প্রথম নিউজ, ঢাকা: সম্প্রতি গুমের শিকার ব্যক্তিদের নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানাচ্ছে ‘মায়ের ডাক’। গত ৫ ফেব্রুয়ারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন জাতিসংঘ নয়, জাতিসংঘের কোন কোন প্রতিষ্ঠান আমাদের একটি তালিকা দিয়েছিল। পরে দেখা গেল, ভূমধ্যসাগরে অনেক লোকের সলিল সমাধি হয়েছে। একই দিনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, আমরা সব সময় বলি, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী গুমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। যেখানেই গুম হচ্ছে, সেখানেই আমরা কিছুদিন পরেই তাকে পাচ্ছি। নানা কারণে আত্মগোপন করে থাকে, সেগুলোকে গুম বলে চালিয়ে দেয়। বাংলাদেশে কেউ গুম হয় না। ৭ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের পাঁচদিন ব্যাপি বৈঠকের পূর্বে এই দুই মন্ত্রী অসত্য বক্তব্য দিলেন। ওয়ার্কিং গ্রুপের এই ১২৬তম বৈঠকে বাংলাদেশসহ ২৪টি রাষ্ট্রের ৩০০টিরও বেশী গুমের ঘটনার বিষয়ে আলোচনা করা হবে। এই সময়ে তাঁদের এই মিথ্যা বক্তব্যের মাধ্যমে বাংলাদেশের গুমের ঘটনাগুলো অস্বীকার করা হয়েছে। অথচ রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলো যে গুমের সঙ্গে জড়িত সেইসব ঘটনার অনেক প্রত্যক্ষদর্শী রয়েছেন এবং বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন থেকেও গুমের ঘটনার সঙ্গে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। গুম হওয়া ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা বহু বছর ধরে তাঁদের প্রিয়জনদের ফিরে আসার অপেক্ষায় রয়েছেন। স্বজনদের ফিরে পাওয়ার দাবিতে তাঁরা বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা অসংখ্যবার আবেদন করলেও গুম হওয়া ব্যক্তিদের তাঁদের প্রিয়জনদের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়নি। মায়ের ডাক মনে করে দায়িত্বরত মন্ত্রীদের এই ধরনের বক্তব্য আন্তর্জাতিক মহলকে মিথ্যা ধারণা দেয়ার একটি ন্যাক্কারজনক প্রচেষ্টা।
গুম একটি মানবতাবিরোধী অপরাধ। এই অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের একদিন না একদিন বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতেই হবে। যাঁরা নির্দেশিত হয়ে সরাসরি গুমের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন এবং এইসব ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য যাঁরা অনবরত মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছেন তাঁরা উভয়েই সমান দোষী। উল্লেখ্য, এর আগে জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এনফোর্সড অর ইনভলান্টারি ডিসঅ্যাপেয়ারেন্সেস কর্তৃক বাংলাদেশে গুম হওয়া ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ করা হয় এবং গুম হওয়া ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এরপর থেকে বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ সদস্যরা সরকারের নির্দেশে দফায় দফায় গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের বাড়িতে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলার নামে হয়রানী করে এবং পুলিশ সদস্যরা গুমের শিকার ব্যক্তি নিখোঁজ হয়েছেন এবং পরিবার তথ্য গোপন করেছেন এই মর্মে কাগজে স্বাক্ষর দেয়ার জন্য ভিকটিম পরিবারের সদস্যদের ওপর চাপ প্রয়ােগ করে। ২০০৯ সাল থেকে দেশে গুম হওয়ার ঘটনা ব্যাপকভাবে শুরু হয় এবং ২০১৪ ও ২০১৮ সালের বিতর্কিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে বিরোধী দলকে দমনের উদ্দেশ্যে অনেক গুমের ঘটনা ঘটে এবং বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা এর শিকার হন। মায়ের ডাক সরকারের মন্ত্রীদের এই ধরনের মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত বক্তব্য প্রত্যাখান করছে এবং গুম হওয়া ব্যক্তিদের তাঁদের স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য আবারো দাবি জানাচ্ছে।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: