সিংহপ্রতাব গ্রামের সাইদুর রহমান সাহিদ শেখ (৪৫), জাকির মাতুব্বর (৪০), মুরাদ খালাসী (৩৫) ও জাফর শেখকে (৩৫) আসামি করা হয়েছে।

ধর্ষিতা ওই নারীর মা বলেন, বছর পাঁচেক আগে আমার মেয়ের বিয়ে হয়েছিল পার্শ্ববর্তী নগরকান্দা উপজেলার কাজলী গ্রামের বাসিন্দা এক এনজিও কর্মীর সঙ্গে। বিয়ের পর তাদের সুখের সংসার চলছিল। আমার মেয়ের একটি ছেলেসন্তানও রয়েছে। কিন্তু আমার মেয়ে যখন স্বামীর বাড়ি থেকে আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসত তখন তাকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করত ফুয়াদ শেখ। একপর্যায়ে আমার মেয়েকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে সে। আনুমানিক দেড় মাস আগে আমার মেয়েকে প্রেমের ফাঁদে ফেললে আমার মেয়ে তার স্বামীকে তালাক দেয়।

তিনি বলেন, পরে ফুয়াদ আমার মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করে। বিয়ের মাসখানেক যেতে না যেতেই গত ১০ মার্চ তাকে তালাক দেয় ফুয়াদ। গত ১২ মার্চ শনিবার সন্ধ্যায় আমার মেয়েকে বাড়ির পাশে রাস্তা থেকে জোরপূর্বক মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায় ফুয়াদ শেখ ও তার সহযোগী সিংহপ্রতাব গ্রামের সাইদুর রহমান সাহিদ শেখ (৪৫), জাকির মাতুব্বর (৪০), মুরাদ খালাসী (৩৫) ও জাফর শেখ (৩৫)। পরে ফরিদপুর শহরের মহাবিদ্যালয়ের পাশে থাকা জাকিরের বাসায় আটকে রেখে টানা ৮ দিন একাধিকবার ধর্ষণ করে ফুয়াদ। এতে আমার মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে।

তিনি আরও বলেন, ঘটনাটি নিয়ে আমার মেয়ে মামলা করতে চাইলে ফুয়াদ তার সহযোগীদের বাসায় ডেকে নিয়ে ১৯ মার্চ রাতে তাকে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে পালাক্রমে গণধর্ষণ করে। শুধু ধর্ষণ নয়- তাকে নির্যাতন ও পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দিয়ে পরদিন ২০ মার্চ বিকাল ৫টার দিকে বাড়ির পাশে ফেলে রেখে যায়। তখন বাড়ির লোকজন তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।

ওই নারীর মা অভিযোগ করে বলেন, মামলার পর থেকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসামিরা আমার স্বামী ও সন্তানদের এলাকা ছাড়া করে রেখেছেন। এমনকি আমাদের জমির পেঁয়াজও উঠাতে দিচ্ছে না তারা।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত আসামিদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ঘটনার ফুয়াদ শেখের বাবা ইউপি সদস্য শাহজাহান শেখ বলেন, ঘটনাটি সাজানো নাটক। আমাদের হয়রানি করার জন্য মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। ওই নারীকে আমার ছেলে বিয়ে করেছিল। বিয়ের পর আবার তালাক দিয়েছে। তালাকের পর নতুন করে কোনো ঘটনা ঘটেনি।

এ মামলার বাদীপক্ষের  আইনজীবী আব্দুর রশিদ বলেন, ওই ট্রাইব্যুনালের বিচারক প্রদীপ কুমার রায় অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করা হয়েছে আগামী ১২ মে।

ফরিদপুর পিবিআইর পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, আদালতের নির্দেশনা আমরা এখনো হাতে পাইনি। আদালতের নির্দেশনা পাওয়ার পর তদন্ত করে প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হবে।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom