ইউএসএআইডি এজেন্সির 'মৃত্যু' হওয়া উচিত, বললেন মাস্ক

ইউএসএআইডি এজেন্সির 'মৃত্যু' হওয়া উচিত, বললেন মাস্ক

প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: ইউএসএআইডি-এজেন্সির দুই শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তা ইলন মাস্কের প্রতিনিধিদের ক্লাসিফাইড উপকরণগুলিতে অ্যাক্সেস করার অনুমতি দেননি। তার জন্য তাদের ছুটিতে পাঠানো হলো। সেইসঙ্গে ক্ষুব্ধ মাস্ক বলেছেন, এরকম এজেন্সির মৃত্যু হওয়া উচিত। মাস্ককে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প সরকারের দক্ষতা বিভাগের (DOGE) নেতৃত্ব দেয়ার জন্য নিযুক্ত করেছেন। 

কর্মকর্তারা সংস্থার সুরক্ষিত এলাকায় টাস্ক ফোর্সের সদস্যদের প্রবেশাধিকার না দেয়ায় ইউএসএআইডিকে একটি ‘অপরাধী সংস্থা’ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন মাস্ক। এরপরেই মাস্ক তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ লেখেন, সংস্থার মৃত্যুর সময় উপস্থিত। একাধিক মার্কিন মিডিয়া আউটলেট নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ইউএসএআইডি-এর নিরাপত্তা পরিচালক জন ভুরহিস এবং তার ডেপুটি ব্রায়ান ম্যাকগিল, নিরাপত্তা ছাড়পত্রের অভাবের কারণে DOGE কর্মীদের সুরক্ষিত এলাকায় প্রবেশ করতে দেননি। তারপরেই তাদের ছুটিতে পাঠানো হয়। ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের পর DOGE ( সরকারি বিভাগ নয়) এর প্রতিনিধিরা শেষ পর্যন্ত ক্লাসিফাইড উপকরণগুলিতে অ্যাক্সেস করতে সক্ষম হয়েছিল। হোয়াইট হাউসের কমিউনিকেশন ডিরেক্টর স্টিভেন চেউং অস্বীকার করেছেন যে DOGE কর্মীরা সুরক্ষিত এলাকায় অ্যাক্সেস পাওয়ার চেষ্টা করেছিল। গোটা ঘটনাটিকে তিনি ‘ভুয়া খবর’ এবং ‘সত্য নয়’ বলে অভিহিত করেছেন।

এক্স-এ একটি পোস্টে চেউং বলেছেন এই মিডিয়া এমন খবর করে যা বিশ্বাসযোগ্য নয়। কেটি মিলার, যিনি DOGE তে কাজ করেন, তিনি টাস্কফোর্সের প্রবেশের চেষ্টাকে স্বীকার করেছেন সেইসঙ্গে , এক্সে লিখেছেন, ‘সঠিক ছাড়পত্র ছাড়া কোনও ক্লাসিফাইড উপাদান অ্যাক্সেস করা হয়নি’।

ঘটনাটি উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে যে ট্রাম্প, ইউএসএআইডিকে আমূলভাবে পরিবর্তন করার, এমনকি পুরোপুরি ভেঙে দেয়ার পরিকল্পনা করছেন। এরমধ্যেই শনিবার, ইউএসএআইডি ওয়েবসাইট অফলাইনে চলে যায়। ডেলাওয়্যার রাজ্যের ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর ক্রিস কুনস এক্স-কে লিখেছেন - ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইউএসএআইডি কর্মীদের হয়রানি ও ছাঁটাই করার জন্য দুই সপ্তাহ অতিবাহিত করেছেন এবং এখন তার দল এজেন্সিকে পুরোপুরি ধ্বংস করার চেষ্টা করছে। এরা দেশপ্রেমিক আমেরিকান যারা সারা বিশ্বে আমাদের নেতৃত্ব প্রচার করে। তারা আমাদের নিরাপদ করে তোলে। ট্রাম্পের কাছে আমরা নিরাপদ নই।’

জেরেমি কোনিন্ডিক, যিনি ২০১৩ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত ইউএসএআইডি-এর ইউএস ফরেন ডিজাস্টার অ্যাসিসট্যান্স অফিসের পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন, বলেছেন যে কংগ্রেসের একটি আইন ছাড়াই ইউএসএআইডিকে নির্মূল করা বেআইনি এবং মার্কিন সংবিধানে বর্ণিত ক্ষমতার লঙ্ঘনের সমতুল্য। যদি ট্রাম্প এতে সফল হন এবং কংগ্রেস তা মেনে নেয় তাহলে বলতে হয় অন্ধকার দিন আসন্ন।'

ডেমোক্রাট  আইনপ্রণেতারাও নির্বাচিত পদে না থাকা সত্ত্বেও সরকারের উপর মাস্কের প্রভাব সম্পর্কে শঙ্কার কথা ব্যক্ত করেছেন। নিউ ইয়র্কের কংগ্রেসওম্যান আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ এক্সে লিখেছেন, এটি একটি অশনি সংকেত। জনগণ ডনাল্ড ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছে- ইলন মাস্ক নয়। একজন অনির্বাচিত বিলিয়নিয়ার তার নিজের উদ্দেশ্য নিয়ে, মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছেন তা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি গুরুতর হুমকি। 

সম্প্রতি ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছিলেন যে, তার প্রশাসন ভবিষ্যতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ইউএসএআইডি থেকে ‘উগ্র মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিদের’ বের করে দেবে। পরে দক্ষিণ আফ্রিকাকে সাহায্যের প্রসঙ্গ উঠলে ট্রাম্প ভবিষ্যত সেখানে তাদের সমস্ত তহবিল বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দেন। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা গত সপ্তাহে একটি বিতর্কিত আইনে স্বাক্ষর করেছেন যা কিছু ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ ছাড়াই শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের জমি বাজেয়াপ্ত করার অনুমতি দেয়।

তারই প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত। মার্কিন সরকারের তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ আফ্রিকাকে প্রায় ৪৪০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা বরাদ্দ করেছে। ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে দক্ষিণ আফ্রিকার নতুন আইন প্রসঙ্গে লিখেছেন, ‘এই পরিস্থিতির সম্পূর্ণ তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তহবিল স্থগিত থাকবে’।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনও পর্যন্ত বিশ্বের বৃহত্তম বৈদেশিক সহায়তার উৎস, যদিও তার ব্যয়ের ১ শতাংশেরও কম সহায়তায় যায়। অন্যান্য কিছু দেশ বরং তাদের বাজেটের অনুপাত হিসাবে আরও বেশি দেয়। ওয়াশিংটন ২০২৩ সালে প্রায় ১৮০টি দেশে ৭২ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক সহায়তা দিয়েছে, যার অর্ধেকেরও বেশি ইউএসএআইডির মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে। সূত্র : আলজাজিরা