খুলনায় যে কারবালা রচনা করা হলো এটা নজিরবিহীন : রিজভী

খুলনায় যে কারবালা রচনা করা হলো এটা নজিরবিহীন : রিজভী

প্রথম নিউজ, খুলনা: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, গতকাল খুলনায় যে কারবালাটি রচনা করা হলো এটি নজিরবিহীন। পুলিশের হামলায় খুলনায় ৩০০ নেতাকর্মী আহত হয়েছে। অর্ধশত নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া ১৩০০ নেতাকর্মীর নামে মামলা করা হয়েছে। অন্যান্য জেলাতে তো সমাবেশ হয়েছে। বাধা দিয়েছে নানাভাবেই। কিন্তু এভাবে প্রকাশ্যে পুলিশ গুলি করে নেতাকর্মীদের পঙ্গু বানাবে, এটা কোনো গণতন্ত্রের ভাষা? এটা আজকে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হিসেবে দেখা দিয়েছে জনগণের কাছে। জনসভা হচ্ছে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি। এখানে সংঘাত-সংঘর্ষের তো কিছু নেই। কিন্ত পায়ে পাড়া দিয়ে খুলনার পুলিশ-প্রশাসন এই রক্তাক্ত সংঘর্ষের সৃষ্টি করেছে। এই সহিংস সন্ত্রাসের জন্য দায়ী খুলনার পুলিশ প্রশাসন।
শনিবার (২০ মে) বিকেল সাড়ে ৪টায় খুলনা প্রেসক্লাবে ভিআইপি লাউঞ্জে জেলা ও মহানগর বিএনপি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী প্রায় বলে থাকেন যে উনি গণতন্ত্র দিয়েছেন, উনিই গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছেন। অন্য কোনো দেশ যারা স্যাংশন দেবে আমরা তাদের কাছ থেকে পণ্য কিনবো না। কিন্তু আবার দেখা যাচ্ছে যে সেই দেশের ফার্নেস অয়েল থেকে শুরু করে অন্যান্য জ্বালানির জন্য সেই দেশের কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করছে। এই দ্বিচারিতা এবং দ্বিমুখী কথা-বার্তা এই সরকারের সাজে, কারণ এদের কোনো গণভিত্তি নেই। 
গত শুক্রবার খুলনায় বিএনপির সমাবেশে পুলিশ বিনা উস্কানিতে গুলি চালিয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সাজানো-গোছানো ও আদরে প্রতিপালিত প্রশাসন দিয়ে এই নিষ্ঠুরতা চালাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যে কারণেই খুলনায় পায়ে পারা দিয়ে পুলিশ আক্রমণ চালিয়ে অসংখ্য নেতাকর্মীকে আহত করেছে।  গত শুক্রবার বিএনপির খুলনায় বিভাগীয় জনসমাবেশে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ও গুলিতে আহত শতাধিক নেতাকর্মীদেরকে দেখতে ও খোঁজ-খবর নিতে তাদের বাড়িতে এবং হাসপাতালে ছুটে যান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। 
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে আজ শনিবার সকালে ঢাকা থেকে খুলনায় ছুটে যান রিজভী। তিনি খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন হাসপাতালে প্রায় ৩৫ জন নেতাকর্মীকে স্বশরীরে গিয়ে দেখা করে খোঁজ-খবর নেন এবং তাদের চিকিৎসা বিষয়ে অবহিত হন। আহতদের প্রায় প্রত্যেককেই তিনি তারেক রহমানের পক্ষে সহায়তা দেন। এসময় তিনি যুবদল, ছাত্রদল ও বিএনপির আহত নেতাকর্মীদের ডেকে খোঁজ নেন এবং তাদের সান্ত্বনা দেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম, সহপ্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমীর এজাজ খান, খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল ইসলাম মনা, বাগেরহাট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এমএ সালাম, বিএনপি নেতা আশরাফুল আলম নান্নু, চৌধুরী শফিকুল ইসলাম হোসেন, বিএনপি নেতা বাপ্পীসহ স্থানীয় অনেক নেতাকর্মী। 


পরে বিকেলে খুলনায় এক সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর ভোটারবিহীন অবৈধ সরকারের নির্যাতন নিপীড়ন থেমে নেই। তাদের বর্বর নির্যাতনে অনেকেই মৃত্যু পথযাত্রী। অনেককে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে। খুলনায় হামলার যে ঘটনা বর্বর ঘটনা ঘটেছে তা নজিরবিহীন। পুলিশ বাধা দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদরকে পঙ্গু বানাবে এটা শেখ হাসিনার কোন গণতন্ত্রের নমুনা? 
তিনি বলেন, বিএনপির সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা অবনতির কী এমন ঘটনা ঘটেছে। নেতাকর্মীরা সমবেত হবেন, স্লোগান দিবেন বক্তব্য দিবেন এটা তো স্বাভাবিক ব্যাপার। এখানে সংঘাতের কী হলো? কিন্তু খুলনার পুলিশ-প্রশাসন পায়ে পারা দিয়ে রক্তাক্ত সংঘাতের সৃষ্টি করেছে। এই সহিংস সংঘাতের জন্য খুলনার পুলিশ প্রশাসন দায়ী। খুলনার যিনি কমিশার, অতিরিক্ত কমিশনার, এখানকার ওসি দায়ী।
রিজভী বলেন, অনেকেই বলেন, খুলনা নাকি গণভবনের এক্সটেনশন কিংবা শেখ পরিবারের আরেকটি স্বর্গরাজ্য। কারণ শেখ পরিবারের যিনি প্রধানমন্ত্রী তার অনেক ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজন এই খুলনায় থাকেন এবং তারা বিভিন্নভাবে রাজনৈতিক ক্ষমতা ভোগ করেন। তাদেরকে খুশি করতে ও মনোবাঞ্ছা পূরণের জন্য পুলিশ প্রশাসন ন্যাক্কারজনক ক্রীতদাসের ভুমিকা পালন করেছে। একটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশকে বানচাল করতে তারা পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। ছাত্রদল, যুবদল, বিএনপির অনেক নেতাকর্মীকে গুলি লেগেছে। অনেকেই হাসপাতালের আইসিইউতে কাতরাচ্ছে। 
তিনি আরও বলেন, আমরা আটা চালনি যেমন দেখি যে, ফুটা থাকে তেমনই নেতাকর্মীদের পিঠ চালনির মতো ফুটা হয়েছে। এটা তো শেখ হাসিনার অবদান! সারাদেশে পুলিশের হাতে অস্ত্র দেওয়া হয়েছে। তাদের গুলিতে অনেকের জীবন যাচ্ছে। অসংখ্য নেতাকর্মীর চোখ হারাচ্ছে। এদেরকে পৃথিবীর আলো থেকে বঞ্চিত ও অকর্মণ্য করার কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন শেখ হাসিনা। এজন্যই তার সাজানো-গোছানো আদরে প্রতিপালিত প্রশাসন দিয়ে এই নিষ্ঠুরতা চালাচ্ছেন। আজ শনিবারও পটুয়াখালী, রাজবাড়ি, নেত্রকোণায় বিএনপির সমাবেশে হামলা চালিয়ে নেতাকর্মীদের আহত ও গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।