চুরি করা সোনা ৩৫ হাজার টাকা ভরিতে বিক্রি

চুরি করা সোনা ৩৫ হাজার টাকা ভরিতে বিক্রি

প্রথম নিউজ, ঢাকা : রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার সোনার দোকানে চুরি করা চক্রের ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ডিবি জানায়, গত ১৪ এপ্রিল রাজধানীর ভাটারার মাদানী এভিনিউয়ের নূর জুয়েলার্সে করা চুরির ঘটনায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চুরির সোনা তারা মাত্র ৩৫ হাজার টাকা ভরিতে বিক্রি করে।

গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে চুরি হওয়া ২ ভরি সোনা, সোনা বিক্রির ১২ লাখ টাকা এবং তালা কাটার যন্ত্রপাতি, চুরির কাজে ব্যবহৃত তিনটি বিএমডব্লিউ ছাতা উদ্ধার করা হয়।


বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এবিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন ডিবির লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান।

তিনি বলেন, গত ১৪ এপ্রিল দুপুরে নূর জুয়েলার্সের মালিক ও কর্মচারীরা দোকানে তালা লাগিয়ে পার্শ্ববর্তী মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতে যান। নামাজ শেষে জুয়েলার্সের দোকানে এসে দেখতে পান দোকানের কলাপসিবল গেট ও শাটারে দেওয়া তালাগুলো কাটা। পরে মালিকসহ দোকানের কর্মচারীরা ভেতরে প্রবেশ করে দেখতে পান স্বর্ণালংকারের বক্সগুলো এলোমেলো অবস্থায় পড়ে আছে এবং দোকানের ট্রেতে রাখা কোনো স্বর্ণালংকার নেই। তারা হিসাব-নিকাশ করে দেখতে পান, প্রায় ১৮৬ ভরি স্বর্ণালংকার এবং ক্যাশে থাকা নগদ ৫০ হাজার টাকা তালা কেটে চুরি হয়ে গেছে।

মামলার তদন্তের বিষয়ে তিনি বলেন, গোয়েন্দা লালবাগ জোনাল টিম মামলাটি প্রায় ২ মাস তদন্ত করে ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ, তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার এবং বিশ্বস্ত সোর্সের তথ্যের ভিত্তিতে ১৩ জন আসামিকে শনাক্ত করে। বিভিন্ন মাদক, অনলাইন/অফলাইন জুয়া এবং অন্যান্য অসামাজিক কার্যকলাপে আসক্ত ভাসমান এই চোরদের বুধবার (১৪ জুন) কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া ও নারায়ণগঞ্জ জেলাসহ ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে সংঘবদ্ধ ওই চোর চক্রের সর্দারসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. শরীফ ওরফে জামাই শরীফ, মো. আমির হোসেন ওরফে মোটা আমির, মো. ইয়াছিন আরাফাত মোল্লা ওরফে কানা মোটা ইয়াছিন, মো. ফারুক, মো. নুরে আলম সুমন ওরফে ডিবি সুমন, মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে আব্দুল্লাহ, মোকাররম হোসেন ওরফে রুবেল ওরফে মনির হোসেন ওরফে মনু, মো. পারভেজ।

চুরি করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে মশিউর রহমান বলেন, আসামিরা আগেও মানি এক্সচেঞ্জ, জুয়েলারি শপ, টায়ার টিউবের আড়ৎ, লাইট হাউজে বিশেষ কায়দায় তালা কেটে, শাটার ভেঙে নগদ টাকা ও সোনার অলঙ্কার চুরি করেছেন। তারা কোনো একটি প্রতিষ্ঠানে চুরি করার আগে ওই এলাকায় কয়েকদিন অবস্থান করে। পায়ে হেঁটে, রিকশায় চড়ে এলাকা রেকি করে। প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কর্মচারীরা কোথায় যায়, কখন কতক্ষণ অবস্থান করে তাও পর্যবেক্ষণ করে। অপরাধ সংগঠনের দিন মালিক-কর্মচারীরা প্রতিষ্ঠানের বাইরে থাকাকালীন চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নিয়ে কখনো ছাতা, কখনো চাদর দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সামনে এক ধরনের আড়াল সৃষ্টি করে। পরে তালা কাটার যন্ত্র দিয়ে মুহূর্তেই কলাপসিবল ও শাটারের তালা কেটে একাধিকজনকে ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়ে শাটার বন্ধ করে দেয়। ভেতর থেকে চুরি শেষ হওয়া পর্যন্ত চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন অবস্থানে সতর্ক থেকে ছাতা এবং চাদর দিয়ে আড়াল তৈরি অব্যাহত রাখে। নির্দিষ্ট কিছু দোকানদারের কাছে তারা চোরাই স্বর্ণালংকার কম দামে বিক্রি করে।

ধরা পড়া এড়ানোর জন্য এই চক্রের সদস্যরা সব ধরনের প্রযুক্তিগত সতর্কতা অবলম্বন করে থাকে বিধায় তাদেরকে সহসা ধরা যায় না। জুয়া খেলা, অবৈধ মাদক এবং অবৈধ যৌনতায় আসক্ত হওয়ায় চুরি থেকে পাওয়া অর্থ তাদের কাছে বেশি সময় থাকে না।

ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, চক্রটি চুরি করা স্বর্ণ ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা ভরিতে অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে। এসব চোরাই স্বর্ণ তারা রাজধানীর তাঁতীবাজার, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করা হয়। কোনো কিছু না দেখেই তাদের কাছ থেকে কম দামে এসব স্বর্ণ কিনে নেয় অসাধু ব্যবসায়ীরা।