আন্দোলনে বিজয়ী না হতে পারলে দেশ ৫০ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনে পড়বে: মির্জা ফখরুল
শনিবার সকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে হিন্দু বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের প্রতিনিধি সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: আন্দোলনে বিজয়ী না হতে পারলে ‘দেশ ৫০ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনে পড়বে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার সকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে হিন্দু বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের প্রতিনিধি সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে আমাদের সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে… যে আমাদের গণতন্ত্র ফিরে পাবার যে লড়াই, ভোটের অধিকার ফিরে পাবার যে লড়াই, ভোট যখন দিতে পারি না তখন কি আমি একাই পারি না আপনারাও পারেন না…কেউ পারেন না। কারণ ভোটের পরিবেশ নাই। তরুনদের কাছে আমার অনুরোধ যে, আপনাদেরকে ছড়িয়ে পড়তে হবে আপনাদের কমিউনিটিসহ সকল মানুষের মধ্যে ..তাদেরকে বুঝাতে হবে যে এই গণতন্ত্র লড়াইয়ে আমাদের জয়ী হতে হবে। এর কোনো বিকল্প নাই। এবার যদি না পারেন ..তাহলে বাংলাদেশ অন্তত: ৫০ বছরের জন্য একটা কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রের মধ্যে পড়বে। কারণ কারো জীবনের কোনো নিশ্চিয়তা থাকবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে আপনারা দেখছেন কিভাবে এই সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূল করার জন্য তারা কাজ করছে। আমাদের যে ন্যুনতম অধিকার সেই অধিকারগুলো তারা কেড়ে নিচ্ছে। দেখুন বড় দূঃখজনক ব্যাপার যেটা দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখনো গৃহবন্দি হয়ে আছেন। গত পরশুদিন অত্যন্ত অবস্থায় হাসপাতালে গেছেন। এই প্রথম দেখলাম যে ডাক্তাররা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন.. তারা বলছেন যে, আমাদের চিকিতসার যে ব্যবস্থা আমরা কি করতে পারবো জানি না। তাদের একটা মিথ্যা মামলা দিয়ে যেটার কোনো ভিত্তি নাই।
বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তার স্ত্রী জোবায়দা রহমানসহ বিরোধী দলের নেতাদের সাজার দেয়ার বিষয়টিও তুলে ধরেন তিনি। মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে এদেশে কেউ নিরাপদ বোধ করে না। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান কেউ না। অন্যদিকে সাধারণ মানুষ নিরাপদ বোধ করে না। কখন কাকে মিথ্যা মামলা জড়িয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে কি বিপদে ফেলবে, গুম হয়ে যাচ্ছে, ৬‘শ অধিক গুম হয়ে গেছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে আপনাদের কমিউনিটির বহু লোককে আসামী করেছে। এই সব করে দাবিয়ে রাখা যাবে। যাবে না।
বিএনপি সমর্থিত বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের এই প্রতিনিধি সম্মেলন হয়। সারাদেশ থেকে শতাধিক প্রতিনিধি এতে অংশ নেন। এতে লন্ডন থেকে স্কাইপে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বক্তব্য রাখেন।
‘বিএনপি হিন্দু বিরোধী একথা মানুষ বিশ্বাস করে না’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এরা(আওয়ামী লীগ সরকার) একটা মার্কেটিং করে। মার্কেটিংটা হচ্ছে যে, প্রতিবেশী দেশ ভারত সেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি। তাদের কাজে একটা অপপ্রচার চালায় যে, বাংলাদেশে বিএনপি হচ্ছে হিন্দু বিরোধী দল সংগঠন। এটা কি আপনারা(উপস্থিতিদের উদ্দেশ্যে) বিশ্বাস করেন? আপনারা দেখেছেন কখনো? এই সময়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা-কর্মীরা সমস্বরে ‘না’ সূচক জবাব দেয়।
তিনি বলেন, ‘‘ আমরা জোর গলায় বলতে পারি যে, বিএনপি যখন ক্ষমতায় থাকে তখন তারা নিরাপদ থাকে। এখানে(বিএনপি) আমাদের সকল সম্প্রদায়ের অধিকারকে রক্ষা করবার কমিটমেন্ট আছে। আর গণতন্ত্র যদি থাকে সেটা তো থাকবেই। গণতন্ত্র না থাকলে সেটা থাকবে না। একমাত্র সুরক্ষা হচ্ছে গণতন্ত্র। সেই গণতন্ত্রকে রক্ষা করবার জন্য, দেশ মাত্রিকাকে রক্ষা করবার জন্য আমাদের এক হবে। এই যুদ্ধ তারেক রহমানের যুদ্ধ না, এই যুদ্ধ মির্জা ফখরুলের অথবা বিজন কান্তি সরকারের যুদ্ধ না, এই যুদ্ধ সকল মানুষের। আমার অধিকার চলে যাচ্ছে, আমার ভোটাধিকার পাচ্ছি না। ১৯৯১ সালে বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামালে ভারতের রাম মন্দির-বাবরী মসজিদের ঘটনার সময়ে বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের নিরাপত্তা বিধানে নেয়া পদক্ষেপের বিষয়টি তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।
হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি, দোকান-পাট, ব্যবসা-বানিজ্য স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের লোকজনই দখল করা এবং বর্তমান সরকারের আমলে বিভিন্ন স্থানে মন্দিরে হামলা, প্রতিমা ভাংচুর, রামুতে বৌদ্ধ বিহারে অগ্নিসংযোগ-হামলার ঘটনার সাথে আওয়ামী লীগের লোকজন জড়িত থাকার অভিযোগও করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ উদ্দেশ্যে একটাই তাদের সম্পত্তিগুলো দখল করা, তাদেরকে বিতাড়িত করা এবং রাজণৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর দোষ চাপিয়ে দিয়ে তাদেরকে হেয়প্রতিপন্ন করা। এটা এখন লোকে বুঝে, এটা আর মানুষ বিশ্বাস করে না, গ্রহন করে না। অনেকটা রাখাল বালকের মতো হয়ে গেছে।”
সংগঠনের চেয়ারম্যান বিজন কান্তি সরকারের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এসএন তপন দে‘র সঞ্চালনায় এতে ফ্রন্টের উপদেষ্টা অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, আ্যালবার্ট পি কস্টা, অর্পনা রায় দাস, সুশীল বড়ুয়া, জনগোমেজ প্রমূখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।