ইত্যাদিতে প্রদর্শিত বাউফলের মোতালেবের আন্তর্জাতিক সম্মাননা
প্রথম নউজ, ডেস্ক : ২০২১ সালের ১১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক নারী শিশু দিবসে রোটারি ইন্টারন্যাশনাল বিশ্বের ৬ জন রোটারিয়ানকে কর্মপরায়ণ মানুষ হিসেবে নারীর ক্ষমতায়নের চ্যাম্পিয়ন্স উপাধি দিয়ে সম্মানিত করেছে।
মেয়েদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছনতার ক্ষেত্রে অধিক সুযোগ সৃষ্টি, অঙ্গীকার ও বিকাশের পরিবেশ তৈরিতে ভূমিকার স্বীকৃতি স্বরূপ তাদের এ সম্মান দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের বাউফলের একটি বেসরকারি উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা মোতালেব ওয়েজটারস বিশ্বের ৬ জন সম্মানিত ব্যক্তিদের মধ্যে কর্মপরায়ণ মানুষ হিসেবে এ উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। বর্তমানে নেদারল্যান্ডসের নাগরিক হলেও মোতালেবের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার বাউফলের ধুলিয়া গ্রামে।
উল্লখ্য, ১৯৯৫ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর প্রচারিত ইত্যাদিতে মোতালেবের ওপর একটি প্রতিবেদন প্রচার করা হয়েছিল। ১৯৭৬ সালে মাত্র ৫ বছর বয়সে ক্ষুধা ও অভাবের তাড়নায় বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় মোতালেব। এরপর একজন ডাচ্ ভদ্রলোক ধানমন্ডির একটি বেবি হোম থেকে তাকে হল্যান্ড নিয়ে যান।
হল্যান্ডে মোতালেবের ১৭ বছর কেটে যায়। কিন্তু নিজের শিকড়ের খোঁজে বাংলাদেশে বারবার এসে অনেক খোঁজাখুঁজি করে দীর্ঘ দেড় যুগ পরে ১৯৯৪ সালে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব হানিফ সংকেতের সহযোগিতা ও আন্তরিকতায় মোতালিব ওয়েজটারস তার পরিবারকে খুঁজে পান।
মোতালেবের পরিবারকে খুঁজে পাওয়ার ঘটনাটি দেশে এবং বিদেশে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। সে সময় ইত্যাদিতে প্রচারিত প্রতিবেদনে মোতালেব বলেছিলো-সে শুধু তার পরিবারই নয়, তার গ্রামের উন্নয়নেও কিছু করতে চায়। কারণ সে সময় তিনি তার পরিবার, এলাকা, গ্রামের মানুষের অসহায়ত্ব ও জীবনযাত্রা দেখে বিস্মিত ও পীড়িত হন।
১৯৯৫ সালে তিনি তার স্ত্রীসহ বাংলাদেশে তার নিজের এলাকা কালিশুরি, বাউফল উপজেলা, পটুয়াখালী জেলায় একটি বেসরকারি উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মোতালেব তার স্ত্রী দুশীকে নিয়ে গ্রামের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন কল্যাণমুখী কর্মকাণ্ড শুরু করেন। মোতালেব তার এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাস্থ্য সচেতনতা, পয়োনিষ্কাষন এবং বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য গ্রামে কয়েকশত টয়লেট ও নলকূপ স্থাপন করেন। দরিদ্র মানুষের জীবিকা নির্বাহের জন্য পোলট্রি ফার্ম করে দিয়েছেন। নির্মাণ করেছেন মা ও শিশুস্বাস্থ্য ক্লিনিক। শুরু করেছেন এতিম ছেলেমেয়েদের জন্য দুটি এতিমখানা। ২০১৩ সালে মোতালেবের স্ত্রী দুশী মৃত্যুবরণ করেন। স্ত্রীর স্মৃতিকে ধরে রাখতে তিনি হাসপাতালের নাম রাখেন ‘ইনগ্রিড মেমোরিয়াল হাসপাতাল’।
বিভিন্ন সময়ে ইত্যাদিতে ফলোআপ হিসাবে মোতালেবের এই প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দেখানো হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৯ সালের মার্চ মাসে প্রচারিত ইত্যাদির পটুয়াখালী পর্বে আবারো ধুলিয়া গ্রামের মোতালেবের গ্রাম উন্নয়ন কার্যক্রমের অগ্রগতি দেখানো হয়।
এই কয়েক বছরে তার প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুধু এই এক গ্রামেই সীমাবদ্ধ নয়, বিস্তৃতি লাভ করেছে ৮টি উপজেলায়। ইতোমধ্যে এই হাসপাতালের উদ্যোগে ১,২৫,০০০ নারী ও পুরুষকে জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতন করা হয়েছে।
২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের জুলাই পর্যন্ত ফিমেল ক্যান্সার ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে ‘ইনগ্রিড মেমোরিয়াল হাসপাতাল সি অ্যান্ড ট্রিট’ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে তার সংস্থাটি। যে প্রকল্পের মাধ্যমে সার্ভিক্যাল ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতন করা হয, পরীক্ষা করা ও চিকিৎসা করা হয়।
এই প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৮২০০০ জনগনকে সচেতন করা হয়। এছাড়া এ প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন বালিকা বিদ্যালয়ে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা, স্বাস্থবিধি বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
মোতালেবের এই সার্ভিক্যাল ক্যান্সারের উপর সেবামূলক কর্মকাণ্ডের জন্যই তিনি এ বিরল পুরস্কারে ভূষিত হন। নেদারল্যান্ডসের বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল ও পত্রিকাগুলোর প্রথম পাতায় খবরটি গুরুত্বসহকারে প্রকাশ করা হয়েছে। মোতালেব নেদারল্যান্ডসের উডেন ক্লাবের একজন কর্মোদ্যোগী রোটারিয়ান।