আনসার বাহিনীকে আটক ও তল্লাশির ক্ষমতা দেওয়া সংবিধান পরিপন্থি: সুব্রত চৌধুরী
সুপ্রিম কোর্ট বারের দক্ষিণ হলে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের বিএনপিপন্থি নির্বাচিত সদস্যদের আয়োজনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: পুলিশ, র্যাবের ক্ষমতা খর্ব করে আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্যদের অপরাধীকে আটক, দেহ তল্লাশি ও মালামাল জব্দের ক্ষমতা দেওয়া সংবিধান পরিপন্থি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি, জামায়াত ও অন্যান্যা আইনজীবীদের সমন্বয়ে গঠিত ল’ইয়ারস ফ্রন্টের কো কনভেনার সিনিয়র অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী।
বুধবার (২৫ অক্টোবর) সুপ্রিম কোর্ট বারের দক্ষিণ হলে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের বিএনপিপন্থি নির্বাচিত সদস্যদের আয়োজনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন মন্তব্য করেন। এ সময় তিনি আনসার বাহিনীকে রক্ষী বাহিনীর সঙ্গে তুলনা করেন। যদিও এখনো বিলটি পাশ হয়নি, সংসদে উপস্থাপন করা হয়েছে। এর আগেই এটি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।
এর আগে অপরাধীকে আটক, দেহ তল্লাশি ও মালামাল জব্দের ক্ষমতা পাচ্ছেন আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্যরা। পাশাপাশি বাহিনীতে বিদ্রোহের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করে ‘আনসার ব্যাটালিয়ন বিল-২০২৩’ সংসদে উত্থাপন করা হয়।
সোমবার (২৩ অক্টোবর) জাতীয় সংসদে বিলটি উত্থাপন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। পরে বিলটি অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন দিনের মধ্যে সংসদে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে জাতীয় পার্টির সদস্য ফখরুল ইমাম বিলটির ওপর আপত্তি জানান। ফখরুল ইমাম বলেন, পুলিশের সমান্তরাল ক্ষমতা আনসার বাহিনীকে দেওয়া হলে দুটি বাহিনীর মুখোমুখি অবস্থান হয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, কথায় আছে ‘বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড়’। এখানে বাঁশের চেয়ে কঞ্চি শক্ত হয়ে গেছে। পুলিশের কাজটা যদি বিভক্ত এবং সমান্তরাল করা হয় তাহলে কাজটা করা যাবে না। দেশে সেনা, নৌ, বিমানবাহিনীর আলাদা আলাদা কাজ আছে। এলিট বাহিনীও করা হয়েছে। বিলটি প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।
জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পুলিশের সমান্তরাল বাহিনী হিসাবে আনসারকে তৈরির পরিকল্পনা সরকারের নেই। সেনাবাহিনীকে সহযোগিতার জন্য পাহাড়ে আনসার রয়েছে। সামনে নির্বাচন। এতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করতে হলে পুলিশের পাশাপাশি আনসার সদস্যদেরও মোতায়েন করতে হবে।
তিনি বলেন, পুলিশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বাহিনী তৈরির ইচ্ছে নেই। আনসার বাহিনী অনেক কাজ করছে, তাদের একটা আইনের মাধ্যমে পরিচালনার জন্যই আইন করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত বিলে কোনো সাংঘর্ষিক বিধান থাকলে তা সংসদীয় কমিটিতে সংশোধন হবে বলে জানান মন্ত্রী। পরে কণ্ঠ ভোটে ফখরুল ইমামের দাবি নাকচ হয়ে যায়।
সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, চলতি অধিবেশনেই বিলটি পাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একাদশ সংসদের সর্বশেষ চলমান অধিবেশন আগামী ২ নভেম্বর শেষ হয়ে যাচ্ছে। এর আগে চলতি বছরের ৪ সেপ্টেম্বর বিলটি মন্ত্রীসভায় অনুমোদন দেওয়া হয়।
প্রস্তাবিত বিলের ৮ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যাটালিয়ন সদস্যের সামনে সংঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমোদনক্রমে অপরাধীকে আটক করে অবিলম্বে পুলিশের কাছে সোপর্দ করবে এবং ক্ষেত্রমতো দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশক্রমে আটক ব্যক্তির দেহ তল্লাশি, কোনো স্থানে প্রবেশ ও তল্লাশি এবং মালামাল জব্দ করতে পারবে।
বিলের ২১ ধারায় ‘বিদ্রোহ সংগঠন বা বিদ্রোহ সংগঠনের প্ররোচনায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড রাখা হয়েছে। বিলে অপরাধ বিচারের জন্য সংক্ষিপ্ত আনসার আদালত এবং বিশেষ আনসার আদালত নামে দুটি আদালত গঠনের কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও সরকারি বা ব্যাটালিয়ন সদস্যের সম্পত্তি চুরি করা, যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে প্যারেডে অনুপস্থিত থাকা, কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা, দায়িত্ব পালনে অনীহা প্রদর্শন অপরাধ হিসেবে গণ্য করে চাকরি থেকে বরখাস্ত, বাধ্যতামূলক অপসারণের শাস্তির কথা বলা হয়েছে।