অর্থনীতিবিদদের আজ্ঞাবহ হিসাবে দেখতে চান রাজনীতিবিদেরা
বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় আগামীর করণীয়’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেছেন, রাজনীতি ও অর্থনীতির মধ্যে সম্পর্ক অসম। রাজনীতিবিদেরা অর্থনীতিবিদদের গৃহভৃত্য না হলেও হুকুমের আজ্ঞাবহ হিসাবে দেখতে চান। বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় আগামীর করণীয়’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। এই বইয়ের লেখকও তিনি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য শামস্ রহমান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন।
ড. ফরাসউদ্দিন বলেন, বড় বড় খেলাপি সাত, আট, নয়বার করে ঋণ পুনঃতফশিল করতে পারছেন। ঋণখেলাপি ও মুদ্রা পাচারকারীরা একই সূত্রে গাঁথা। এসব সমস্যা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরতে পারলে তিনি সেগুলো দূর করার পদক্ষেপ নেবেন। অর্থনীতিবিদেরা জ্ঞানী; গণমাধ্যমে বা টেলিভিশনে তারা কথা বলেন। রাষ্ট্র পরিচালনাকারীদের উচিত, আমন্ত্রণ জানিয়ে তাদের কথা শোনা। তাহলে অনেক অর্থনৈতিক সংকট কাটানো যেত।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি বড় অর্থনীতিবিদ নই। তবু মনে করি, প্রচলিত পথে দারিদ্র্য বিমোচনের পরিবর্তে শিল্পায়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।’ এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের পদ সাংবিধানিক করতে হবে। নিদেনপক্ষে গভর্নর পদে ছয় বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া সমীচীন। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য পৃথক বেতনকাঠামো করা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে। কী করণীয়, কী বর্জনীয় এসব বলার জন্যই এই বই লেখা হয়েছে। ‘জিডিপির আকার যদি ৬০ বিলিয়ন ডলার থেকে ৪৬০ বিলিয়ন ডলার হয়ে থাকে, মাথাপিছু আয় যদি বেড়ে থাকে, তাহলে রাজস্ব আয় কেন বাড়বে না? আমার কাছে এটা বড় সমস্যা বলে মনে হয়।’
কর দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পেশাজীবীদের সবাই ঠিকমতো কর দেন। কৃষি খাত এখন বাণিজ্যভিত্তিক হচ্ছে। দুই বছরের নোটিশ দিয়ে তাদেরও করের আওতায় আনা যেতে পারে। এ ছাড়া সমীক্ষা করা ছাড়া সরকারি কোনো খাতে বিনিয়োগ করা উচিত নয়।
অনুষ্ঠানে স্বাধীনতার এত বছর পরও আমরা দেশ শাসনের টেকসই বন্দোবস্ত ঠিক করতে পারিনি বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, এখন আমাদেরকে দেশের সরকার কোন ধরনের তা প্রশ্ন করা হয়। হাইব্রিড রিজিম বলা হচ্ছে। মানে গণতান্ত্রিক কাঠামোতে একজনের প্রাধান্যের সরকার।
তিনি বলেন, ভিয়েতনাম ও চীনের মতো দেশগুলোতেও সরকারগুলো উন্নয়ন চায়। কারণ জনগণের দৃষ্টিতে বৈধতা পাওয়া নির্ভর করে অর্থনৈতিক উন্নতির ওপরে। দক্ষিণ কোরিয়া এবং মালয়েশিয়ার মতো দেশেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়। তাই উচ্চপদে নিয়োগের ক্ষেত্রে শুধু রাজনৈতিক আনুগত্য দেখা হলে মেধা বঞ্চিত হয়।