‘এত মৃত্যু দেখে কেউ চুপ থাকতে পারে না’

গতকাল ‘প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন’র  ব্যানারে সকাল ১১টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ করে ৩১টি সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন।

‘এত মৃত্যু দেখে কেউ চুপ থাকতে পারে না’

প্রথম নিউজ, অনলােইন: কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র দেশব্যাপী ‘ছাত্র-জনতা হত্যা, মিথ্যা মামলা ও নির্বিচারে গ্রেপ্তার’র ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলো। এ সময় দায়ী মন্ত্রীদের পদত্যাগসহ জাতিসংঘের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানানো হয়। গতকাল ‘প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন’র  ব্যানারে সকাল ১১টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ করে ৩১টি সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন। ব্যানারে লেখা ছিল সুকান্ত ভট্টাচার্যের কতিবার লাইন ‘স্বজন হারানো শ্মশানে তোদের চিতা আমি তুলবোই’। এতে যোগ দেন সাংস্কৃতিককর্মী, মানবাধিকারকর্মী, সামাজিককর্মী, সাংবাদিকসহ অনেকে।

সমাবেশ শুরুর আগে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের কাছ থেকে মাইক নিয়ে যায় বলে জানান। সমাবেশে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, এতসংখ্যক মৃত্যু দেখে কেউ চুপ করে থাকতে পারে না। চোখ বন্ধ করলেই ওই লাশগুলো দেখতে পাই। আগের বিচারিক তদন্তে আমরা জজ মিয়ার নাটক দেখেছি। তাই আমরা জাতিসংঘের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত চাই। এ সময় তিনি দায়ী মন্ত্রীদের পদত্যাগ, ক্যাম্পাসে নোংরা রাজনীতি বন্ধ এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে অবিলম্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবি জানান।

সমাবেশে দৈনিক সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন ছিল ন্যায়সঙ্গত। সরকার আন্দোলন দমনের জন্য শক্তি প্রয়োগ করে, যার ফলে অসংখ্য লোক মারা যায়। এত বিপুলসংখ্যক মৃত্যুর পরও সরকার দুঃখ প্রকাশ করেনি। বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) সান্মানিক নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারাহ হোসেন বলেন, নিহতের প্রকৃত সংখ্যা জানার অধিকার আমাদের আছে। সরকারের বক্তব্য দেখে মনে হচ্ছে, তারা জীবনের চেয়ে রাষ্ট্রীয় সম্পদ নিয়ে বেশি চিন্তিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, দেশ এখন স্বৈরাচারী শাসনের অধীনে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে হাজারো মানুষ আহত হয়েছে। এতে দুই শতাধিক মানুষ নিহত হন। এসব হত্যাকাণ্ডের দায় সরকারকেই নিতে হবে।

এ সময় বক্তারা হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার দাবি করেন। সমাবেশে চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর ধিক্কার জানিয়ে বলা হয়, আন্দোলনকারীরা শরীরে বুলেট নিয়ে হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ছুটেছে। আন্দোলনকারী বলে তাদের চিকিৎসা দেয়া হয়নি। বক্তৃতার ফাঁকে ফাঁকে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে গান গেয়েছেন ও কবিতা আবৃত্তি করেন। সমাবেশ শেষে একটি শোভাযাত্রা পুরানা পল্টন এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ, ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ, বিবর্তনের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, সাংবাদিক আশরাফ কায়সার প্রমুখ।