প্রেস ক্লাবে কে জি মোস্তফার জানাজা সম্পন্ন: সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা

বিএনপির শোক

প্রেস ক্লাবে  কে জি মোস্তফার জানাজা সম্পন্ন: সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা
প্রেসক্লাবে কে জি মোস্তফাকে শেষ শ্রদ্ধা

প্রথম নিউজ, ঢাকা: নন্দিত গীতিকার-সাংবাদিক কে জি মোস্তফাকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছে সাংবাদিকসহ নানা শ্রেনীর পেশার মানুষজন। আজ দুপুরে তার কফিন জাতীয় প্রেসক্লাবে নিয়ে আসা হলে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়। জাতীয় প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি হাসান হাফিজ, সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, যুগ্ম সম্পাদক মাইনুল আলম ও আশরাফ আলী, কোষাধ্যক্ষ সাহেদ চৌধুরীসহ কর্মকর্তারার তার মরদেহের সামনে পুস্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর বিএফইউজে, ডিইউজে, পিআইবি, কবিতাপত্র, নোয়াখালী সাংবাদিক ফোরামসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে পুস্পস্তবক অর্পন করা হয়।

‘তোমারে লেগেছে এতো যে ভালো চাঁদ বুঝি তা জানে’ এবং ‘আয়নাতে ঐ মুখ দেথবে যখন’ কালজয়ী গানের গীতিকার ছিলেন তিনি। এই দুটি গানের সুরকার ছিলেন রবিন ঘোষ। প্রথম গানটি গেয়েছেন তালাত মাহমুদ ও দ্বিতীয়টি মাহমুদুন্নবী। এহতেশাম পরিচালিত ‘রাজধানীর বুকে’ সিনেমায় প্রথম গানটি এবং অশোক ঘোষের পরিচালিত ‘নাচের পুতুল’ সিনেমায় দ্বিতীয় গানটি প্রকাশের পর যথেষ্ট জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো।

গতকাল রোববার রাতে আজিমপুরের বাসায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে শহীদ সোহরাওয়ার্দি হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিতসকরা তাকে মৃত্যু ঘোষণা করেন।  মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮৪ বছর। তার ছোট ছেলে খন্দকার রউফুল হাসান জানান, বাবার মরদেহ এখন আজিমপুর কবরাস্থানে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে তাকে দাফন করা হবে।

জাতীয় প্রেসক্লাবের নামাজে জানাজায় গণস্বাস্থ্য সংস্থার ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এরশাদ মজুমদার, মহিউদ্দিন আলমগীর, মোস্তফা কামাল মজুমদার, জাকারিয়া কাজল, আবদুল জলিল ভুইয়া, কামরুল ইসলাম চৌধুরী, বিএফইউজের দুই অংশের ওমর ফারুক, এম আবদুল্লাহ, নুরুল আমিন রোকন, খায়রুজ্জামান কামালসহ শতাধিক সাংবাদিক অংশ নেন।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, কে জি মোস্তফা ভাইয়ের সাথে পরিচয় আমাদের জন্মের পরের থেকে, দীর্ঘদিনের পরিচয়। তার গুন, তার কাহিনী, তার গান, তার সাংবাদিকতা ..। তবে যে কথাটা এতো বড় একজন গুনীকে সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে কখনো সন্মান করেনি। এটা বেদনা, এটা দূ:খের। আমরা তাকে স্মরণ করব সবসময়। তাকে আল্লাহ বেহেস্তে নসিব করুন।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি কবি হাসান হাফিজ বলেন, কেজি ভাইয়ে‘ মৃত্যু একটা অঙ্গহানির কথা বলছি। এই জাতির একজন .. অত্যন্ত লজ্জিত। আমরা আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থী। আপনাকে আমরা মূল্যায়ন করতে পারি নাই, সন্মান দিতে পারি নাই। যে রাষ্ট্রযন্ত্র এতো বধির আপনারা জানেন যে, সেই পুরস্কারকে রাজনীতিকরণ করা হয়েছে, নির্লজ দলীয়করণ করা হয়েছে। আমলারা এদেশের বুদ্ধিজীবীদের বিদ্যানজনদের মূল্যায়ন করে। এসব কেলেঙ্কারীর কথা আপনারা জানেন। আমি ক্ষুদ্র একজন সাহিত্য কর্মী হিসেবে চেষ্টা করেছিলাম যাতে উনি সন্মাননা পান। কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্র এতো বধির যে সেখানে এই কর্ণকুহুরে তাদের এটা পৌঁছায় না। পঞ্চাশ বছর হয়ে গেছে আমরা আমাদের গুনী, সন্মান্বিত ব্যক্তিদের  সন্মান দিতে জানি না- এই ধন্য, এই গ্লানি কবে যে গুজবে তা আমরা জানি না। আমি নিজেও চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু পারি নাই। কেজি মোস্তফার আত্মা পরকালে যেন শান্তিতে থাকেন সেজন্য সকলের কাছে দোয়া চান এই কবি।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান বলেন,  তিনি একজন সংবেদনশীল মানুষ ছিলেন। গুনী মানুষ ছিলেন। তার কালোজয়ী গান ‘তোমাকে লেগেছে এতো যে ভালো চাঁদ বুঝি তা জানে’ ‘আয়নাতে ঐ মুখ দেখবে যখন’ কেজি ভাইয়ের এসব গান থেকে যাবে। তার এই মৃত্যু জাতীয় প্রেসক্লাবে গভীর শূণ্যতা সৃষ্টি হয়েছে, যা পুরন হওয়ার নয়। জাতীয় প্রেসক্লাবের একটি সঙ্গীত বা থিম সং আছে- ‘প্রেসক্লাব আমার সেকেন্ড হোম..’। এই গানেরও রচয়িতা কেজি মোস্তফা।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের শোক:

গতকাল রোববার রাত ৮ টায় নন্দিত গীতিকবি, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও ছড়াকার কে জি মোস্তফা ইন্তেকাল করায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।                                                                          
আজ এক শোকবার্তায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, “অনেক জনপ্রিয় গানের গীতিকার কে জি মোস্তফা’র ইন্তেকালে তার পরিবার-পরিজনদের মতো আমিও গভীরভাবে সমব্যাথী। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা জীবন শেষে কে জি মোস্তফা বেশ কিছু দৈনিক পত্রিকায় গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন এবং সাহিত্য চর্চায় অনন্য প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন। অনেক হৃদয়স্পর্শী ও মনমাতানো গান রচনা করে তিনি সঙ্গীতপ্রেমিদের নিকট জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। বিশিষ্ট কবি, গীতিকার, ছড়াকার ও কীর্তিমান সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে তাঁর অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁর শুন্যতা সহজে পূরণ হবার নয়। পরম করুণাময় আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করি তিনি যেন তাঁকে জান্নাতবাসী করেন।
বিএনপি মহাসচিব কে জি মোস্তফা’র বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকাহত পরিবারবর্গ, আত্মীয়স্বজন, গুণগ্রাহী, স্বতীর্থ ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

১৯৩৭ সালের ১ জুলাই নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন কে জি মোস্তফা। তিনি ১৯৬০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। দৈনিক ইত্তেহাদে ১৯৫৮ সালে শিক্ষানবিশ হিসেবে সাংবাদিকতায় যোগ দেন তিনি।

১৯৭৬ সালে তিনি বিসিএস (তথ্য) ক্যাডারভুক্ত হন এবং চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের সহকারী সম্পাদক পদে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালে সিনিয়র সম্পাদক (যুগ্ম-সচিব পদমর্যাদা) হিসেবে অবসর নেন। খ্যাতিমান এই গীতিকার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সঙ্গীত বিভাগ কৃর্তক পদক ‘দেশবরেণ্য গীতিকার’ পদকসহ আরো বহু পদকে ভূষিত হয়েছেন।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom