প্রথম নিউজ, হাসানুল কবির নাজির, কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে তিন বংশের বিরোধ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এবং জমি নিয়ে নতুন করে বিরোধে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা ও পেট্রোল ঢেলে ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় ১০০-১২০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রধান আসামি আওয়ামী লীগ নেতাসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এদিন দুপুরে মোজাম মণ্ডল বাদী হয়ে ৭৩ জনের নামসহ ১০০-১২০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন। গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা হলেন, আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম শেলী দেওয়ান, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তোফায়েল দেওয়ান।
তারা দৌলতপুর উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের চিলমারী আমদানী ঘাট এলাকার বাসিন্দা ও দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মৃত আব্দুল জব্বার দেওয়ানের ছেলে। শেলী দেওয়ান দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। আর তোফায়েল দেওয়ান চিলমারী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। শুক্রবার সন্ধ্যা কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং এলাকা থেকে শেলি দেওয়ানকে এবং রাতে চিলমারী এলাকা থেকে তোফায়েল দেওয়ানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
এদিকে তাদের গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে পরিবার ও স্বজনরা। মিথ্যা, বানোয়াট ও যড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেফতারকৃত সাইফুল ইসলাম শেলী দেওয়ান এবং তোফায়েল দেওয়ানের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাব-১২ কুষ্টিয়া ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার মো. তৌহিদুল মবিন খান। মবিন খান জানান, চিতলমারী গ্রামে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারার চেষ্টার ঘটনায় এজাহারনামীয় এক নম্বর আসামি শেলি দেওয়ান ও তিন নম্বর আসামি তোফায়েল দেওয়ানকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের চিলমারী বাজারপাড়ায় জমি সংক্রান্ত বিরোধ, পূর্ব শত্রুতা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মণ্ডল গ্রুপের লোকজনদের ওপর হামলা ও বসতঘরে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় প্রতিপক্ষ। এতে ৫ জন গুরুতর দগ্ধসহ অন্তত ২০ থেকে ২৫ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে চিলমারী গামের দবির মণ্ডলের ছেলে দিনু মণ্ডল (৬৫), তার ছেলে ফারুক মণ্ডল (২২) ও তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে আকতার মণ্ডল (৪০) শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে, আব্দুর রহমান কাজীর ছেলে সাইদুল কাজী (৩০) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, বিশু মণ্ডলের ছেলে ফজলু ডাক্তার ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে এবং জখম ও দগ্ধ প্রায় ১২ জন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ সময় মণ্ডল গ্রুপের মুজাম্মেল, ইকবাল, রানা, ইকলাস ও জহুরুল মণ্ডলের বাড়িতে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেওয়া হয়। এতে বেশ কয়েকজন দগ্ধ হন এবং অন্যদের এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করা হয়। খবর পেয়ে দৌলতপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ বিষয়ে চিলমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান বলেন, খা ও শিকদার গ্রুপের সঙ্গে মণ্ডল গ্রুপের বিরোধ চলছিল। বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত খা ও শিকদার গ্রুপের লোকজন দফায় দফায় মণ্ডল গ্রুপের লোকজনের বাড়িতে হামলা করে। এ সময় পিস্তল, ককটেল, পেট্রোল বোমা ও রামদাসহ বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষের লোকজনদের কুপিয়ে আহত করা হয়। এছাড়া কয়েকটি ঘরে আগুন দেওয়া হয়। এতে প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন আহত হয়েছেন। সবার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের মধ্যে ৪ জনকে ঢাকা নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে দৌলতপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান বলেন, ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। পূর্ব শত্রুতার জেরে হামলা পাল্টা হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।