গুচ্ছগ্রামের জরাজীর্ণ ঘর: ‘চাল চাই না, ঘর মেরামতের টিন চাই’

গুচ্ছগ্রামের জরাজীর্ণ ঘর: ‘চাল চাই না, ঘর মেরামতের টিন চাই’

প্রথম নিউজ, মাদারীপুর: ‘সামনে বর্ষাকাল, এখন ঝড় বৃষ্টির সময়, ঘরেতো থাকতেই পারিনা। সারাঘর দিয়ে পানি পড়ে। পলিথিন কিনে টিনের চালের উপর দিয়েছি। তাতে কি পানি পড়া বন্ধ হয়? তবুও চেষ্টা করছি। সরকার আমাদের ঘর দিয়েছে, এখন যদি মেরামত না করে দেয়, তাহলে আমরা কীভাবে থাকবো। আমাদের থাকার কোনো জায়গা নেই। আমরা সরকারের কাছে চাল চাই না, কাপড়ও চাই না। চাই টিন, চাই আমাদের ঘরগুলো মেরামত করা হোক। যাতে করে আমরা একটু ভালোভাবে থাকতে পারি।’ কথাগুলো বলছিলেন মাদারীপুর সদর উপজেলার পেয়ারপুর ইউনিয়নের পেয়ারপুর গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দারা।

সরেজমিন ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার পেয়ারপুর ইউনিয়নের পেয়ারপুরের কুমার নদের পাড় ঘেঁষে গড়ে উঠেছে ভূমিহীনদের জন্য গুচ্ছগ্রাম। ১৯৯৬ সালে সরকারিভাবে ভূমিহীন ও গৃহহীন এমন ২৪০টি পরিবারের জন্য টিন দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই ঘরগুলো। পরবর্তীতে ২০০১ সালে কিছু ঘর সরকারিভাবে মেরামত করা হয়। এরপর মাঝেমধ্যে কিছু ঘর মেরামত করা হলেও এখানকার বসবাসকারীই নিজ উদ্যোগে নিজ খরচে মেরামত করেছেন।

বর্তমানে প্রায় সব ঘরের অবস্থা একই দাঁড়িয়েছে। সেখানে বসবাস করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। ঘরের চালের টিনগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। সামান্য বৃষ্টিতেই ঘরের মধ্যে পানি পড়ে। কোনোরকম পলিথিন দিয়ে বসবাস করছেন এই অসহায় মানুষগুলো। তাছাড়া কোনো কোনো ঘরের খুঁটিও নড়বড়ে হয়ে গেছে। এছাড়া ওই সময় নির্মাণ করা টয়লেটগুলোও নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। অনেকেই যে যার সুবিধামতো সিমেন্টের রিং বসিয়ে পলিথিন বা সিমেন্টের বস্তা দিয়ে বেড়া দিয়ে টয়লেট বানিয়ে ব্যবহার করছেন। পাশাপাশি প্রায় সব টিউবয়েলই নষ্ট।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২৪০টি ঘরের মধ্যে ১৩০টি ঘরই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এরইমধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা এসকেন মুন্সি, মনির ফকির, আনেছ খালাসী, মাজেদা, পারভীন, সালমাসহ প্রায় ১০-১২টি পরিবার বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। ঘরগুলো মেরামত হলে তারা আবার ফিরে আসবেন বলে জানা যায়।

গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা মো. মজিবর বেপারীর স্ত্রী গোলাপী বেগম, মিন্টু বেপারীর স্ত্রী সেফালী বেগম, করিম হাওলাদারের স্ত্রী রিনা বেগম, লিয়াকত শিকদারের স্ত্রী নাদিরা ও সোহেল শেখের স্ত্রী ফুরফুরি বেগম আপেক্ষ করে জানান, ঘরগুলো মেরামত জরুরি হয়ে পড়েছে। কিন্তু সরকারিভাবে সেটা করে দিচ্ছে না। আমরা কোনোভাবে পলিথিন দিয়ে থাকছি। বৃষ্টি নামলেই টিনের ছিদ্রের জায়গায় পাতিল, বালতি দিয়ে রাখি। একটু বাতাস হলেই ঘরগুলো নড়বড় করে। মনে হয় এই বুঝি ভেঙে পড়বে। আমাদের থাকার জায়গা নেই। তাই থাকতে হচ্ছে। সরকার আমাদের ঘর দিয়েছেন, এখন এগুলো মেরামত করে দিলে আমরা একটু শান্তিতে থাকতে পারবো।

তারা বলেন, চেয়ারম্যান, মেম্বারদের কাছে বার বার বলেও কোনো লাভ হয়নি। তবে বর্তমান চেয়ারম্যান বলেছেন, তিনি নাকি ঘরগুলো মেরামতের জন্য চেষ্টা করছেন। আমদের দাবি বর্ষার আগেই ঘরগুলো মেরামত করে দেওয়া হোক।

পেয়ারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মাহফুজুর রহমান লাভলু তালুকদার বলেন, এখানকার ঘরগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। দ্রুত মেরামত দরকার। এরইমধ্যেই ইউএনওকে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই ঘরগুলো মেরামতের ব্যবস্থা করা হবে।

মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাইনউদ্দিন বলেন, এরইমধ্যে ঘরগুলো মেরামতের জন্য কী কী প্রয়োজন, সেই ব্যাপারে তালিকা করা হচ্ছে। সেই তালিকা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে। এরপর বরাদ্দ এলে আমরা মেরামতের কাজ শুরু করবো।