ডলার সঙ্কটের মধ্যে বাড়ল ঋণের সুদহার

বাড়বে সবপণ্যের উৎপাদন ব্যয়

ডলার সঙ্কটের মধ্যে বাড়ল ঋণের সুদহার

প্রথম নিউজ, ঢাকা: ডলার সঙ্কটের কারণে উদ্যোক্তারা চাহিদা মতো পণ্যের কাঁচামাল আমদানি করতে পারছে না। প্রতিনিয়তই ডলারের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এক বছর আগেও যেখানে প্রতি ডলার পাওয়া যেতো ৯০ টাকায়, এখন তা বেড়ে হয়েছে ১০৮ টাকা। তবে আমদানি পর্যায়ে ব্যাংকভেদে তা আরো বেশি। এতে বেড়েছে ব্যবসা ব্যয়। প্রয়োজনীয় গ্যাস ও বিদ্যুৎ না পাওয়ায় বেড়েছে পণ্যের উৎপাদন ব্যয়। সবমিলিয়ে ব্যবসায়ীদের যখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা তখনই দীর্ঘ তিন বছর পর বাড়ানো হলো ব্যাংক ঋণের সুদহার।

সোমবার (১৯ জুন) সব ঋণেরই সুদহার বাড়ানো সিদ্ধান্ত দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর জন্য নতুন নির্দেশণা দেয়া হয়েছে। এর ফলে এখন আর ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ থাকবে না। গুনতে হবে ১০ শতাংশের ওপরে। ব্যবসায়ীরা বলছেন ঋণ পাওয়ার শর্ত হিসেবে এ ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়ানো হলো। কারণ আইএএমএফের কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার অন্যতম শর্ত ছিল সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা ৯ শতাংশ তুলে দিয়ে বাজার ভিত্তিক করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঋণের সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল ব্যাংক ঋণের সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা হবে ৯ শতাংশ। এ আর এ ৯ শতাংশ কার্যকর করতে গিয়ে ব্যাংকগুলো আমানতের সুদহার ৬ শতাংশ, ক্ষেত্রবিশেষ তা ৫ শতাংশেরও নীচে নামিয়ে এনেছিল। কিন্তু ব্যাংকঋণের সেই সুদহার এখন ১ শতাংশের ওপরে বাড়িয়ে ১০ শতাংশের ওপরে নেয়া হলো। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সুদহার বাড়ানোর জন্য যে ফর্মূলা দিয়েছে এতে সুদহার ১১ পর্যন্ত উঠে যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

ব্যবসায়ী উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, এমন এক সময় ঋণের সুদহার বাড়ানো হলো, যখন প্রত্যেক ব্যবসায়ী তার টিকে থাকার জন্য যুদ্ধ করছেন। একজন ব্যবসায়ী বলেন, আমরা এখন আর মুনাফার হিসাব করছি না, আমরা কীভাবে টিকে থাকবো তার হিসাব করছি। এমনি পরিস্থিতিতে সুদহার বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ী ব্যয় আরো এক দফা বাড়বে। আর এতে মূল্যস্ফীতি কমবে না, বরং বেড়ে যাবে।

অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার গত রোববার মুদ্রানীতি ঘোষণা করার সময় বলেছিলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আগে টাকার প্রবাহ কমানো হতো। এখন সুদহার বাড়িয়ে ও ডলারের একক দর নির্ধারণ করে তা নিয়ন্ত্রণ করা হবে। তবে, ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এমনিতেই ব্যাংকগুলো নানা চার্জের নামে বাড়তি অর্থ আদায় করছে। এখন আবার সুদহার বাড়িয়ে দেয়ায় এ ব্যয় আরো এক দফা বেড়ে যাবে।

যেভাবে সুদহার বাড়ানো হবে : এক বছরে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়েছে। শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সার্বিক অর্থনীতির গতিধারা অব্যাহত রাখা ও দক্ষ ঋণ ব্যবস্থাপনার জন্যই ব্যাংক ঋণের বাজার ভিত্তিক সুদহার ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের বাজার সুদকে ভিত্তি ধরে একটি রেফারেন্স রেট নির্ণয় করা। বর্তমানে এ রেট আছে ৭.১২ শতাংশ। এর সাথে ৩ শতাংশ যুক্ত করে সুদ হার নির্ধারণ হবে। তবে কৃষি ও পল্লী ঋণের ক্ষেত্রে রেফারেন্স রেটের সাথে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ যুক্ত করা হবে। এ রেফারেন্স রেট টাকার চাহিদার বিপরীতে আরো বাড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানেয়েছে।