ঢাবি ভিসি-প্রক্টরের পদত্যাগে অনড় অবস্থান ছাত্রদলের

প্রথম নিউজ, অনলাইন: শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ড, ক্যাম্পাসে নিরাপত্তাহীনতাসহ একাধিক বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভিসি প্রফেসর ড. নিয়াজ আহমদ খান ও প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমদের পদত্যাগে অনড় অবস্থান পুনর্ব্যাক্ত করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এমনটা জানায় সংগঠনটি।
ছাত্রদল নেতা সাম্য হত্যার তদন্তের বিষয়ে বলা হয়, শহীদ সাম্য হত্যাকাণ্ডের তদন্তকার্যে আমরা প্রচণ্ড ধীরতা লক্ষ্য করেছি। প্রায় ১৩ দিন পর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের নেতৃত্বে একটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে যে তথ্য উপস্থাপন করা হয় তাও ছিলো অত্যন্ত অস্পষ্ট ও বিভ্রান্তিকর। সেই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত তথ্য অনুযায়ী শহীদ সাম্য হত্যা করা হয় হত্যাকারীদের হাতে থাকা একটি ছোট্ট টেজার গানকে কেন্দ্র করে। অথচ কর্তব্যরত ডাক্তারের ভাষ্যমতে শহীদ সাম্যের উরুতে ছুরিকাঘাতের মাধ্যমে অত্যন্ত সুচারুভাবে তার ‘ফিমোরাল আর্টারি’ নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ ধমনী কেটে দেয়া হয়, যার ফলে মাত্র দুই-তিন মিনিটের মধ্যেই অত্যধিক রক্তক্ষরণে মৃত্যুমুখে পতিত হয় সে। পরিচয় দেয়ার পরেও একজন ঢাবি শিক্ষার্থী এবং সুপরিচিত ছাত্রদল নেতাকে এমন একটি তুচ্ছ বিষয়ে আক্রমণ করে অতি পেশাদার উপায়ে হত্যা করার পেছনে অন্য কোনো ষড়যন্ত্র আছে নাকি নেই-সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কোনো তথ্য জানাতে ব্যর্থ হয়েছেন ডিএমপি কর্তৃপক্ষ। এর মাধ্যমে এটি পরিষ্কারভাবে প্রতীয়মান হয় যে, শহীদ সাম্য হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য এখনও উদ্ঘাটিত হয়নি।
প্রশাসনের অবহেলা প্রসঙ্গে বলা হয়, বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়ার পরেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আবাসিক হলসমূহে নানান উপায়ে লুকিয়ে থাকা ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে অনীহা ও গাফিলতি প্রদর্শন করেছে। তাই শহীদ সাম্যর মতো একনিষ্ঠ সহযোদ্ধাকে হারানোর পরে বিদারিত হৃদয় নিয়ে আজ আমাদের লক্ষ্য করতে হচ্ছে যে, ঢাবি প্রশাসনিক কাঠামোর পাশাপাশি আবাসিক হলসমূহেও নানান উপায়ে ছলে-বলে-কৌশলে পতিত আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে ক্ষমতায়ন করা হচ্ছে। চিহ্নিত করে বেকায়দায় ফেলা হচ্ছে বিগত সময়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে বিভিন্নভাবে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। বিভিন্ন হলে আসন বণ্টনের ক্ষেত্রে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের প্রতি বৈষম্যের মতো দুঃখজনক সংবাদও লক্ষ করা গেছে।
ডাকসু ও সাম্য হত্যার বিচারের দাবিকে মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করে বলা হয়, স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী শহীদ সাম্য হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়ে প্রশাসনের ব্যর্থতাকে আড়াল করার চেষ্টাও করেছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ডাকসু ও হল সংসদের গঠনতন্ত্র সংস্কার এবং ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের মতো নিরাপদ ও সহনশীল পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছে ছাত্রদল। সংস্কার ও নির্বাচনের ক্ষেত্রে ছাত্রদল যেসব প্রস্তাবনা রেখেছে, সেসব বিষয়ে মৌলিকভাবে অন্যান্য অংশীদারের মতামতও অভিন্ন। অথচ এই অপরিণামদর্শী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসব বিষয়ে সকল অংশীদারের মতামতকে অগ্রাহ্য করে বিভিন্ন বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়ে যাচ্ছে। বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়ার পরেও ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে আয়োজনে অনুকূল পরিবেশ তৈরির ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে প্রচণ্ড অনীহা দেখিয়ে আসছে।’
ভিসি-প্রক্টরের পদত্যাগ চেয়ে বলা হয়, নিরাপদ ও স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের উপযুক্ত ক্যাম্পাসের বিনির্মাণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ন্যক্কারজনক নানান ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরেও গা-ছাড়া মনোভাবের মাধ্যমে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তাবিধানে তাদের অযোগ্যতারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। নিরাপদ ক্যাম্পাস আমাদের অধিকার। সুতরাং দীর্ঘদিন সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার পর হাজার হাজার ছাত্র-জনতার রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে নিরাপদ ক্যাম্পাস বিনির্মাণের যে অঙ্গীকারে আবদ্ধ হয়ে এই প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলো, সেই প্রতিশ্রুতি রাখতে না পারার ব্যর্থতা এই প্রশাসন কোনোভাবেই এড়িয়ে যেতে পারে না। তাই উপাচার্য ও প্রক্টর অবিলম্বে পদতরণ করে যোগ্যতর ব্যক্তিদেরকে এই গুরুদায়িত্ব পালনের সুযোগ করে দেয়ার এবং নতুন প্রশাসনের হাত ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে একটি নিরাপদ ও সুন্দর শিক্ষাঙ্গন হিসেবে গড়ে তোলার যৌক্তিক দাবি আবারও তুলে ধরছি।