আইপিএলেই সর্বনাশ ভারতের!
প্রথম নিউজ, স্পোর্টস ডেস্ক: আরও একবার তীরে এসে তরী ডুবল ভারতের। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের টানা দুই সংস্করণে শিরোপার খুব কাছে গিয়েও তা আর ছোঁয়া হলো না বিরাট-রোহিতদের। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফাইনালের পঞ্চম দিনে গতকাল (রোববার) ৭ উইকেট হাতে নিয়ে দিন শুরু করা ভারতের ইনিংস টিকেছে কেবল দুই ঘন্টা! প্রথমবার টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলতে নেমে ২০৯ রানে বড় জয় পেয়েছে অজি বাহিনী।
অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার দেওয়া ৪৪৪ রানের রানের পাহাড় টপকাতে হলে ভারতকে বিশ্বরেকর্ডই গড়তে হতো। চতুর্থ দিনের শেষ সেশনে এই পাহাড়ি পথ ধরেই হাঁটছিল রোহিত শর্মার দল! বিশেষ করে বিরাট কোহলি-আজিঙ্কা রাহানে জুটিতে ভারতের আশার পালে হাওয়া লেগেছিল। তবে দিন শেষে রাতের বিরতিতেই যেন ভারতের ঘরে লুট-পাট! পঞ্চম দিনে নতুন করে শুরু করার সুযোগ পেয়েও ব্যর্থ এই দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার। তাতে পথ হারিয়েছে দলও।
২০১৩ সালে সর্বশেষ আইসিসি প্রতিযোগিতা জিতেছিল ভারত। ইংল্যান্ডের মাটিতে স্বাগতিকদের হারিয়েই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছিলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। এরপর থেকে গেল ১০ বছরে কোনো শিরোপা জিততে পারেনি দক্ষিণ এশিয়ার দলটি। নেতৃত্বের ব্যাটন ধোনির হাত থেকে বিরাট কোহলি হয়ে রোহিত শর্মার হাতে গেছে। কিন্তু ফল বদলায়নি। বারবার আইসিসি প্রতিযোগিতার সেমিফাইনাল বা ফাইনালে গিয়ে স্বপ্নভঙ্গ হচ্ছে। গত ১০ বছরে ৮ বার কোনো আইসিসি প্রতিযোগিতার সেমিফাইনাল বা ফাইনালে উঠেছে ভারত। ৮ বারই হেরেছে তারা।
কাঠগড়ায় আইপিএল!
আইপিএল শেষ হওয়ার পর ১০ দিনের মাথায় শুরু হয় বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল। ফলে ভারতের হাতে প্রস্তুতি নেওয়ার সময় ছিল খুবই কম। রোববার হারের পর রোহিত এবং দ্রাবিড়ের কথায় উঠে এসেছে সেই প্রস্তুতির অভাব। দু’জনেই পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, আরও বেশি প্রস্তুতির সময় পাওয়া গেলে ভালো হতো। ভারতীয় অধিনায়ক বলেন, ‘এ রকম গুরুত্বপূর্ণ একটা ম্যাচের আগে দুটো দলেরই সমান সুবিধা পাওয়া উচিত। আগের বার যখন ইংল্যান্ডে এসেছিলাম তখন প্রস্তুতি নেওয়ার জন্যে হাতে ২৫-৩০ দিন ছিল। আপনারা ফলাফল দেখতে পেয়েছিলেন। করোনার কারণে শেষ ম্যাচ স্থগিত হয়ে যাওয়ার আগে পর্যন্ত আমরা ২-১ এগিয়ে ছিলাম। সত্যি করেই আমরা প্রস্তুতির জন্যে একটু বেশি সময় চেয়েছিলাম। যাতে বোলাররা যথেষ্ট বিশ্রাম পেতে পারে। এ ধরনের ম্যাচে ২৫-৩০ দিন সময় পাওয়া গেলে খুবই ভাল হতো।
টিম ইন্ডিয়া কোচ দ্রাবিড়ও প্রস্তুতির ঘাটতিকে দুষলেন। বলেন, ‘কোচ হিসেবে কখনোই এ ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে আমি খুশি হতে পারি না। কিন্তু এটাই বাস্তব। আমাদের মানতেই হবে। সূচি এতটাই কঠিন। দলের ক্রিকেটাররা জানে যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এভাবেই খেলতে হয়। যদি তিন সপ্তাহ এখানে থাকতাম এবং দুটো প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতাম, তাহলে আরও ভালো প্রস্তুত হতে পারতাম। কিন্তু পরিস্থিতি সে রকম ছিল না। তাই যেটা পেয়েছি সেটা নিয়েই খুশি। কোনো অজুহাত দিতে চাই না। অস্ট্রেলিয়াকে ধন্যবাদ। পাঁচ দিনই ওরা আমাদের থেকে ভাল খেলেছে।’
তিন ম্যাচের ফাইনাল চান রোহিত
ফাইনালের মঞ্চে বড় ব্যবধানে হারের পর বড় দাবি তুললেন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা। পরের বার থেকে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে তিনটি ম্যাচ করার দাবি টিম ইন্ডিয়া কাপ্তানের। রোহিত শর্মা বলেন, ‘গত দু'বছর ধরে অনেক পরিশ্রম করে আমরা ফাইনালে উঠেছিলাম। কিন্তু মাত্র একটা ম্যাচেই ফাইনালে খেতাবের ফয়সালা হয়ে গেল। আমি চাইব, ফাইনাল অন্তত তিন ম্যাচের হোক। পরের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপেই ফাইনাল তিন ম্যাচের করা হলে, সেটাই চ্যাম্পিয়ন নির্ধারণের ক্ষেত্রে একেবারে সঠিক হবে।’
সিরিজ জেতার থেকে চ্যাম্পিয়নশিপ জেতা অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ, সেটা স্বীকার করে নেন রোহিত শর্মা। প্রসঙ্গত, ২০১৭, ২০১৯, ২০২১ এবং ২০২৩ পরপর চারটি বর্ডার গাভাস্কার ট্রফিতে অস্ট্রেলিয়াকে ভারত হারালেও, চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে বাজিমাত করলেন কামিন্সরা। ওভালে ফাইনালে হার নিয়ে রোহিত সাফ বললেন, ‘প্রথম ইনিংসে আমরা মোটেও ভালো ব্যাট করিনি। সেটাই ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দিলো। আমরা টার্গেটে পৌঁছতে চেয়েছিলাম ঠিকই, তবে খারাপ শট খেলে আউট হয়েছি।’