ঈদ ঘিরে ইসলামপুরে পাইকারদের ভিড়, বেড়েছে কাপড়ের দাম

এবার ঈদকে লক্ষ্য রেখে শবেবরাতের পর থেকে রমজানের আগ মুহূর্তে সারাদেশের খচুরা বিক্রেতারা কেনাকাটা করেছেন। চ

ঈদ ঘিরে ইসলামপুরে পাইকারদের ভিড়, বেড়েছে কাপড়ের দাম

প্রথম নিউজ, ঢাকা: আসন্ন রমজানের ঈদ ঘিরে দেশের বৃহত্তম পাইকারি কাপড়ের বাজার ইসলামপুরে চলছে জমজমাট বেচাকেনা। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত দেশি কাপড়ের বার্ষিক চাহিদার প্রায় ৬০ শতাংশ এবং বিদেশি কাপড়ের বার্ষিক চাহিদার প্রায় ৪০ শতাংশই পূরণ করে থাকে ইসলামপুরের ব্যবসায়ীরা।

এবার ঈদকে লক্ষ্য রেখে শবেবরাতের পর থেকে রমজানের আগ মুহূর্তে সারাদেশের খচুরা বিক্রেতারা কেনাকাটা করেছেন। চলমান অর্থনৈতিক মন্দায় কাপড়ের দাম বৃদ্ধি ও প্রত্যাশা অনুযায়ী বেচাকেনা না হওয়ার তথ্য দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ঈদকে লক্ষ্য রেখে দুইধাপে বেচাকেনা হয়। শবেবরাতের পর থেকে রমজান পর্যন্ত প্রথম ধাপে বেচাকেনা হয়। ৭ রমজানের পর থেকে ১৫ রমজান পর্যন্ত দ্বিতীয় ধাপে বেচাকেনা হয়। এরপর থেকে ঈদ পর্যন্ত পাইকারি পর্যায়ে ইসলামপুরে তেমন বেচাকেনা থাকে না।

রোববার (১০ মার্চ) সরেজমিনে রাজধানীর ইসলামপুরের গুলশান আরা সিটি, চায়না টাওয়ার, আহসান মঞ্জিল (মিউ.) সুপার মার্কেট, লায়ন টাওয়ার, ওয়ালী উল্ল্যাহ মেনশনসহ আশপাশের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, বাহারি ধরনের কাপড়ে সুসজ্জ্বিত দোকান। ঈদ ঘিরে সারাদেশের চাহিদার মালামাল মজুত রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। সেলোয়ার-কামিজ, থ্রি-পিস, শাড়ি-লুঙ্গি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের থান ও গজ কাপড় দেশি-বিদেশি শার্ট প্যান্ট ও গজ কাপড় সারি সারি করে রাখা হয়েছে।

রমজানের ঈদকে কেন্দ্র করে বাড়তি উন্মাদনা দেখা গেছে এই পাইকারি মার্কেটগুলোতে। সকাল থেকে হাঁক-ডাক দিয়ে শুরু হয় বেচাকেনা। ঢাকার আশপাশ ও বিভিন্ন জেলা থেকে আগত খুচরা ব্যবসায়ীরা দোকানের জন্য পছন্দমতো জামা-কাপড় নিয়ে যাচ্ছেন।

এ বছর মানভেদে দেশি কাপড়ের থ্রি-পিস পাওয়া যাচ্ছে ৬০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত। দেশির কাপড়ের মধ্যে সুতার থ্রি পিসের দাম বেশি। এছাড়াও বাটিক, বুটিক্স, জয়পুরী, নায়রা, মুসলিম কটন, ডিজিটাল প্রিন্ট, এমব্রয়ডারি, জরজেটসহ বিভিন্ন রকমের থ্রি-পিস রয়েছে। একটি জয়পুরী থ্রি-পিস মানভেদে ৫০০ থেকে ৬৫০ পর্যন্ত রয়েছে। প্রিন্টের থ্রি পিস ৪৫০ থেকে শুরু ১৫০০ পর্যন্ত রয়েছে। বুটিক্স, মুসলিম কটন রয়েছে ৬০০ থেকে ১২০০ টাকা। এমব্রয়ডারি পাওয়া যাচ্ছে ৭৫০ থেকে ২০০০ টাকা।

এছাড়াও এবার ক্রেতাদের পছন্দ তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ইনডিয়ান থ্রি-পিস। ইসলামপুরে ১৬০০ থেকে শুরু করে ৪০০০ টাকার পর্যন্ত থ্রি পিস রয়েছে। পপলিন কাপড় বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকা দামে। বিদেশি চায়না ও ইনডিয়ান কাপড়ের মধ্যে মানভেদে ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০ টাকা পর্যন্ত গজ রয়েছে।

ঈদ উপলক্ষে শার্ট ও প্যান্টের কাপড় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি পিস শার্টের কাপড় মানভেদে ৫০০ টাকা থেকে ২০০০ পর্যন্ত রয়েছে। শার্ট প্যান্টের কাপড়ের মধ্যে রয়েছে ফাইন কটন, লিলেন কাপড়, অক্সফোর্ড ফেব্রিক, পপলিন ফেব্রিক কাপড়ের প্যান্ট শার্ট।ঈদ উপলক্ষে পাকিজা, বি প্লাস, স্ট্যান্ডার্ডসহ বিভিন্ন দেশি ব্র্যান্ডের শাড়ি রয়েছে। মানভেদে এসব শাড়ি ৭০০ থেকে ২০০০ পর্যন্ত রয়েছে। লুঙ্গি রয়েছে সর্বনিম্ন ৪০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত।

তবে এই বছর পাইকারি প্রতিটি কাপড়ে ৪০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। তারা বলছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সঙ্গে জামা-কাপড়ের দামও বেড়েছে। প্রতিটি থ্রি-পিস গতবারের চেয়ে ৪০ থেকে ৫০ টাকা বাড়েছে। বিদেশি গজ কাপড়ের দাম বেড়েছে ১২ টাকা। এসব পোশাক খুচরা পর্যায়ে বিক্রি করতে গেলে ক্রেতাদের নাগালের বাইরে সম্ভাবনা থেকে যায়।

ইসলামপুরে জাহাঙ্গীর টাওয়ারের নিচে কথা হয় নোয়াখালীর খুচরা ব্যবসায়ী মো. বশরের সঙ্গে। তিনি  বলেন, গতবারের চেয়ে এবার থ্রি পিস, থান কাপড়ের দাম বেড়েছে। ইন্ডিয়ান অরবিন্দ কাপড়ের কাটা কাপড় ও থ্রি পিস এবার গ্রামের সাধারণ ক্রেতারা কিনতে হিমশিম খাবে। মোটামুটি মানের শাড়ি ৭০০/৮০০ এর নিচে নাই।

এদিকে দাম বৃদ্ধির কথা স্বীকার করেছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরাও। এসটেক্স ফ্যাশনের ম্যানেজার মো. শহিদ বলেন, সুতির জিনিসের দাম বেড়েছে। এছাড়াও রঙের দাম, কারিগরের দামও বেশি। বিদেশি কাপড়ের ক্ষেত্রে ভ্যাট, ট্যাক্স আর ক্যারিং খরচ বেড়ে যাওয়া কিছুটা দাম বেড়েছে।

কাজী ফ্যাশনের জাকির হোসেন বলেন, ঈদ মৌসুমের আগে বেচাকেনা ভালো হয়নি। তবে ঈদ উপলক্ষে অনেক প্রস্তুতি নিয়েছি, প্রত্যাশা অনুযায়ী বেচাকেনা হচ্ছে না। অন্যান্য বছর দিনে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকাও বিক্রি করেছি। এবার খুচরা বিক্রেতারা কম মাল কিনছে। মানুষ আগে আগে খাবে, চিকিৎসা করাবে, এরপর পোশাক কিনবে। দেশের অর্থনৈতিক সংকট থাকার কারণে মানুষ জামা-কাপড়ের প্রতি খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছে না।

ইসলামপুর বস্ত্র ব্যাবসায়ী সমিতির জয়েন্ট সেক্রেটারি ধানসিঁড়ি ফ্যাব্রিক্সের স্বত্বাধিকারী মিজানুর রহমান  বলেন, তিনমাস হলো বিদেশি কাপড় আমদানির ক্ষেত্রে ভ্যাট বৃদ্ধি করেছে। আমাদের ব্যবসায়িক সমিতি আছে কারো সাথেই যোগাযোগ করেনি তারা। থান কাপড়ে থি-পিসে ৩ ডলার থেকে ৩ ডলার ৭৫ সেন্ট পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে সরকার। ফলে প্রতি গজ কাপড়ে ১০ থেকে ১২ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এভাবে বিক্রি করে খুচরা বাজারে গিয়ে দাম আরও বাড়ে, তখনি বাজার অস্থিরতা সৃষ্টি হয়ে।

তিনি বলেন, করোনার পর থেকে একের পর এক সংকট। এই বছর অর্থনৈতিক সংকটে গুটি কয়েক ব্যবসায়ী ছাড়া খুব বেশি সুবিধা করতে পারবে না। দেশের অর্থনীতি ভালো থাকলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য স্থিতিশীল থাকলে বেচাকেনা এমনেই ভালো হয়।