আ.লীগ পুরনো কায়দায় ত্রাস সৃষ্টি করছে: ফখরুল

তিনি বলেন, ‘‘ যারা জোর করে ক্ষমতা দখল করে থাকে তারা কী ক্ষমতা ছেড়ে দেয়। এটা আদায় করতে হবে, সেটা জনগনের শক্তিতেই আদায় করতে হবে। আমাদের তো কোনো শক্তি নেই, শক্তি একটাই সেটা হচ্ছে জনগণ। 

আ.লীগ পুরনো কায়দায় ত্রাস সৃষ্টি করছে: ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

প্রথম নিউজ, ঢাকা: ক্ষমতায় টিকে থাকতে সরকার দেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘ক্ষমতায় টিকে থাকতে বিএনপি নেতা-কর্মীদের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ধমকাচ্ছেন। আপনাদের ভয়ানক পরিণতি হবে। সেই ভয়ানক পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দেন। গুম-হত্যা বন্ধ করেন। খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেন। তা না হলে আপনাদের কোনো দিন মুক্তি হবে না।

আজ শুক্রবার (৩ জুন) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সভায় তিনি এ সতর্কবার্তা দেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪১ তম মৃত্যুবার্ষিকী এবং জাগপা প্রতিষ্ঠাতা শফিউল আলম প্রধান এর পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আগ্রাসন প্রতিরোধ ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় করণীয় 'শীর্ষক আলোচনার আয়োজন করে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি জাগপা।

অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে সতর্ক করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমি ওবায়দুল কাদেরকে সতর্ক করতে চাই। আপনারা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেন না। আপনারা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে আসুন। গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করুন। মানুষকে কথা বলতে দিন। অধিকার প্রয়োগ করতে দিন।’

সরকার পতন আন্দোলনে ‘বৃহত প্লাটফর্ম’ গড়তে ‘বাম-ডান রাজনৈতিক দলগুলো’র ঐক্য চান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘‘ যারা জোর করে ক্ষমতা দখল করে থাকে তারা কী ক্ষমতা ছেড়ে দেয়। এটা আদায় করতে হবে, সেটা জনগনের শক্তিতেই আদায় করতে হবে। আমাদের তো কোনো শক্তি নেই, শক্তি একটাই সেটা হচ্ছে জনগণ। আসুন, সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে যে ঐক্য প্রক্রিয়া শুরু করেছি, সেই ঐক্য প্রক্রিয়াকে আমরা সবাই সফল করি। আমরা খুব পরিস্কার করে বলেছি যে, এটা দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দলের, বাম-ডান হোক, যেটাই হোক আমরা তাদেরকে একখানে নিয়ে এসে এই ভয়াবহ যে সরকার আমাদের বুকের ওপর চেপে বসে আছে তার থেকে আমরা মুক্তি নেই।”

সরকার বিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে গত ২৪ মে থেকে বিএনপি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছে। এরমধ্যে মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য, জোনায়েদ সাকির গণসংহতি আন্দোলন, সাইফুল হকের বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাথে বিএনপি মহাসচিব সংলাপ করেছেন। এছাড়া ২০ দলীয় জোটের বাংলাদেশে লেবার পার্টি ও কল্যাণ পার্টির সাথেও সংলাপ শেষ করেছে তারা।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ তারা(আওয়ামী লীগ) অতীতে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিলো। আজকে আবার অলিখিত বাকশাল তারা  চালাচ্ছে গত ১৫ বছর ধরে এবং এখানে তারা বিচার বিভাগ, প্রশাসন, অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গণমাধ্যম, ব্যবসা-বানিজ্য সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে তারা একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। তারা নির্বাচন ব্যবস্থাকেও ধবংস করে দিয়েছে।

‘‘ সেই কারণে আমরা খুব পরিস্কার করে বলেছি যে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে, আওয়ামী লীগের অধিনে আর কোনো নির্বাচন হবে না। এখানে অবশ্যই আওয়ামী লীগকে সরে যেতে হবে। নিরপেক্ষ একটা সরকারের হাতে দায়িত্ব দিতে হবে এবং সেই সরকারের নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে।”

প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪১তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাগপার প্রতিষ্ঠাতা শফিউল আলম প্রধানের ৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।

‘খাদ্যশষ্যের দাম বৃদ্ধি সরকার জড়িত’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ দেশের খাদ্য পণের ঊধর্বগতির প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ আজকে কী হচ্ছে বাজারে? মন্ত্রী নিজে স্বীকার করেছেন সিন্ডিকেটরা দাম বাড়াচ্ছে। তাহলে আপনি আছেন কেনো?...।যারা সিন্ডিকেটকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারো না, যারা দুর্নীতিবাজদেরকে ধরতে পারো না, এই যে, ছোট ছোট আরতদারদেরকে গিয়ে ধরে বেড়াচ্ছো বাজারে গিয়ে।”

‘‘ আসল ব্যাপার তো দেখানে নয়। আসল ব্যাপার তো পত্রিকায় এসে গেছে। বড় বড় কর্পোরেটগুলো এতো বেশি করে চাল কিনছে, চালের দাম বেড়ে যাচ্ছে। বরাবরই তাই নয়। সরকারের প্রশ্রয় ছাড়া, সরকারের মদদ ছাড়া কখনোই এটা করা সম্ভব হয়না। তাই আমরা বার বার করে বলছি যে, সরকারের কারসাজি শুধু নয়, সরকারের সরাসরি সম্পৃক্ততা আজকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করেছে, চালের দাম বৃদ্ধি করেছে।”

‘ক্ষমতাসীনদের সর্তক হওয়ার পরামর্শ’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমি ওবায়দুল কাদের সাহেবেকে( আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) সর্তক করতে চাই যে, আপনারা ইতিহাস থেকে তো শিক্ষা নেন না। এবার একটু শিক্ষা নেন। মনে করুন ১৯৭৪ সালের কথা। তখন দুর্ভিক্ষ হয়েছিলো, খাদ্য শষ্যের দাম বেড়ে গিয়েছিলো। আজকে আবার খাদ্যশষ্যের দাম বাড়ছে, খাদ্যের দাম বাড়ছে এবং মানুষের হাহাকার শুরু হয়েছে। সেই সময়ে যদি আপনি দেওয়ালের লিখন না পড়েন, উদ্যোগ যদি না নেন।এখন ওই সমস্ত উল্টো-পাল্টা কথা বলে লাভ নাই।”

‘‘ আপনারা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে আসুন, গণতন্ত্রের পরিবেশ তৈরি করুন, মানুষের মানুষের কথা বলতে দিন, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করুন। তা নাহলে আপনাদের যে পরিণতি হবে। সেই ভয়ানক পরিণতি যেন না হয় এখন থেকে জনগনের অধিকারগুলো ফিরে দেন, আপনারা মানুষ হত্যা বন্ধ করেন, গুম করা বন্ধ করেন, মিথ্যা মামলা দেয়া বন্ধ করেন এবং বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেন। তা না হলে আপনাদের কোনো দিন কোন মুক্তি হবে না। এটা হচ্ছে মূল কথা।”

জাগাপার সভাপতি খন্দকার লুতফর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এসএম শাহাদাতের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টি(কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, বিএনপির আমান উল্লাহ আমান, খায়রুল কবির খোকন, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, এলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, ডিএলের সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, জাগপার আওলাদ হোসেন শিল্পী, ইউসুফ আলী হুমায়ুন কবির, আমির হোসেন আমু প্রমূখ নেতারা বক্তব্য রাখেন।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom