ওবায়দুল কাদের কি শুনেন শ্রমজীবী মানুষের হাহাকার- রিজভী আহমেদ

সোমবার (২০ মে) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক চা দিবস ও মুল্লুক চলো দিবস উপলক্ষে এক মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলে।

ওবায়দুল কাদের কি শুনেন শ্রমজীবী মানুষের হাহাকার- রিজভী আহমেদ

প্রথম নিউজ, অনলাইন: যাদের ঘড়ি এবং সানগ্লাসের দাম লক্ষাদিক টাকা তারা কি করে ব্যাটারি চালিত রিক্সাচালকদের করুন কাহিনী জানবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।  আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, 'হঠাৎ করে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা-ভ্যান বন্ধ করে দিলেন ওবায়দুল কাদের সাহেব। উনি (ওবায়দুল কাদের) নিজেই বলেছেন তার হাতের যে ঘড়ি এই ঘড়ির দাম অনেক টাকা। অনেক মানুষ বলে ৫০ লাখ টাকা। তিনি যে সানগ্লাস পড়েন সেটারও অনেক দাম লক্ষ টাকা ছাড়িয়ে যাবে। যার সানগ্লাসের দাম এত ঘড়ির দাম ৫০ লাখ টাকার উপরে তিনি এই ব্যাটারী চালিত রিক্সাওয়ালাদেরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেন। তিনি কিভাবে তাদের মর্ম বুঝবেন। উনি কি জানেন এরা একবেলা খায় নাকি দুই বেলা খায়। ওবায়দুল কাদের কি জানেন তারা যে পরিশ্রম করে রিক্সা চালায় সেই টাকা দিয়ে, সেই উপার্জন দিয়ে তার সন্তানদেরকে স্কুলে পাঠাতে পারে কিনা। 

সোমবার (২০ মে) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক চা দিবস ও মুল্লুক চলো দিবস উপলক্ষে এক মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলে।
ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের উদ্দেশ্যে রিজভী বলেন, 'তাদের সন্তানরা তো বিভিন্ন দেশে বসবাস করছে। কেউ বলে দুবাইয়ে, কেউ বলে কানাডায়, কেউ বলে মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম এবং বিভিন্ন ধরনের বাড়ি তারা সেখানে নির্মাণ করেছেন। তারা তো এদের বিষয়ে জানেনা তারা এক বেলা চাল কিনতে পারছে না যে দেশে আলুর দাম এই সিজনেও ৫০ টাকা এটা কি ওবায়দুল কাদের সাহেব জানেন? ওবায়দুল কাদের সাহেব জানেন না, উনার নেত্রী শেখ হাসিনাও জানেন না। কারণ ওনাদের প্রত্যেকটি নেতা এবং তাদের আত্মীয়-স্বজন বিদ্যুৎ খাত থেকে কোটি কোটি টাকা নিয়ে গেছে, বিভিন্ন উন্নয়নের নামে কোটি কোটি টাকা পাচার করেছেন। শুধু টাকা পাচারের এই আরব্য উপন্যাসের কাহিনী প্রতিদিন আমরা সংবাদপত্রের পাতায় পড়ছি। সুতরাং তারা কি করে ওই ব্যাটারি চালিত রিক্সাওয়ালাদের করুন কাহিনী জানবে। কি করে জানবে ওবায়দুল কাদের সাহেবরা।
ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, 'এই ব্যাটারি চালিত রিকশা নিশ্চয়ই কোন দেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে এই আমদানি করার লাইসেন্স কে দিল, ঢাকাসহ প্রতিটি শহরেই আমি দেখেছি এই ব্যাটারি চালিত যান চলাচল। তাদেরকে এই রোড পারমিশন কারা দিল? আপনার সরকারই দিয়েছে এগুলো যারা ইমপোর্ট করেছে তারা তো আওয়ামী লীগের লোক। তারা তো আওয়ামী লীগের ব্যবসায়ী। আর যারা ভাড়া নিয়ে চালাচ্ছে তাদেরই দোষ হয়ে গেল? আপনাদের পেট ভরে বদ হজম হবে তারপরও আপনাদের টাকা দরকার। তারপরও এরা কিন্তু এমনি এমনি চালাতে পারে না। আপনার প্রশাসনের লোকদেরকে টাকা দিতে হয়। স্থানীয় যুবলীগ-ছাত্রলীগকে চাঁদা দিতে হয়। এত ঘাটে ঘাটে টাকা দেওয়ার পরও যতটুকু তাদের উপার্জন হয় সেটা দিয়ে কোনরকমে তারা দিন যাপন করে। আর এদের উপরেই আপনারা চালাচ্ছেন স্টিম রোলার, এদের উপরেই আওয়ামী লীগের তরবারি মাথার উপর ঝুলছে। ওবায়দুল কাদের সাহেব আপনি গরিবের আহার কেড়ে নিয়ে, ভাত কেড়ে নিয়ে আপনি রাজত্ব করবেন, আপনারা স্বর্গে বসবাস করবেন ওই স্বর্গ থেকে আপনাদের বিদায় নিতেই হবে। ওই স্বর্গে আপনারা আর বেশি দিন বসবাস করতে পারবেন না।
শেয়ার বাজারেও নতুন করে ধ্বস নেমেছে উল্লেখ করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, 'তরুণ শিক্ষিত যুবকরা, অল্প আয়ের মানুষেরা শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করে। সেই শেয়ার মার্কেটেও আবার নতুন করে এমন পতন হচ্ছে ওই পতন থেকে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না শেয়ার মার্কেট। এতে বেকার হচ্ছে তরুণরা-যুবকরা। তারা এখন সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন, ফতুর হয়ে গেছেন।
তিনি বলেন, 'শেখ হাসিনা অনেক কথা বলেন, আমি এই করেছি সেই করেছি এত উন্নয়ন করেছি এগুলোতো উনার হচ্ছে গলাবাজি। আর উনার নেতা-মন্ত্রীদের চাপাবাজির কথা। দিন দিন কত মানুষকে যে ওনারা গরীব বানিয়েছেন গরিব থেকে চরম গরিব বানাচ্ছেন সেইটা তারা কোনদিনও বলেননা। তারা বলবেন কি করে এবারও বাজেটে ভর্তুকি বাড়ানো হচ্ছে। বিদ্যুৎ খাত থেকে সব খাতে, কারণ ভর্তূকি না দিলে বিদ্যুৎখাতের যে দেনা সেই দেনা তারা পরিশোধ করতে পারবে না। আইএমএফ থেকে শুরু করে অন্যান্য আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদেরকে শর্ত দিচ্ছে। শর্ত দেওয়ার পরেও তারা ভর্তুকি বাড়াচ্ছে। এই ভূর্তকি কে দেয় এটা কি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার টাকা দিয়ে চলে? এই গরিব মানুষ, এই শ্রমজীবী মানুষদের ঘরের টাকায় এই ভর্তুকি দেয়া হয়। 
রিজভী আরও বলেন, 'আজকের এই দিনে ঘুমন্ত চা শ্রমিকদের উপর গুলি চালায় ইংরেজ শাসকদের এ দেশীয় তাবেদার পুলিশ বাহিনী। তাদের এই আক্রমণের মধ্য দিয়ে অধিকার আদায়ের যে তীব্র আকুতি, যে আকাঙ্ক্ষা আজও বাংলার আকাশে বাতাসে। আজও বাংলার নদী নালায় যে দাবি প্রবাহিত হয় সেখান থেকে এখনো তাদের আওয়াজ মুছে যায়নি। আজও এ দেশের মানুষ নিপীড়িত, আজও এদেশের মানুষ নির্যাতিত, আজও দেশের মানুষকে এক বেলা খাবারের জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করতে হয়। সেদিনের সেই মুল্লুক চলো আন্দোলন যে শিক্ষা দিয়েছে সেই শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নিপীড়িত-নির্যাতিত শ্রমজীবী মানুষ লড়াই করছে।
জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে এবং প্রচার সম্পাদক মনজুরুল ইসলাম মঞ্জুর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বিএনপি'র চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারি শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির সহ-শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান, সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।