তনু হত্যার ৭ বছর আজ :মা বললেন গরিবের চোখের পানির দাম নাই

‘আমার বুকের ধন তনু নাই সাত বছর হয়ে গেল। অনেক তদন্ত সংস্থা বাসায় এসে ন্যায়বিচারের আশ্বাস দিয়েছিল। কই, বিচার পাইলাম না তো! মেয়েটার কথা মনে করে চোখের পানি ফেলে সময় পার করছি। তার বাবাও কাঁদে। গরিবের চোখের পানির দাম নাই। বিচার পাইলে মনকে বুঝাতে পারতাম। মেয়ের বিচার পাব– এমন ভরসা আর কারও ওপর রাখতে পারছি না।’

তনু হত্যার ৭ বছর আজ :মা বললেন গরিবের চোখের পানির দাম নাই

প্রথম নিউজ ডেস্ক: ‘আমার বুকের ধন তনু নাই সাত বছর হয়ে গেল। অনেক তদন্ত সংস্থা বাসায় এসে ন্যায়বিচারের আশ্বাস দিয়েছিল। কই, বিচার পাইলাম না তো! মেয়েটার কথা মনে করে চোখের পানি ফেলে সময় পার করছি। তার বাবাও কাঁদে। গরিবের চোখের পানির দাম নাই। বিচার পাইলে মনকে বুঝাতে পারতাম। মেয়ের বিচার পাব– এমন ভরসা আর কারও ওপর রাখতে পারছি না।’ মেয়ে হত্যার বিচার না পাওয়ার ক্ষোভ থেকে এমন হতাশার কথা বলছিলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুর মা আনোয়ার বেগম। আজ সোমবার তনু হত্যাকাণ্ডের সাত বছর। কিন্তু দীর্ঘ এ সময়ে তনুর ঘাতকরা অধরাই রয়ে গেছে। কীভাবে তনুর মৃত্যু হলো– এমন রহস্যের জটও খোলেনি। তবে মামলার তদন্ত সংস্থা পিবিআই বলছে, মামলার তদন্তে বেশ অগ্রগতি আছে।

২০১৬ সালের ২০ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাসের একটি জঙ্গল থেকে তনুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর আগে সন্ধ্যায় সেনানিবাসের একটি বাসায় প্রাইভেট পড়াতে গিয়ে নিখোঁজ হন তিনি। পরদিন তাঁর বাবা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। পরে ৩০ মার্চ তনুর লাশ কবর থেকে তুলে দ্বিতীয় দফায় ময়নাতদন্ত করা হয়। এই তদন্তেও মৃত্যুর কারণ নির্ণয় করা যায়নি। এ নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে। এ মামলাটি প্রথমে থানা পুলিশ, জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পর ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। সর্বশেষ ২০২০ সালের নভেম্বরে কুমিল্লা সিআইডি থেকে মামলার ডকেট পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঢাকায় হস্তান্তর হয়।

তদন্তকারী সংস্থার একটি সূত্র জানায়, সিআইডি তনু হত্যা মামলার তদন্তকালে বেশ কিছু ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেছিল। সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে ওই নমুনার প্রোফাইলিংয়ের কাজ হয়। হত্যাকাণ্ডের ১৭ মাসের মাথায় সিআইডির তদন্ত দল ঢাকা সেনানিবাসে সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। এ ছাড়া তনুর মরদেহ উদ্ধারের পর তাঁর পরিধেয় থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছিল সিআইডি। তারা তখন সাংবাদিকদের জানিয়েছিল, পরীক্ষায় কমপক্ষে তিনজনের ডিএনএর উপস্থিতি পাওয়া যায়। তাদের শনাক্ত করতে সন্দেহভাজনদের ডিএনএ নমুনা নেওয়া প্রয়োজন। এ বিষয়ে তদন্ত সংস্থা পিবিআই সূত্র বলছে, ডিএনএসহ মামলার বিভিন্ন দিক পর্যালোচনায় বেশ কিছু অগ্রগতি আছে।

এদিকে সাত বছরেও তনু হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচিত না হওয়ায় অনেকটা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন তনুর মা-বাবা, ভাইসহ পরিবারের সদস্যরা। মামলাটির দৃশ্যমান কোনো কূলকিনারা না হওয়ায় বিচার পাওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তনুর মা ও পরিবারের সদস্যরা। গতকাল রোববার তনুর মা আনোয়ারা বেগম সমকালকে বলেন, তদন্তকারী সংস্থার কেউ কথা বলেন না। পিবিআইয়ে মামলাটি যাওয়ার পর আশা করেছিলাম ন্যায়বিচার পাব। কিন্তু বারবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বদল ছাড়া এখন পর্যন্ত আর কিছু দেখি না। আর কতদিন মেয়ের হত্যার বিচারের জন্য চোখের পানি ফেলতে হবে জানি না। এখন আমরা হতাশ হয়ে পড়েছি। দু’বার ময়নাতদন্ত করেও ডাক্তাররা কেন মৃত্যুর কারণ বের করতে পারলেন না।

তিনি আরও বলেন, বয়স হয়েছে, মৃত্যুর আগে বিচারটা দেখে যেতে পারব কিনা জানি না। মেয়েকে যারা হত্যা করেছে, তাদের বিচার আল্লহ করবেন। আমরা গরিব মানুষ, তাই বিচার পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছি। এখন আল্লাহর কাছে শুধু দোয়া করি, আল্লহ যেন তনুকে জান্নাত দান করেন।

তনুর ভাই আনোয়ার হোসেন রুবেল জানান, তাঁর বাবা-মা অসুস্থ। তাই এ বছর গ্রামের বাড়ি মুরাদনগরের বাঙ্গরা পশ্চিম ইউনিয়নের মির্জাপুরে যাওয়া হবে না। গত শুক্রবার সেনানিবাস এলাকার বাসায় ও মসজিদে তনুর জন্য মিলাদ মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠান করা হয়। সোমবারও বাসায় মিলাদের আয়োজন করা হবে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইর পরিদর্শক মজিবুর রহমান বলেন, মামলাটি অধিক গুরুত্ব দিয়ে আমরা আন্তরিকভাবে তদন্ত করে যাচ্ছি। এরই মধ্যে বেশ কিছু অগ্রগতি আছে, তবে এখনই তা গণমাধ্যমে বলা ঠিক হবে না। তদন্তভার পিবিআইতে আসার পরই সিনিয়র অফিসারদের পরামর্শক্রমে একাধিকার ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ তনুর পরিবার, স্কুলের শিক্ষকসহ কয়েকজনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: