কনস্টেবলকে রেখে ইলিশ নিয়ে পালালেন পুলিশ কর্মকর্তা

কনস্টেবলকে রেখে ইলিশ নিয়ে পালালেন পুলিশ কর্মকর্তা

প্রথম নিউজ, শরীয়তপুর : দেশে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ইলিশ ধরা, বিক্রি ও পরিবহনে ২২ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা চলছে। ইলিশ পেলেই জব্দ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ ধরায় আটক করা হচ্ছে জেলেদের। 

রোববার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে শরীয়তপুরের গোসাইরহাট থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) রবিউল ইসলাম, কনস্টেবল ইকবাল হোসেন ও  হাটুরিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আসাদুজ্জামান অভিযানে যান। উপজেলার নলমুড়ি ইউনিয়নের চরমনপুরা এলাকায় পুলিশ দেখে ভ্যানে মাছ ফেলে পালিয়ে যান জেলেরা। ছোটবড় মিলিয়ে ২০টি ইলিশ মাছ মোটরসাইকেলে নিয়ে যাচ্ছিলেন এসআই রবিউল ইসলাম ও কনস্টেবল ইকবাল হোসেন। চরমনপুরা ব্রিজের ওপর সাংবাদিকরা ছবি তুলে প্রশ্ন করতেই কনস্টেবল ইকবাল হোসেনকে ফেলে রেখে ইলিশ মাছ নিয়ে পালিয়ে যান এএসআই রবিউল ইসলাম। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশ জেলেদের থেকে ইলিশ মাছ কেড়ে নেয়, পকেটে টাকা পয়সা যা পায় তা নিয়ে চলে যায়। কিন্তু জেলেদের ছেড়ে দেয়। মাছগুলো তারা গোপনে বিক্রি করে ও নিজেদের জন্য নিয়ে যায়। তারই অংশ হিসেবে আজ জেলেদের থেকে মাছ নিয়েছিল পুলিশ। মাছগুলো জব্দ না করে তারা নিয়ে যাচ্ছিল। বিষয়টি সাংবাদিকরা টের পেলে এক পুলিশ অপর পুলিশ সদস্যকে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।

চরভূঁয়াই গ্রামের রোমান শেখ ঢাকা পোস্টকে বলেন, মানুষ ইলিশ মাছ নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ তাদেরকে থামিয়ে পাশে নিয়ে পকেটের টাকা পয়সা ও ইলিশ নিয়ে যায়। এখন পর্যন্ত কাউকে ইলিশ মাছসহ গ্রেপ্তার করতে দেখিনি তাদের।

কনস্টেবল ইকবাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি এ বিষয়ে কোনো কথা বলব না। আপনি আমার সিনিয়র স্যারের (হাটুরিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ) সঙ্গে কথা বলুন।

হাটুরিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আসাদুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভ্যানে মাছ রেখে জেলেরা পালিয়ে যাওয়ার পর মাছগুলো আমরা নিয়ে এসেছি। জব্দ তালিকা করা হয়নি। ওসি স্যারকে জানিয়ে আমরা মাছ নিয়ে যাচ্ছি। ওই পুলিশ সদস্য বুঝতে না পেরে দৌড় দিয়েছেন। পরে জব্দ তালিকায় মাছগুলো দেখানো হবে। 

এদিকে এএসআই রবিউল ইসলাম বলেন, ভাই, আমার চাকরিটা যাবে। বিষয়টি বাদ দেন। 

গোসাইরহাট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসলাম শিকদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাছ পাওয়া গেলে পুলিশ জব্দ করে মাছগুলো নিয়ে আসতে পারে। তবে তাদের আগে জব্দ তালিকা করতে হবে। এরপর মাছগুলো এতিমখানায় দিয়ে দেবে। দৌড় কেন দেবে তারা। 

বাংলাদেশ থেকে ভারতে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। দেশে ইলিশের প্রজনন মৌসুমের কারণে বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) থেকে আগামী ২ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ ধরা ও বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। এ কারণে ভারতে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ রয়েছে।

এ দিকে সময় স্বল্পতা আর ইলিশের সংকটের কারণে এ বছরও দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে ভারতে ইলিশ রপ্তানির টার্গেট পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। বেনাপোল বন্দর সূত্রে জানা গেছে, সরকার অনুমোদিত ৩ হাজার ৯৫০ টনের মধ্যে গত ২০ দিনে ভারতে ৬০৯ টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। সব ইলিশ রপ্তানি করতে আরও সময় বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। 

রপ্তানিকারক সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের চাহিদার বিপরীতে ইলিশ আহরণ কমে যাওয়ায় সরকার দেশের বাইরে রপ্তানি বন্ধ করেছে। তবে দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে সরকার প্রতি বছর নির্দিষ্ট পরিমাণ ইলিশ কেবল ভারতে রপ্তানি করে আসছে। পূজার সময়কালে অতিথি আপ্যায়নে বাংলাদেশের ইলিশের ভরসায় থাকে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা। এ বছর দেশের ৭৯টি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে ৩ হাজার ৯৫০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেয় সরকার।

গত ২১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় ইলিশ রপ্তানি। এ পর্যন্ত ২৯টি প্রতিষ্ঠান ৬০৯ টন ইলিশ রপ্তানি করতে পেরেছে। কিন্তু এরই মধ্যে ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন প্রজনন মৌসুমের কারণে ইলিশ ধরা ও বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞায় রপ্তানি বন্ধের কবলে পড়েছে। এতে নির্দিষ্ট পরিমাণ ইলিশ রপ্তানিতে প্রতিবন্ধকতা এসেছে। রপ্তানিকারকরা বাকি ইলিশ পাঠাতে সময় বৃদ্ধির আবেদন করবেন বলে জানিয়েছেন।

ইলিশ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সততা ফিসের রেজাউল ইসলাম বলেন, সময় না বাড়ালে সব ইলিশ রপ্তানি সম্ভব হবে না। যদি সরকার সময় বৃদ্ধি করে তবেই বাকি ইলিশ পাঠানো যাবে।

বেনাপোল মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের ফিশারিজ কোয়ারেন্টাইন অফিসার মাহাবুবুর রহমান জানান, প্রজনন মৌসুমের কারণে ১২ অক্টোবর থেকে  আগামী ২২ দিন ভারতে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ থাকবে। এতে এ বছর সব ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে না। গেল বছর ইলিশ রপ্তানির অনুমতি ছিল ৩ হাজার টন। তখনও সময় কমের কারণে ১ হাজার ৩০০ টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছিল।