চাকরির বয়স ৩৫ করার দাবিতে অবরোধ, পুলিশের লাঠিচার্জ

গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের  সামনে সমাবেশের আয়োজন করেন তারা। এরপর সমাবেশ থেকে মিছিল নিয়ে গণভবনের দিকে যান।

চাকরির বয়স ৩৫ করার দাবিতে অবরোধ, পুলিশের লাঠিচার্জ

প্রথম নিউজ, অনলাইন: সরকারি চাকরিতে যোগদানের বয়স ৩৫ করার দাবিতে ফের শাহবাগ অবরোধ করেছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের  সামনে সমাবেশের আয়োজন করেন তারা। এরপর সমাবেশ থেকে মিছিল নিয়ে গণভবনের দিকে যান। এ সময় পুলিশের বাধার শিকার হন। সেখানে পুলিশ তাদের উপর লাঠিচার্জ করেছে। এ সময় ১৩ জনকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর শাহবাগ অবরোধ করেন তারা। প্রায় দুইঘণ্টা শাহবাগ অবরোধ করে রাখার পর তাদেরকে সরিয়ে দেয় পুলিশ।

এর আগে পরিষদের সমন্বয়ক শরিফুল ইসলাম শুভ বলেন, আমরা চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা স্থায়ীভাবে বৃদ্ধি চাই। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ৩৫ চাই। তারই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ৩০শে আগস্ট থেকে লাগাতার কর্মসূচি পালন করছি। সরকারি-বেসরকারি, আধা সরকারি, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান, স্বায়ত্তশাসিতসহ দেশে বিদ্যমান সব ধরনের চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর করতে হবে। বিষয়টি উপলব্ধি করে ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়ে মেধা ও দক্ষতা বিবেচনায় রেখে বাস্তবতার নিরিখে যুক্তিসঙ্গত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে উল্লেখ করেছিল। কিন্তু সেটি বাস্তবায়ন হয়নি।

সমাবেশে যোগ দিয়ে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, আওয়ামী লীগ ২০১৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারে চাকরিতে বয়সসীমা বাড়ানোর কথা বলেছে। আমিও প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই দাবি তুলে ধরেছিলাম। বলেছিলাম, এর পেছনে ছাত্রলীগের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। প্রশাসনিক ক্ষেত্রে আমরা ভারতকে অনুসরণ করি। তাহলে চাকরিতে বয়সসীমার ক্ষেত্রে কেন নয়? ব্যর্থ রাষ্ট্র পাকিস্তানের পদাঙ্ক অনুসরণ না করে আমরা উন্নত রাষ্ট্রগুলোর পদাঙ্ক অনুসরণ করতে সরকারকে অনুরোধ করেন। তিনি আরও বলেন, বয়সসীমা না রাখলে ভালো হয়। তবুও শিক্ষামন্ত্রী, জনপ্রশাসনমন্ত্রী দাবির বিষয়ে ইতিবাচক মত দিয়েছেন। বয়সসীমা ৩৫ করতে হবে। 

এরপর দুপুরে আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে গণভবনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে আন্দোলনকারীরা গণভবন অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করলে এতে বাধা দেয় পুলিশ। ব্যারিকেড দিয়ে থামিয়ে দেয়া হয় আন্দোলনকারীদের। বেলা ৩টায় পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে চাকরিপ্রত্যাশীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে। এতে শাহবাগ এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ লাঠিচার্জ করে আন্দোলনরতদের সরিয়ে দেয়। এ সময় পুলিশ ও চাকরিপ্রত্যাশীদের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সেখান থেকে আটক ১৩ জন হলেন- সুলতানা সিদ্দিকী, রিমা আক্তার, বৃষ্টি আক্তার, আল-আমিন, নূর মোহাম্মদ নূর, হুমায়ুন কবির, মানিক দাস, মো. রাসেল, শেখ ফরিদ, আজম মোহাম্মদ, মামুনুর রশিদ, সাদ্দাম হোসেন ও আব্দুল হাকিম।

এরপর আন্দোলনকারীরা বলেন, আমরা শাহবাগ দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে গণভবনের দিকে পদযাত্রা করছিলাম সুস্পষ্ট দাবি নিয়ে। শাহবাগ পৌঁছানোর পর শাহবাগ থানা পুলিশ আমাদেরকে আটকায় এবং কথা বলার একপর্যায়ে মারধর ও আটক শুরু করে। ৩৫ প্রত্যাশী খাদিজা বলেন, আমাদের ১৩ জন শিক্ষার্থী আটক হয়েছে। আমরা এখন আবার টিএসসি যাচ্ছি সেখানে আমরা আবার কর্মসূচি ঘোষণা করবো। পরিষদের আহ্বায়ক শরিফুল ইসলাম বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের অনেকে আটক হয়েছেন। আমরা খুবই মর্মাহত। আমরা আবার রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে দাঁড়াবো এবং আমাদের পদক্ষেপগুলো ঘোষণা করবো।

সন্ধ্যায় কর্মসূচিতে পুলিশি বাধা ও আটকের প্রতিবাদে ফের রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নেন বয়সসীমা ৩৫ প্রত্যাশীরা। অবস্থান নেয়া দুই শতাধিক আন্দোলনকারী নিজেদের দাবি আদায় ও আটককৃতদের মুক্তির দাবিতে রাত ১০টা পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আল্টিমেটাম দিয়েছে। এর মধ্যে সবাইকে মুক্তি না দিলে আমরণ অনশনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পর এক সংবাদ সম্মেলনে এই কথা জানান আন্দোলনকারীরা। 

এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন্স) মো. আসাদ হোসেন বলেন, এ ঘটনায় ১৩ জনকে আটক করা হয়েছে। যাদের মধ্যে ১০ জন ছেলে ও ৩ জন মেয়ে। তাদের বিপক্ষে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। আটকের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর রাজু ভাস্কর্যে জড়ো হতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। সন্ধ্যার সাড়ে ৭টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সেখানে শতাধিক আন্দোলনকারী অবস্থান করছেন। সেøাগানে, বক্তব্যে তারা গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দাবি করছেন। সংবাদ সম্মেলনে পুলিশি হামলা ও গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে আন্দোলনকারীরা বলেন, পুলিশ আমাদের সঙ্গে যে আচরণ করেছে সেটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে আমাদের ওপরে লাঠিচার্জ করা হয়েছে, বিনা অপরাধে শিক্ষার্থীদের আটক করা হয়েছে। পুলিশ জনগণের বন্ধু। আশা করি আমাদের সহযোদ্ধাদের মুক্তি দিয়ে তারা শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক এই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করবে। এ সময় ২০০৯ সালে নিজেদের নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ করেও চাকরির বয়স  ৩৫ বাস্তবায়ন না করায় সরকারের প্রতিও ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেন আন্দোলনকারীরা।